1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১০:০৫ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদ সমাজ, সভ্যতা, উন্নয়ন, অগ্রগতি ও প্রগতির পরিপন্থি

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৩ মে, ২০২৩
  • ৮৭ বার পঠিত

রফিকুর রহমান লজু:
জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদ সমাজ, সভ্যতা, উন্নয়ন, অগ্রগতি ও প্রগতির পরিপন্থি। জঙ্গীবাদ বা সন্ত্রাসবাদ এগিয়ে যাবার বা কোনো সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি নয়। ইহা এক ধরনের পশ্চাৎপদতা ও অন্ধকার যুগের ভ্রান্ত চিন্তার ফসল। জঙ্গীবাদের প্রবক্তারা বলে থাকেন তাদের চিন্তাধারা বা কর্মকান্ডের পিছনে মঙ্গল বা কল্যাণের উদ্দেশ্য রয়েছে। আসলে জঙ্গীবাদ বা সন্ত্রাস মানেই ধ্বংস ও প্রাণহানি। জঙ্গীবাদী তৎপরতায় কোনো কল্যাণ বা মঙ্গল নেই। জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদ কোথাও কল্যাণ বয়ে আনতে পারেনি। জঙ্গীবাদ পাল্টা জঙ্গীবাদের জন্ম দেয়, সন্ত্রাস সন্ত্রাসের জন্ম দেয়। তাই সমাজ থেকে, রাষ্ট্র থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীপনার উৎখাত শুধু কাম্যই নয়- শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মনুষ্যসমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সমাজের উন্নয়ন অগ্রগতির জন্য এর উৎখাত জরুরি ও অপরিহার্য। সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা, প্রগতি ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদ পরিহারের সকল উদ্যোগ ও কর্মসূচিতে সকল মহলের সাধ্যমতো অবদান রাখা একান্ত প্রয়োজন।

আমাদের দেশে ধর্মের নামে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানো হয়। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের জন্ম দেয়। যারা ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সমর্থক, তারা ধর্মকে লেবাস বা মুখোশ হিসেবে ব্যবহার করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চায়, সমাজকে পিছনে টেনে রাখতে চায়। সমাজে অশান্তি, বিশৃঙ্খলা, পশ্চাদপদতা ও কুসংস্কার চালু রাখতে চায়। ধর্মভিত্তিক এরকম রাজনীতি জন্ম দেয় সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদী উগ্রতার। একই ধারাবাহিকতার প্রশ্রয়ে আশ্রয়ে বেড়ে ওঠে জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদ।
নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে বাংলাদেশের জন্য এক বড় অভিশাপ জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদ। দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও উন্নয়ন-প্রগতির চাকা স্তব্ধ করে দেওয়াই এর আসল উদ্দেশ্য। দেশকে অস্থিতিশীল করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীত ধারায় দেশকে ঠেলে দেওয়ার জন্যই জঙ্গীবাজদের যত আকাম-কুকাম-অপতৎপরতা।

বাংলাদেশে ধর্মীয় মৌলবাদ যা দেশে জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদকে ডেকে এনেছে- তার উত্থান ঘটেছে আশির দশকে ক্ষমতা দখলকারী এরশাদের শাসনামলে যখন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করার প্রেরণা ও সুবিধা লাভ করেছিলেন তার পূর্বসূরি জেনারেল জিয়াউর রহমানের নিকট থেকে। জিয়াউর রহমান সেই ব্যক্তি যিনি মুক্তিযোদ্ধা হয়েও অত্যন্ত সচেতনভাবে ও কৌশলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের বুকে সর্বপ্রথম চাকু চালিয়েছিলেন। তিনি সামরিক শাসনের শক্তির জোরে কলমের খোঁচায় সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের চার মূলনীতির তিনটি- ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র খারিজ করে দিয়েছিলেন। তিনি গণতন্ত্রের নিজের মনগড়া ও বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চিহ্নিত কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে দল করেছেন এবং তাদের মন্ত্রী বানিয়ে কোলে তুলে নিয়েছেন। যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে ৩০ লক্ষ বাঙালি হত্যা এবং দুই লক্ষাধিক নারী ধর্ষণে সহায়তা করেছিলো এবং নিজেরাও ধর্ষণে অংশ নিয়েছিলো- একাত্তরের সেই সব ধর্ষক-ঘাতক দালাল যুদ্ধাপরাধীদের এভাবেই জেনারেল জিয়া বাংলার পবিত্র মাটিতে পুনর্বাসিত করেন। মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে এভাবেই সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী রাজনীতির পুনর্জন্ম ঘটে এবং এরই ধারাবাহিকতায় জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।

বাংলাদেশে মৌলবাদীরা, সন্ত্রাসীরা, জঙ্গীরা এভাবে ক্রমশ অমানুষ ও নৃশংস থেকে নৃশংসতর হয়ে ওঠে। জঙ্গীরা কতোটা শক্তিশালী তারা তার জানান দেয় ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশজুড়ে সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে। জঙ্গীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য ২১ আগস্ট একাধিক শক্তিশালী গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিলো যেখানে আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমান নিহত হন। তারা ঢাকায় রমনা বটমূলে নববর্ষের অনুষ্ঠানে বোমা ফাটিয়েছে, যশোরে উদীচীর সম্মেলনে বোমা মেরেছে, গাজীপুরে, চট্টগ্রামে, সিলেটে, হবিগঞ্জে, দিরাই প্রভৃতি স্থানে আক্রমণ করেছে। এসব বোমা হামলায় অসময়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে অনেককে। জাসদ নেতা কাজী আরেফ, অর্থমন্ত্রী এ এস এম কিবরিয়া, সিলেটের আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহীম বোমার আঘাতে প্রাণ দিয়েছেন।
তৎকালীন বিএনপি সরকার জঙ্গী নেতা শায়খ রহমান ও বাংলা ভাই সম্পর্কে আগে ভাগে সতর্ক হলে এত প্রাণহানি ঘটতো না, বোমাবাজরা এতদূর আগানোর সাহস পেতো না।

মৌলবাদ-জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস-বোমাবাজি-সাম্প্রদায়িকতা এসব একই সূত্রে গাঁথা। ধ্বংস এবং হত্যার রাজনীতির উৎসমুখ এই মৌলবাদ-জঙ্গীপনা। মৌলবাদ-জঙ্গীবাদকে আমাদের না বলতেই হবে। মানবতা বিরোধী অপতৎপরতাকে আমাদের রুখতেই হবে। দেশ থেকে সাম্প্রদায়িক জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস উৎখাত করতে হবে এবং এজন্যে আবার আমাদের ’৭১-এ ফিরে যেতেই হবে। ’৭২-এর মূল সংবিধানকে ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশ থেকে ধর্মের রাজনীতি চিরতরে বন্ধ করতে হবে। জনগণকে সচেতন করে জনগণকে সঙ্গে নিয়েই জঙ্গীবাদের সন্ত্রাসের মোকাবিলা করা লাগবে। শুধু আইন দিয়ে সন্ত্রাস বন্ধ করা যাবে না। আমাদের বুঝতে হবে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি মানেই উগ্র সাম্প্রদায়িকতা এবং সন্ত্রাস। ধর্ম আর রাজনীতি একসঙ্গে থাকলে কোনো না কোনোভাবে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ এসে পড়বেই। মৌলবাদ আর সাম্প্রদায়িকতা সে যে ধর্মেরই হোক- এই সভ্য যুগে তা মানবতার শত্রু। সবারই অংশগ্রহণ ও মিলিত শক্তি দিয়ে এই শত্রুকে প্রতিহত করতে হবে। তা হলে দেশও বাঁচবে এবং যার যার ধর্মও রক্ষা পাবে।
লেখক : সিনিয়র কলামিস্ট।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..