1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৩:০০ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

রত্ন গর্ভা রমনী-আদর্শ গৃহিনী-ভ্রাতৃবধু-ভগিনি লতিফা আরজু চৌধুরী-হালকি-র চলে যাওয়া-স্মৃতিচারন-স্মরন-মাগফিরাত

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৩০ মে, ২০২১
  • ৩০৬ বার পঠিত

মুজিবুর রহমান মুজিব

জন্ম ও মৃত্যোর মধ্যবর্ত্তী-অন্তবর্তী কালীন সময়ের নাম জীবন। মানুষের জীবন ক্ষনস্থায়ী-অনির্ধারিত। চলে যাওয়ার জন্যই মায়াময় এই মাটির পৃথিবীতে সৃষ্টির শ্রেষ্ট জীব মানুষের শুভাগমন। মৃত্যো অবধারিত-চীরন্তন ও শাস্বত সত্য হলেও অসময়ের আকস্মিক মৃত্যো মূর্দার স্বজন গন কখনও সহজ ও স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারেন না-আকুল কান্নায় ব্যাকুল হন। হায়হুতাশ-আর্তনাদ- আহাজারি করেন। ঠিক তেমনি পঞ্চাশের কোঠা পেরুতে না পেরুতেই হঠাৎ করে চলে গেল প্রিয় ভ্রাতৃবধু-¯েœহ ময়ী ভগিনি, সহোদর এম.এ.গনির সহ ধর্মিনী আদর্শ গৃহিনী লতিফা আরজু চৌধুরী হালকি। সিলেট শহরে নিজেদের বাড়ি তিন সুশিক্ষিত সু-সন্তানের সার্থক জননী লতিফা চৌধুরী আমার কনিষ্ট ভ্রাতৃবধু ছাড়াও পিতৃকুলের দিক দিয়ে একটি শিক্ষিত-সম্ভান্ত-স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান। পিতা আব্দুল রাজ্জাক চৌধুরী খাদ্য বিভাগের পদস্থ কর্ম্মকর্তা ছিলেন। ঐতিহ্যবাহী কুলাউড়ার আদি বাসিন্দা জনাব চৌধুরী সরকারি চাকরি জীবন শেষে সিলেট জেলা সদর-শহরে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন। হালকি সিলেট শহরে বেড়ে উঠেন-লেখাপড়া করেন। বিয়ের পর স্বামীর সংসারে-জন্ম ও পিতৃভূমি সিলেট শহরেই বসবাস করতে থাকেন। এক পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানের সুখী জননী লতিফা মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারের গৃহবধু হিসাবে সুখে শান্তিতে বসবাস করছিলেন। সু-শিক্ষিত স্বামী প্রাক্তন প্রবাসী সিলেটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এম.এ.গনি একজন সমাজ সেবি ও সমাজ সংঘটক হিসাবে আন্তর্জাতিক সেবা সংঘটন রোটারি ক্লাব অব সিলেট এবং সিলেটস্থ মৌলভীবাজার জেলা সমিতির সভাপতি ছিলেন। তিন সন্তান মেধাবি-ডিগ্রীধারী-বিবাহিত। কর্ম জীবনে প্রতিষ্ঠিত। একমাত্র পুত্র সন্তান আদিব জালালাবাদ কেন্টনমেন্ট কেডেট কলেজ এর মেধাবী ছাত্র ছিল-ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং এ উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে বর্ত্তমানে কর্ম জীবনে। ইতিপূর্বে হালকি হৃদরুগে আক্রান্ত হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকাস্থ ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হল। আমার অসুস্থতা ও দূর্বলতার মাঝেও ঢাকায় দেখতে গেলাম।
সফল বাইপাশ সার্জারি হয়ে-ভালোই আছে। আল্লাহ বড়ই মেহেরবান-দয়ার সাগর-খুব কম সময় এর মাঝে ভালো ঘরে হালকির তিন সন্তানের বিয়ে হল-সিলেট সদরেই। সপরিবারে সিলেট গেলাম-আত্মীয় স্বজন সহ মহাধুম ধাম করলাম। আমার দুই নাতি মুমতাহিন তাওসিফ নাহিয়ান এবং মোঃ মাহতির রহমান সিলেটি দাদার বাসায় হৈ হোল্লোড় করল আমার ভাই ও তাদেরকে খুব-ভালোবাসে। আদর যতœ করে। গিফট দেয়। সে এখনও নাতি-নাতিন পায়নি বলে আমার এই দুই নাতিকে আমার ভাই ও ভ্রাতৃবধু হালকি খুবই ¯েœহ মমতা করে। পঁচাত্তোরে পিতা এবং চৌদ্দ সালে মাতাকে হারিয়ে চার ভাই এখনও এক ছাদের ছায়ায় আছি। এর মধ্যে হালকির শরীর খারাপ হলে সিলেট থেকে ঢাকায় স্থানান্তরিত হলে-আমার ভাইই নিয়ে গেল। আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে পরামর্শ করে ল্যেব এইড হাসপাতালে ভর্ত্তি করা হল, সেটা গেল বছর মে মাসের শেষ ভাগের কথা। বিশ সালের ত্রিশ তারিখ সকালে আমার দামান্দ মুহিবুর রহমান রুমী জানালো, হালকি ঢাকায় ল্যাব এইডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তিকাল করেছে। আমি বেদনা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে উচ্চারন করলাম ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাই রাজিউন। গেল বছর এমন দিনে সিলেট ও ঢাকায় করনার প্রকুপ চলছে। ঢাকায় লকডাউন চলছে। সতর্কতা নিরাপত্তা ও স্ব্যাস্থবিধি মেনে চলার কারনে অনেকেই সেলফ কোয়ারেন্টাইন-আইসলেশনে। এ সময় স্বাভাবিক মৃত্যো হলেও করনায় মৃত্যো মনে করে জানাজার নামাজে লোক সমাবেশ হয় না, আমি বৎসরাধিক কাল যাবত ঢাকা- সিলেট যাইনি-এমন কি ডাক্তারি চেক আপেও নয়। অপেক্ষা কৃত বয়স্ক-বয়োঃবৃদ্ধ -বিভিন্ন দুরারুগ্য জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত বিধায় স্বেচ্ছা গৃহ বন্দি আছি। বাসার চেম্বার বন্ধ করে টিভি বই পুস্তক সহ আমাকে দোতালায় স্থানান্তরিত হতে হয়েছে। সিলেটে হালকির জানাজায় না যেতে অনেকে বল্লেও আমি কোনকান দেই নি, আমার দামান্দকে সিলেটও ঢাকায় যোগাযোগের কথা বলে আমি তাৎক্ষনিক ভাবেই সিলেট রওয়ানা হয়ে গেলাম।

সুবিদ বাজার এলাকায় লন্ডনি রোডে মরহুম আব্দুর রাজ্জাক চৌধুরীর বিশাল বাসা বাড়িতে সুন-সান নীরবতা। এই বাসা বাড়ি সংলগ্নই এম.এ. গনি লতিফা আরজুর সুখের সংসার, শান্তির নীড়। এই বাড়িতেই বিয়ে হয়েছিল হালকির। এই বাসা থেকে বিয়ের লাল বেনারশি শাড়ি পরে শ্বশুড় বাড়ি-গিয়ে ছিল হালকি-আজ এই বাড়িতে তার লাশ আসছে ঢাকা থেকে কফিন বন্ধি হয়ে। এই বাসা থেকে আজই শেষ বিদায় হবে সাদা কাফনে। বাসায় প্রবেশ করেই আত্মীয়-স্বজনের সাথে বসা পেলাম-কর্ম্ম তৎপর ও কর্ম্ম চঞ্চল সিটি মেয়র হালকির নিকটাত্মীয় আরিফুল হক চৌধুরীকে। তিনি হালকির ছোট ভাই হন। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও হালকিকে প্রিয় হালকি আপা বলতে অজ্ঞান। হালকির দাফন-কাফনের ব্যাপারে আমাকে-আমাদেরকে আর বিন্দুমাত্র চিন্তা ভাবনা করতে হল না কথার মানুষ-কাজের মানুষ-মনের মানুষ মহৎ মানুষ আরিফুল হক চৌধুরী সকল প্রস্তুতিই নিয়ে রেখেছেন। সিলেটের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ-একাধিক মেয়াদের সিসিক মেয়র হিসাবে সিলেটে তাঁর একটি অবস্থান গ্রহণ যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা রয়েছে। করনার এই বিধি নিষেধের মাঝেও তিনি বাদ এশা দরগা শরীফ জামে মসজিদে জানাজার নামাজ এবং অতঃপর দরগা শরীফ গোরস্থানেই তাঁর প্রিয় হালকি আপার চীর শয়ানের ঠিকানা গোরস্থানের ব্যবস্থা-করে রেখেছেন। এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গেঁ মত বিনিময় করলাম। আমি ও আমার পরিবার বর্গের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানালাম। লাশ বাহী গাড়ি নিয়ে আমার ভাই বিকেলের দিকে বাসায় এলো। এমন দৃশ্যের বর্ণনা দেয়া কষ্টকর-হৃদয় বিদারক। এমন আবেগঘন-শোকাবহ দৃশ্য শুধু হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায়, অশ্রæ বিসর্জন করা যায় বর্ণনা করা যায় না, বলা যায় না।
বাদ মাগরিব আমরা বোন হালকির লাশ নিয়ে শাহ জালাল সাহেবের দরগা মসজিদ মুখী হলাম। মসজিদ তালাবদ্ধ। মাজার শরীফ এর বাহিরে ফকির এর ভিড় নয় কোন ফকিরই নেই। দাফন-কাফন শেষে উপস্থিত দরিদ্রদের মধ্যে চাল জল খাবার বিতরন করার রেওয়াজ আছে। আমি দুই বস্তা চাল নিয়ে গিয়েছিলাম বিতরনের জন্য-কিন্তু কোন ভিক্ষুকই নেই, এ ব্যাপারে সিলেটের বে আই প্রফেসর আব্দুল মতলুব সাহেব এর পরামর্শ নিলাম, মেয়র সাহেবের সঙ্গেঁ আলোচনা ক্রমে আরো কারো কাছে সমজিয়ে দিলাম। এশার আজান পড়লে মসজিদের তালা খোলা হল, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এশার নামাজ অতঃপর জানাজার নামাজ হল। জানাজা শেষে আমি আমার ভাই, সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও কয়েক জন নিকটাত্মীয় উপস্থিত থেকে কবরে মাটি দেয়া শেষে পহেলা জিয়ারত করে ভ্রাতৃবধু লতিফা আরজু চৌধুরী হালকিকে আল্লাহর হাওলা করে চীর বিদায় জানিয়ে চলে এলাম। আকস্মিক পতিœ বিয়োগে ভাইর বিষন্ন মুখ, আদিব, ফাহি, তাসফিয়া তিনটি সদ্য মাতৃহারা মানব শিশুর বোবাকান্না আমাকে ব্যথিত করে-আমি নিজও হৃদরূগী। আল্লাহ-হালকির বেহেশত নসীব করুন তার স্বামী সন্তানগণকে শোক সইবার শক্তি দিন-এই মোনাজাত করি।
ত্রিশে মে-স্বামী-সন্তান-সংসার অন্তপ্রাণ-রতœ গর্ভা রমনী-ফরেজগার-ঈমানদার মহিলা ধর্ম ও সমাজ সেবি লতিফা আরজু চৌধুরী হালকির প্রথম মৃত্যো বার্ষিকী। এই এক বছরে হালকির কবরের মাটি পুরাতন হয়েগেছে। কিন্তু তার সদাচরন, সৌজন্যবোধ, মায়ামমতা, শিষ্টাচার আমাদের স্মৃতিতে এখনও অ¤øান। অমলিন। মাহান মালিক তাঁর বেহেশত নসীব করুন-এই মোনাজাত সহ আমীন, ছুম্মা আমীন।

[মরহুমার ভাসুর। সিনিওর এডভোকেট হাইকোর্ট। সেক্রেটারি মৌলভীবাজার জেলা জামে মসজিদ। সাংবাদিক। কলামিষ্ট। ]

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..