রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৪ পূর্বাহ্ন
মাহফুজ শাকিল, কুলাউড়া : কেউ বলে রাতের রানি, কেউ বলে নাইট কুইন, যে নামেই ডাকুন না কেনো, লজ্জাবতি ওই ফুলটি রাতেই ফুটে আবার রাত ভোর হবার আগেই ঝরে যায়। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার শিবির এলাকায় এডভোকেট তাজুল ইসলাম এর বাসায় বুধবার (৮জুন) দিবাগত মধ্যরাতে ৬টি ট নাইট কুইন ফুল ফুটেছে। তাজুল ইসলামের সহধর্মিণী শিক্ষিকা মমতাজ সুলতানা হেপি তাঁর ছাদ বাগানে সখ করে বিভিন্ন ধরনের ফুলের বাগান করেছেন। সেই বাড়িতে ফুটেছে দুর্লভ নাইট কুইন বা ‘রাতের রানির’।
এই দুর্লভ ফুল ফোঁটার পর খবর পেয়ে আশপাশের লোকজন ফুলটি এক নজর দেখতে ছুটে আসেন তাজুল ইসলামের বাসায়।
গাছের চারা রোপণের পর দিন যায়, মাস যায়। এমনকি বছর পার হয়ে যায়। তারপরও দেখা মেলে না ফুলের। অবশেষে অপেক্ষার দুই বছরের মাথায় যেভাবে গত বছরের ২৭ জুন সোমবার রাত ১০টার দিকে ২টি নাইট কুইন ফুল ফুটেছিল ঠিক তেমনি এবার এক বছরের মাথায় দেখা মিললো আরো ৬টি নাইট কুইনের।
ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদ নাইট কুইনের আদি নিবাস যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চল ও মেক্সিকো। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে দেখা মেলে এ গাছের। গাছ থাকলেও ফুলের দেখা মেলা খুব কষ্টসাধ্য। অনেকটা দুর্লভ এ ফুলকে বলা হয় সৌভাগের প্রতীক।
তথ্যমতে, নাইট কুইনের বৈজ্ঞানিক নাম এপিফাইলাম অক্সিপেটালাম (ঊঢ়রঢ়যুষষঁস ড়ীুঢ়বঃধষঁস) ফুলটি ‘বেথেলহাম ফ্লাওয়ার’ নামেও পরিচিত। সাধারণত চারাগাছ থেকে ফুল ফুটতে সময় নেয় পাঁচ থেকে সাত বছর। এর চারা তৈরি হয় পাথরকুচি গাছের মতো পাতা থেকে। পাতা নরম মাটিতে রেখে দিলে তা থেকে ধীরে ধীরে চারা গাছ গজায় এবং এ চারাগাছ বড় গাছে পরিণত হয়। গাছের পাতার রং সবুজ ও বেশ পুরু। গাছ উচ্চতায় গড়ে চার থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত হয়। আবার পাতা থেকেই প্রস্ফূটিত হয় ফুল। ফুল ফোটার আগে গাছে প্রথমে গুটি গুটি কলি ধরে এবং তা ধীরে ধীরে বড় হয়ে প্রায় ১৪ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ফুল ফোটার উপযোগী হয়। নাইট কুইন রাতে ফোটে। আবার ভোরের আলো দৃশ্যমান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝরে যায়। গাছের লম্বা বোঁটায় নমনীয় কোমল অনেকগুলো সাদা রঙের পাপড়ির গোলাকার মেলবন্ধনে নাইট কুইন ফুলের আকার লাভ করে। পরাগ থাকে মাঝে। পরাগ ফুলের রং প্রধানত সাদা। সাদা রঙের ফুলের মাঝে ঘিয়ে রঙের মিশ্রণ ও সুমিষ্ট গন্ধ নয়নাভিরাম আর আভিজাত্যের আবেশ তৈরি করে।
ফুলপ্রেমী গাছের মালিক শিক্ষিকা মমতাজ সুলতানা হেপি বলেন, এই ফুল বাড়িতে ফোটানো অনেকটা সৌভাগ্যের বিষয়। তিন বছর আগে গাছটি আনি। তারপর অনেক যতœ নিয়েছি। অবশেষে গত বছর ২টি ফুল ফুটেছিল, এবার ফুটলো ৬টি। এতে আমরা অনেক আনন্দিত। অনেকে ফুলটি দেখতে আসছেন। নাইট কুইন ফুল ছাড়াও বাড়ির ছাদে গোলাপ, ডালিয়া, সূর্যমুখী, গাদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ রয়েছে। এ ছাড়াও, ছাদে ও বাড়ির বিভিন্ন স্থানে সবজির বাগানও করেছেন। তিনি নিয়মিত সকাল-বিকেল টবে লাগানো নাইট কুইনসহ অন্যান্য ফুল ও ফলের গাছগুলোর পরিচর্যা করেন। তাঁর স্বামী এডভোকেট তাজুল ইসলাম, মেয়ে যারিন সাবাহ ঐশি ও তাসনীম সাবাহ আর্শী সময় পেলেই বাড়িতে লাগানো ফুল ও ফলের গাছগুলোর পরিচর্যা করে থাকেন।