মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১২ অপরাহ্ন
বিনোদন ডেস্ক:সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সব সময় সরব অভিনেত্রী পরীমনি। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে নানা ঘটনা শেয়ার করে নেন ভক্তদের সঙ্গে। আর সেসব নিয়েই চলে নানা আলোচনা-সমালোচনা। পরীমনির সময়টা ভালো যাচ্ছে না গত ২৯ মে মধ্যরাতে শরিফুল ইসলাম রাজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে তিন অভিনেত্রীর নিজেদের মধ্যকার ক্যাজুয়াল ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়া থেকে। এসব নিয়েই নতুন করে কলহ শুরু হয় পরীমনি ও শরিফুল রাজের দাম্পত্য জীবনে। দুজনেই এখন হাঁটছেন বিচ্ছেদের পথে। শিল্পী, নির্মাতা, ভক্ত-অনুরাগী কারোরই চোখ ফাঁকি দিচ্ছে না তাদের ঘটনা।
চলচ্চিত্র নির্মাতা দীপঙ্কর দীপন এসব ঘটনাকে তাক করেই সোমবার সকালে নাম প্রকাশ না করে একটি লম্বা পোস্ট লেখেন নিজের ফেসবুকে। যেখানে তিনি চলমান রাজ-সুনেরাহ-পরীমনি বিতর্ক নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন। বলতে চাইলেন, এসব ঘটনার কারণে তার মুক্তি-প্রতীক্ষিত সিনেমা ‘অন্তর্জাল’-এর প্রচারণায় ব্যাঘাত ঘটছে।
দীপঙ্কর দীপন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ভাই ও বোন প্লিজ থামেন। আমাদের ক্ষমা করে দেন। একবার না বারবার এসব হচ্ছে। নিজেদের টাকা ও ব্যক্তিগত জীবন নষ্ট করে, দিনরাত অপরিসীম কষ্ট করে একটা কনটেন্ট বানিয়ে নিয়ে আসি, দর্শকদের সামনে সেটা যখন উপস্থাপন করি, তখনই আপনাদের ব্যক্তিগত জীবনের নানা কাহিনি সামনে চলে আসে। সিনেমার কনটেন্টের থেকে দর্শকদের আগ্রহ চলে যায় আপনাদের প্রেম, বিয়ে, বিচ্ছেদ, সন্তান- এসব দিকে। যা সামনে আসারই কথা না। একবার না বারবার হচ্ছে এসব- সত্যি আমি টায়ার্ড, আপসেট। প্রত্যেকের জীবনেই এসব আছে- কিন্তু এসব আমরা সামনে নিয়ে আসি না। এসব নিয়ে কথা বলি না পাবলিকলি। আপনারা তো পাশের মানুষটাকেও কিছু বলেন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে। নিজেদের পাবলিক করলে পাবলিক তো মজা নেবেই।’
এই পোস্ট পড়ে কারও বুঝতে বাকি রইল না, দীপন তার ‘অন্তর্জাল’ ছবিটিকে সামনে নিয়েই এই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন রাজ ও পরীর ঘটনাকে ঘিরে। সেই পোস্ট ফেসবুকে শেয়ার করে পরীমনিও পাল্টা জবাব দিলেন। দীপঙ্কর দীপনকে পরী বললেন, ‘জীবনকে সিনেমার কাছে তুচ্ছ করে দেয়া কোনো মেকারের সঙ্গে যায় না।’
পরী লিখেছেন, ‘জি, ১০ দিন যে জামাই বাসা ছেড়ে গেছে, এটা তো আপনার সিনেমার নায়িকার কারণেই জানাজানি হলো ভাইয়া! সিনেমা ফ্যাক্ট আবার কারোর ঘাড়ে চেপে লাইম লাইটে আসাটাও ফ্যাক্ট! যেটা আপনার সিনেমার এই মেয়েটা করল। সবখানে লাফাতে লাফাতে গিয়ে ইন্টারভিউ দিচ্ছে। এত ডাক তো তার কোনো কালে আর আসে নাই। এখন বইলেন খালি আমার থু থু না চাইটা যেন সিনেমার কথাটাও ঠিকমতো বলে। আপনার কিন্তু আরও বড় শিল্পীরা আছেন এই সিনেমায়, তাদের এখনো ওনার মতো প্রমোশনে যেতে দেখেনি। নাকি সব দায়িত্ব এবার এই একজনেরই!’
অভিনেত্রী আরও লিখেছেন, ‘আর ভাইয়া, আপনার সঙ্গে তো আমার পার্সোনালি অনেক ভালো সম্পর্ক! এত বড় স্ট্যাটাস লিখতে পারলেন অথচ আমাকে একটা কল করে কিছু বলতে পারলেন না! আফসোস! আর এমন তুচ্ছ করে তুচ্ছ লিখবেন না প্লিজ ভাইয়া। জীবনটাকে সিনেমার কাছে তুচ্ছ করে দেয়া কোনো মেকারের সঙ্গে যায় না। জীবন দামি। সব থেকে দামি।’
অন্যদিকে এসব ঘটনা সাংবাদিক ও দর্শকদের এড়িয়ে চলার অনুরোধ করেন দীপঙ্কর দীপন। তার পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, ‘সাংবাদিক ভাইবোন, পত্রিকার মালিক পক্ষ, আপনাদের অনুরোধ করি, প্লিজ ইগনোর করেন এসব। এসব ছাড়া আপনাদের পত্রিকা চলবে না- আমি বিশ্বাস করি না। অনেক শক্ত আপনাদের ভিত্তি। সস্তা ইউটিউবার আর ল্যাপটপ বেজড অনলাইন পত্রিকা করুক, আপনারা কেন? আপনারা স্টাবলিশ স্বনামধন্য সাংবাদিকরা একবার ইগনোর করে দেখুন, সব থেমে যাবে। দর্শকদের অনুরোধ করি, যখন দেশের বাইরে কেউ আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে, আপনাদের দেশের সিনেমার স্ট্যান্ডার্ড কেমন? তখন সামনে আসবে কিন্তু তারকাদের বিয়ে, প্রেম, বিচ্ছেদের গল্প। এসব দিয়ে নিজের দেশের ব্র্যান্ডিং হবে না, ওসব কেউ মাথায়ই আনবে না। আসবে কনটেন্ট, নিজের দেশের সিনেমার পর্দায় কী চলছে সেটা- তারকাদের ঘরে কী চলছে সেটা না। ওটা তারা আলোচনা করুক, যারা চায় এই দেশে সিনেমা বন্ধ হয়ে যাক। তারা তিলকে তাল করবে- আপনারা জাস্ট ইগনোর করুন। কথা বলা, শেয়ার করা বন্ধ করে দিন। আপনাদের আগ্রহ কমলে সব বন্ধ হয়ে যাবে। সবার ঘরেই নানা প্রবলেম থাকে, ওগুলো নিয়ে কথা বলার কী আছে! কনটেন্ট নিয়ে কথা বলুন, আলোচনা করুন, সমালোচনা করুন, ভালো কাজকে অনুপ্রেরণা দিন। সত্যি বলছি- ভালো কাজ আপনারা যা দেখেন, এই দেশে তা খুব কষ্ট করে হয়। চোখে পানি চলে আসার মতো কষ্ট। আমার একার না, সবার। সবাই কষ্ট করে। এই কষ্টকে মূল্যায়ন করুন- ব্যক্তিগত জীবনে কারও ভুল বা খামখেয়ালিকে নয়। আপনারা এসব নিয়ে আগ্রহ কমালে সব কমে আসবে ক্রমান্বয়ে।’
‘অন্তর্জাল’ নির্মাতা দীপন আরও বলেন, ‘আজীবনই পৃথিবীতে কেচ্ছা-কাহিনির জনপ্রিয়তা বেশি। কিন্তু এটা বাংলাদেশের সিনেমা, মূলত মেইনস্ট্রিম সিনেমা বিনির্মাণের সময়। আমরা অনেক পরিচালক, রাইটার, শিল্পী-কুশলী প্রাণপণে চেষ্টা করছি। এ বিনির্মাণে সবার দায়িত্বশীল আচরণ প্রয়োজন। কষ্ট করতে আমরা রাজি আছি, আরও করব, নিজেদের উন্নত করব। আমাদের মোটিভেশন দরকার। অল্প অল্প করে জমা হতাশা একসঙ্গে হয়ে আমাকে বা আমাদের মেরে ফেলতে পারে। বাংলাদেশের সিনেমার ভীষণ সম্ভাবনা- তুচ্ছ কারণে সেটা নষ্ট না করি।’
প্রসঙ্গত, রাজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে অভিনেত্রী সুনেরাহ বিনতে কামাল, তানজিন তিশা ও নাজিফা তুষির কিছু ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। যা নিয়ে শুরু হয় নানা বিতর্ক ও সমালোচনা। সেই সূত্র ধরে পরী গণমাধ্যমে রাজ আর সুনেরাহর প্রেমের কথা প্রকাশ করেন। তার দাবি, ১০ দিন হলো সুনেরাহ ও রাজ একসঙ্গে আছেন। কারণ গত ২০ মে থেকেই রাজ বাসায় থাকছেন না। নিজের জিনিসপত্র নিয়ে চলে গেছেন।
এর পরই একটি গণমাধ্যমে পরী বলেছেন, তিনি রাজকে আর স্বামী হিসেবে ভাবতে চান না। নিজেকে রাজের সাবেক বলতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন তিনি। এমনকি আগামীতে বিবাদ মিটিয়ে রাজ যদি ফিরতে চান, সংসার করতে চান, সেই সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য পরীর। তাদের মধ্যকার এই গণ্ডগোল এখনো চলমান।