1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫৬ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

ষাটের দশকের খ্যাতিমান ছাত্র নেতা সকল প্রগতিশীল গনতান্ত্রীক আন্দোলনের আজীবন লড়াকু সৈনিক এম,এ, রহিমের মৃত্যো। স্মৃতি কথা: কিছু কথা: রুহের মাগফিরাত

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৩
  • ৬১৪ বার পঠিত

: মুজিবুর রহমান মুজিব:
চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলের সমাজও রাজনৈতিক অঙ্গঁনের প্রিয়ও পরিচিতি মুখ, একাত্তোরের অকুতভয় বীর, নির্ভীক মুজিব সৈনিক জননেতা এম,এ রহিম উনিশে এপ্রিল বুধবার রাত প্রায় পৌনে বারোটায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতঃ চীর তরে চলেযান না ফেরার দেশে। এই মর্মে গত ২১ শে এপ্রিল দৈনিক মানব জমিনে পত্রিকাটির শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধির বরাত দিয়ে একটি সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়। সত্তোরের কোঠায় এসে জন স্বার্থে আন্দোলনে সংগ্রামের এই আপোষ হীন লড়াকু সৈনিক সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন ব্যাধিতে ভূগছিলেন। একজন প্রকৃত মুক্তি যোদ্ধা হয়েও দলীয় বিভাজন বিভক্তির কারনে মুক্তি যুদ্ধের সনদ না পেয়ে মনোঃকষ্টে ছিলেন তিনি।

 

সম্প্রতি তাঁর অসুস্থতার একটি সচিত সংবাদ দৈনিক মানব জমিনে প্রকাশিত হয়েছিল। আওয়ামীলীগ নেতা এম,এ রহিম অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী থেকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃত এবং সার্টিফিকেট প্রাপ্তির আশাপোশন করছিলেন। আমি নিজে বার্ধক্য জনিত বহুবিধ ব্যাধি অসুস্থতাও দূর্বলতা জনিত কারনে এখন শাহ আব্দুল করিমের ভাষায় গাড়ী চলেনা, চলে না রে অবস্থা ফলতঃ শয্যাশায়ী। তবুও অসুস্থ রাজনীতিবিদ মুক্তিযোদ্ধা এম,এ রহিম এবং মানব জমিনের শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধির মানবিক প্রতিবেদনের পক্ষে কিছু লেখার মানষিক প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। লেখা আর হল না, তার মৃত্যো সংবাদ টি আমাকে পত্রিকার পাতায় দেখতে হল। তাঁর জানাজার সংবাদটি আমাকে কেউ জানায় নি, হয়ত জানাবার প্রয়োজন মনে করেন নি। কেন্দ্র থেকে মফস্বল পর্যন্ত আমাদের সাধারন মুক্তিযোদ্ধারা বড়ই অসহায়, নির্ব্বাচিত কমিটি না থাকায় নেতাহীন অনেকটা এতিমের মত। বাংলাদেশের মুক্তি যোদ্ধা সমাজের সার্বজনীন প্রতিষ্টান বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আমাদের নির্ব্বাচিত কমান্ড কাউন্সিল কার্য্যালয় সাংঘটনিক কার্য্যক্রম ছিল। দীর্ঘদিন যাবত নির্ব্বাচিত কমান্ড কাউন্সিল না থাকায় জেলা প্রশাসক এবং ইউ,এন,অ, সাহেবানগন পদাধিকার বলে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে জেলা ও উপজেলা কমান্ডার এর দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি মুক্তি যোদ্ধা সংসদ এর নির্ব্বাচন এর ব্যাপারে প্রাথমিক প্রস্তুতি গ্রহন, কাগজপত্র বিতরন এবং মুক্তি যোদ্ধাদের মধ্যে আনন্দ উচ্ছাস দেখা গেলেও অনিবার্য্য কারনে নির্ব্বাচনী প্রক্রিয়া স্থগিত ঘোষনা করা হয়েছে। মুক্তি যোদ্দা সমাজের নির্ব্বাচিত প্রতিনিধি নেতা থাকলে জীবন মরনের কাজ গুলি তারাই দেখভাল করতেন।

 

এটা প্রশাসনের চীর স্থায়ী কাজ নয়। মুক্তিযোদ্ধা এম,এ রহিমের মুক্তি যোদ্ধা সার্টিফিকেট না পাওয়া প্রসঙ্গেঁ দৈনিক মানবজমিনের শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি প্রদত্ত “শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান এম,এ, রহিম আর নেই” শিরোনামের সংবাদে শেষাংসে বলেছেন- “১৯৭১ সালে মুজিব বাহিনীর সদস্য হিসাবে ভারতে ট্রেনিং নিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান সংকীর্নমনা রাজনীতির কারনে তার মুক্তিযোদ্ধা তালিকার আবেদন শ্রীমঙ্গল থানা সংক্রান্ত তথ্য মেনেনি বলে দ্বিধাবিভক্ত অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছিল। সে কারনে অনেক দৌড় ঝাপ করেও মৃত্যোর আগে আর বীর মুক্তিযোদ্ধা তালিকার গেজেটে তার নাম দেখেযেতে পারনে নি”। একজন প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়েও দলীয় আভ্যন্তরীন কলহ কোন্দল বিভক্তি ও বিভাজনের কারনে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে শেষ সম্মান টুকু পেলেন না আজীবন আওয়ামী লীগার আজীবন লড়াকু মুজিব সৈনিক এম,এ রহিম। সনদ পত্র প্রাপ্ত বীর মুক্তিযেদ্ধাগনকে মৃত্যোর পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় সম্মান গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। খবর নিয়ে জানা গেছে মুক্তি যোদ্ধা এম,এ, রহিমের মৃত্যোর পর তাঁর অনুসারিগন তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদানের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে দাবী জানালে তার স্বদলীয় বিরোধী গ্রæপ নাকি তাতে আপত্তি জানিয়েছেন, যা নিতান্তই দূঃখও বেদনা দায়ক। বুর্জায়া কিংবা পেটি বর্জোয়া সমাজ ব্যবস্থায় মাল্টিক্লাশপলিটি ক্যাল পার্টি সমূহের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা কলহ কোন্দল বিভক্তি বিভাজন থাকলেও তার নোংরা বহিপ্রকাশ সৌজন্য মূলক শোভনীয় নয়। শ্রেনী বিভক্ত সমাজ ব্যবস্থায় মত প্রার্থক্য থাকলেও মনমালিন্য সংঘাত সংঘর্ষ থাকা উচিত নয় তার একটি পরিশীলিত রুপ থাকা উচিত। মুক্তিযোদ্ধা এম,এ রহিমের মৃত্যোতে গভীর শোক প্রকাশ করত তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।

 

তাঁর উজ্জল স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য কিঞ্চিত স্মৃতি চারন করছি। সদ্য প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এম,এ রহিমের সঙ্গেঁ আমার পরিচয়, সম্পর্ক ও সখ্যতা সেই ষাটের দশক থেকে ছাত্র রাজনৈতিক কারনে। সেই সময় বাঙ্গাঁলী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের জোয়ার তুঙ্গেঁ। বাঙ্গাঁলী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের আপোষহীন জনক বঙ্গঁবন্ধু শেক মুজিবুর রহমান এর এককও আপোষহীন নেতৃত্ব সমগ্র দেশ ও জাতি ঐক্যবদ্ধ। আমি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ এর একজন কর্মি ও সংঘটক হিসাবে ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করি। এ ব্যপারে কেন্দ্রে আমাকে অনুপ্রানিত করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদক তাত্বিক সিরাজুল আলম খান এবং শক্তিমান সংঘটক ও সুবক্তা আশম রব। সিলেটে আমাদের নেতা ছিলেন ডা. দেওয়ান নুরুল হোসেন চঞ্চল এবং আখতার আহমদ। আমার দীর্ঘ দেহ, দূঃসাহস, বাবরি চুল, আকর্ষনীয় গোঁফ, জ্বালাময়ী ভাষন এবং উচ্চ কন্ঠে শ্লোগানের কারনে কেন্দ্রীয় নেতাদের সুনযরে আসি। দায়িত্ব পাই। প্রথমে মৌলভীবাজার কলেজ শাখা ছাত্রলীগ অতঃপর মহকুমা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্ব্বাচিত হই। তখন ছয়টি থানা নিয়ে মৌলভীবাজার মহকুমা গঠিত ছিল। আমি ও আমরা মহকুমা শাখা ছাত্রলীগ এর পক্ষ থেকে থানা শাখা সমূহে সফর করতাম, সাংঘটনিক কার্য্য পরিচালনা করতে সহযোগীতা করতাম। মহকুমার মধ্যে চা বাগান অধ্যুসিত শ্রীমঙ্গল থানা একটি ঐতিহ্য মন্ডিত প্রাচীন জনপদ। শিল্প ও বানিজ্যের অপরূপ সমাহার এই থানা শহরে।

 

শিক্ষা দীক্ষাও রাজনীতি সচেতন এলাকা শ্রীমঙ্গলে বাম রাজনীতির প্রভাব ছিল অত্যাধিক। এখানে ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের সংঘটনও সাংঘটনিক কার্য্যক্রম ছিল। মহকুমা সদর এবং কোন থানায়ই আওয়ামীলীগের কমিটি, সাংঘটনিক কার্য্যক্রম ছিল না , যদি ও নেতা হিসাবে বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জনপ্রিয়তা ও গ্রহনযোগ্যতা ছিল। শ্রীমঙ্গলে আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের মধ্যে আমার দেখা জানা ও স্মরন মতে মোহাম্মদ ইলিয়াস, আলতাফুর রহমান চৌধুরী, ডা. আব্দুল আলী এবং বাবু এস,কে, রায় এর কথা এখন ও মনে পড়ে। মহকুমা সদর থেকে শ্রীমঙ্গল মাত্র মাইল তেরো দুরে হলেও তখন এখনকার মত যানবাহনের আধিক্য ছিল না, লাইনের বাসই ভরসা, ভাড়া অবশ্য খুব বেশি ছিল না। আমার কমিটির সম্পাদক ছিলেন আ,খ, সুজাউল করিম। আমার বয়োঃকনিষ্ট করিম একজন সঙ্গীঁত শিল্পীও ছিলেন। বাম প্রগতি শীল রাজনীতির ঘাটি শ্রীমঙ্গলে আমি ও আমরা হানা দেই- থানা ছাত্রলীগের পূর্নাঙ্গঁ কমিটি গঠনে আত্বনিয়োগ করি। প্রথম যিনি আমার দৃষ্টি আকর্ষন করেন তিনি শ্রীমঙ্গঁলের ছাত্র নেতা এম,এ রহিম। হালকা পাতলা গঠন, মাঝারি উচ্চতা আর শ্যামলা নয় কালিয়ানা কিছিমের এম,এ রহিমের মায়াবি মুখে একচিলতে মুচকি মিষ্টি হাসি লেগে থাকত সব সময়। কালো চেহারায় একটা কমনীয়তা ছিল- লাবন্য ছিল। সাংগঠনিক দক্ষতা,সদাচরন ও সৌজন্য বোধ এবং বিনয় এর কারনে এম,এ রহিম আমার দৃষ্টি আকর্ষন করেন। স্থানীয় হিসাবে তাদের একটি পারিবারিক পরিচিতি ছিল ও আছে। শ্রীমঙ্গল শহরের প্রান কেন্দ্রে তাদের পারিবারিক কাপড়ের ব্যবসা ছিল, আমি শ্রীমঙ্গল গেলে তাদের দোকানেই বসতাম।

 

আমি মহকুমা ছাত্রলীগের সভাপতি থাকাকালে ১৯৬৮ সালে ছাত্র নেতা এম,এ, রহিম এর নেতৃত্বে তাকে সভাপতি নির্ব্বাচিত করে শ্রীমঙ্গঁল থানা ছাত্রলীগের পূনাঙ্গঁ কমিটি গঠন করা হয়। আমার এখনও মনে পড়ছে সে সময় আব্দুল মতলিব (বর্তমানে নিজ ইউ,পি চেয়ারম্যান), আব্দুল মন্নান, ফারুক প্রমুখ্য ছাত্রলীগ কর্মি ছিলেন। থানা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসাবে এম,এ, রহিম সেই যে আওয়ামী রাজনীতির দায়িত্ব ভার নিয়ে ছিলেন, আজীবন সে দায়িত্ব বহন করেছেন পালন করেছেন নিষ্ঠাও আন্তরিকতার সাথে। সত্তোর সালের সাধারন নির্ব্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থীর স্বপক্ষে জনমত সংগ্রহ নির্ব্বাচনী প্রচারাভিযানে আত্বনিয়োগ করেছেন আন্তরিকতার সাথে। সত্তোর সালের সাধারন নির্ব্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় জননেতা আলতাফুর রহমান চৌধুরীকে। শ্রীমঙ্গঁলে সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক সমাজ সেবক ও সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব ডা. আব্দুল আলী।

 

সাধারন্যে ডাক্তার আলী সাহেব হিসাবে সু-পরিচিত ডা. আব্দুল আলীর সমর্থনে স্ততঃস্ফুর্ত মিছিল বের হয় আলী ভাইকে নমিশেন চাই, ভূলি নাই ভূলি নাই, ডাক্তার আলী ভাই। শ্রীমঙ্গঁলের আওয়ামী রাজনীতিত্বে বিভক্তি ও উত্তপ্ত আকার ধারন করলে মৌলভীবাজারে খবর আসে। তখন মোবাইল ফোন ও এত টেলিফোন ছিল না। আমি তৎক্ষনিক ভাবে লাইনের বাসে শ্রীমঙ্গঁলে ছুটে যাই। এম,এ রহিমকে নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আলতাফ ভাইর সঙ্গেঁ সাক্ষাত করি। শ্রীমঙ্গঁলে বসবাসরত জননেতা মোহাম্মদ ইলিয়াস মৌলভীবাজার সদরে জাতীয় পরিষদ এম,এন,এ, তে মনোনয়ন পেয়েছেন। তাঁর সঙ্গেঁও পরামর্শ করে থানা ছাত্রলীগ এর উদ্যোগে শ্রীমঙ্গঁলে ডাক বাংলা মাঠে একটি ছাত্র জন সভার আয়োজন করা হয়। রাজনীতি সচেতন এলাকা শ্রীমঙ্গঁলে জনসভায় সাধারনত জনসমাগম হয়।

 

সেই ছাত্র জনসভায় ও প্রচুর জনসমাগম হয়ে ছিল- সেখানেও থানা ছাত্র লীগ এর ইতিবাচক ভূমিকা ছিল। সেই ছাত্র জনসভায় আমি মহকুমা ছাত্রলীগ এর সভাপতি হিসাবে দিক নির্দেশনা মূলক গুরুত্বপূর্ন ভাষন দেই, ঘোষনা করি- বঙ্গঁবন্ধু মনোনীত প্রার্থীই আমাদের প্রার্থী ছয়দফার প্রার্থী- এখানে আমাদের পছন্দ অপছন্দের কোন অবকাশ নেই, আগামী নির্ব্বাচনে বঙ্গঁবন্ধু মনোনীত প্রার্থীর স্বপক্ষে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। তখন বিদ্রোহী প্রথার প্রচলন ছিল না। ডা. আলী ভাই ও একজন বিনয়ী ও বন্ধুভ্রাতৃ বৎসল ভদ্রলোক ছিলেন, তাঁর ডন ফার্মেসীতে আমার যাতায়াত ছিল। তার সমর্থক গন বিদ্রোহী মিছিল পরিত্যাগ করে নৌকা মার্কার প্রার্থী আলতাফ ভাইর স্বপক্ষে শ্লোগান তুলেন। নির্ব্বাচনে বিপুল ভোটে উভয় পরিষদে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীগন জয়লাভ করেছিলেন।

 

আফসোস আলী ভাই আর আমাদের মধ্যে বেচে নেই- আল্লাহ তার বেহেশত নসীব করুন এই মোনাজাত করি। একাত্তোরের মহান মুক্তি যুদ্ধে ছাত্রলীগ নেতা এম,এ, রহিমের ভূমিকা সমুজ্জল আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের অংশ। এপ্রিলের প্রতমভাগে একজন জয় বাংলা পহ্ণী হিসাবে তিনি তার আরোও কতেক সহযোগী সহ গ্রেফতার হয়ে নির্যাতনের শিকার হন। গনদাবীর প্রেক্ষিতে মুক্তি লাভ করে এম,এ, রহিম মুক্তাঞ্চল গমন করতঃ ভারত বর্ষযান মুজিব বাহীনির সামরীক প্রশিক্ষন গ্রহন করে মুক্তিযুদ্ধে কৃতিত্ব পূর্ন ভূমিকা এবং বীরত্ব পূর্ন অবদান রাখেন।

 

স্বাধীন বাংলাদেশে সহজ লভ্য চাকরি কিংবা সার্বক্ষনিক ব্যবসা বানিজ্যে যোগ না দিয়ে একজন নির্ভিক ও নির্লোভ মুজিব সৈনিক দেশ ও সমাজ কর্মি হিসাবে বঙ্গঁবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে আত্বনিয়োগ করেন। তাঁর প্রিয় দল আওয়ামীলীগে বিভিন্ন সময় বিভাজন বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করা হলেও তিনি কখনও কোন দিন দল ত্যাগ করেন নি নিস্কিৃয় হন নি। আওয়ামীলীগেই রয়ে গেছেন। আওয়ামীলীগের প্রতিষ্টা কালীন প্রবীন নেতা বাবু এস,কে, রায় মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগে যোগদান করে মই মার্কায় নির্ব্বাচন করলেও মুজিব সৈনিক এম,এ, রহিম বিভিন্ন মহলের চাপ ভয়ভীতি উপেক্ষা করে নৌকার হাল ছাড়েন নি, নৌকা ত্যাগ করেন নি। তাঁর জন সম্পৃক্ততা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও কর্মি বাৎসল্যের কারনে তিনি সামরীক স্বৈর শাসক জেনারেল এর্শাদ এর স্বৈর শাসনামলে ১৯৮৩-১৯৮৮ সালে পর পর দুই মেয়াদে সততা ও সুনামের সাথে শ্রীমঙ্গল পৌর সভার চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব পালন করে ইতিহাস সৃষ্টি করে ছিলেন।

 

নব্বই সালের ছাত্র গন অভ্যূথানে জননেতা এম,এ, রহিমের সংগ্রামী ভূমিকা স্থানীয় রাজনীতির ইতিহাসে সমুজ্জল অধ্যায়। তাঁর ত্যাগী ও সংগ্রামী ভূমিকার কারনে তিনি শ্রীমঙ্গলে আওয়ামীগের দুর্দিনের কান্ডারি হিসাবে খ্যাতি ও পরিচিত লাভ করে ছিলেন। তাঁর ও আমার বাল্য কৈশোর কাল থেকে তাঁর সঙ্গেঁ আমার পরিচয় সম্পর্ক ও সখ্যতা আমাদের রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক পার্থক্য দেখাদিলেও ব্যক্তি গত ও পারিবারিক সম্পর্ক শেষ হয় নি বরং ষাটের দশকের ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্ববোধ অধিকতর মজবুত হয়েছে। হাল আমলে শ্রীমঙ্গঁলের সঙ্গেঁ আত্বীয়তা আসা যাওয়া বৃদ্ধি পেয়েছে মানুষ এম,এ, রহিম আমার কাছে সেই অর্ধশত বৎসর পূর্বে যেমনি বয়োঃকনিষ্ট ছিলেন আমি তার মুরব্বি বড় ভাই ছিলাম- তিনি এখন বয়োঃবৃদ্ধ দাদা নানা হলেও আমার কাছে ছিলেন আমার বয়োঃকনিষ্ট এম,এ, রহিম আমার প্রিয় রহিম। দশকাধিককাল পূর্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা অগ্রজ প্রতিম মির্জা আজিজ আহম্মদ বেগ এর নামাজে জানাজায় শ্রীমঙ্গল থেকে মাতার কাপন এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে আবেগে কান্নাকাটি করে বলেছিলেন, আমার জানাজায় ও আপনি যাবেন। আমাকে শেষ বিদায় জানাবেন। মির্জা আজিজ আহমদ বেগ এর কোন উপযুক্ত পুত্র সন্তান না থাকায় মরহুম আজিজ বেগ এর জানাজার নামাজটি উপস্থাপন ও পরিচালনা করছিলাম আমি নিজে। সেটি তাদের পারিবারিক অনুরোধ ছিল, বিশেষতঃ বীর মুক্তি যোদ্ধা বন্ধুবর মির্জা ফরিদ আহমদ বেগ এর।

 

আমার বন্ধু-বান্ধব ও শুভানুধ্যায়ীগন বলেন প্রত্যেক মুর্দার জানাজার নামাজের পূর্বে অনুষ্টিত তাৎক্ষনিক শোক সভা ও ধর্মালোচনায় আমি নাকি খুব হৃদয় গ্রাহী ও চমৎকার বক্তব্য দিয়ে থাকি। আফসোস আমার ভ্রাতৃ প্রতিম সাদামনের কালো মানুষ এম,এ রহিম এর নামাজে জানাজায় যোগদান আমার পক্ষে সম্ভব হয় নি, আজীবনই আমি সেই বেদনা দূঃখ বোধ বয়ে বেড়াব। এম,এ, রহিম আমার জেলা সদরের যোগ্য জামাতা। গ্রাম জগৎসীর সুকন্যা সুরমার স্বামী তিনি। তাঁর কনিষ্ট ভ্রাতা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অনুজ প্রতিম মোহাম্মদ ইউসুফ আলীর খাজা খাদ্য ভান্ডারে বসে টাঙ্গাঁইল থেকে এসে শ্রীমঙ্গঁল উপজেলা হাকিম আদালতে আইন জীবী হিসাবে নাম ডাক অর্থ কড়ি কামালেও ঢাকা-টাঙ্গাঁইলে বাসাবাড়ি বানালেও আওয়ামী লীগ নেতা ইউসুফ আলীর জেষ্ট ভ্রাতা এম,এ রহিম এর গুরুতর অসুস্থতা এবং মৃত্যো সংবাদটি আমার কাছে বসেও আমাকে পৌছানো হয় নি। জানাজার সংবাদ জানালে জানাজায় যেতাম দোয়ায় শরিক হতাম। কথাও বলতাম। মরহুম এম,এ, রহিমের নির্ব্বাচনী এলাকার মাননীয় সিনিওর সাংসদ উপাধ্যক্ষ ডা. আব্দুশ শহীদ বন্ধুবরেষু। তিনি চীফ ইহুপ ছিলেন, বর্তমানে একটি সংসদীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন ছাড়াও জাতীয় মুক্তি যোদ্ধা কাউন্সিল জামুকার সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধি তিনি। তাঁর নির্ব্বাচনী এলাকা এবং তাঁর শহর শ্রীমঙ্গঁলের একজন বীর মুক্তি যোদ্ধা প্রশাসনিক জটিলতার কারনে মুক্তিযোদ্ধা সনদ পাবেন না, তা কাম্য ও কাংখিত নয়।

 

অনেক অমুক্তিযোদ্ধা চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট দাখিল করে সুযোগ সুবিধা বেতন ভাতা নিয়েছেন- ধরা পড়ার পর তাদের কারোই সরকারি অর্থকড়ি ফেরত প্রদানের খবর আমাদের নযরে আসে নি। সদর থানাধীন বরমান গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষিত আনছার কমান্ডার আশিত পর বৃদ্ধ এখলাছুর রহমান জীবন সায়াহ্ণে এসে মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট না পেয়ে আফসোস আহাজারি করছেন। তিনিও জীবদ্ধশায় তাঁর স্বীকৃতি পাবার হকদার। এব্যাপারে আমাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষ আরেকটি হৃদয় বান হবেন সবিনয়ে এই, আবেদন রইল। মুক্তিযোদ্ধা এম,এ, রহিমকে মরনোওর স্বীকৃতিও সম্মান টুকু পেতে পারেন না? বীর মুক্তিযোদ্ধা এম,এ, রহিমের উজ্জল স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। মহান মালিক তাঁর বেহেশত নসীব করুন- এই মোনাজাত করছি। এ মাসেই তাঁর কবর জিয়ারত এর ইচ্ছা পোষন করছি ইনশাল্লাহ।

[ষাটের দশকের ছাত্র নেতা, মুক্তিযোদ্ধা। সিনিওর এডভোকেট হাই কোর্ট, জজ কোর্ট। সাবেক সভাপতি, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব।]

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..