বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৩৩ অপরাহ্ন
বড়লেখা প্রতিনিধি :বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের ছোটলেখা চা-বাগানের বনাখলা পুঞ্জির পানজুম অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। শুক্রবার (৪ জুন) বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে জুমটি দখলমুক্ত করেছে। বেলা ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত এই অভিযান চালানো হয়। এসময় জুমে দখলদারদের তৈরি করা ৩টি টিনশেডের ঘর উ”েছদ করে খাসিয়া ও চা-বাগানের কাছে জুমের জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। প্রায় এক সপ্তাহ পর জুম দখলমুক্ত হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে খাসিয়াদের মধ্যে।উ”েছদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার মুদা”িছর বিন আলী। এসময় মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) সাদেক কাউসার দস্তগীর, বড়লেখা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নূসরাত লায়লা নীরা, বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রতন দেবনাথ প্রমুখ।গত শুক্রবার (২৮ মে) সকালে বনাখলা পুঞ্জির জুম দখল করে ¯’ানীয় কয়েকজন দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে একদল ব্যক্তি খাসিয়াদের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এরপর জুম দখল করে সেখানে তারা কয়েকটি ঘরও নির্মাণ করে খাসিয়াদের তাড়িয়ে দেয়। একসপ্তাহের মধ্যে তাদের দাবিকৃত টাকা না দিলে খাসিয়াদের তারা জুমে প্রবেশ করতে দেবে না বলে জানিয়ে দেয়। এছাড়াও খাসিয়াদের আট লাখ টাকার পানগাছ কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা।
এই ঘটনায় গত রোববার (৩০ মে) পুঞ্জির মান্ত্রী, নরা ধার ও ছোটলেখা বাগানের প্রধান টিলা করণিক মো. দেওয়ান মাসুদ থানায় পৃথকভাবে দুটি মামলা করেন। পরে পানজুম দখলের পর ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনায় পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বুধবার (২ জুন) দিবাগত রাত তিনটার দিকে বড়লেখা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রতন দেবনাথের নেতৃত্বে একদল পুলিশ উপজেলার উত্তর ডিমাই গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়াও পরে বুধবার (২ জুন) মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট ডাডলী ডেরিক প্রেন্টিস, বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের মহাসচিব ফিলা পতমী, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ মৌলভীবাজার জেলা শাখার সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবুল হাসান বড়লেখার বনাখলাপুঞ্জি ও আগারপুঞ্জি পরিদর্শন করেন। তারা দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত তারা পুঞ্জি দুটিতে ঘুরে মান্ত্রী (পুঞ্জি প্রধান) ও খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের সাথে কথা বলেন। খাসিয়ারা তাদের জানায়, ‘জুম দখল করে চাঁদা দাবি করে, জুমে যাইতে দেয় না। অভিযান শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদা”িছর বিন আলী বলেন, ‘শুক্রবার বনাখলা পানপুঞ্জির পানজুম দখলমুক্ত করা হয়েছে। জায়গাটি দুর্গম। ¯’ানীয় কিছু দুস্কৃতিকারী কিছুদিন জুমের জায়গা দখল করে রেখেছিল। উপজেলা প্রশাসন, জেলা ও থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে অবৈধ দখলকারিদের সমূলে উ”েছদ করা হয়। এরপর খাসিয়াদের তাদের পানজুমের জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এতে তারা খুশি হয়েছেন। খাসিয়াদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণে ও তাদের অধিকার রক্ষায় বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) সাদেক কাউসার দস্তগীর বলেন,গত ২৮ মে পানজুম দখলের ঘটনায় খাসিয়া ও বাগান কর্তৃপক্ষ পৃথক দুটি মামলা করেন। জুম দখলের মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় অবৈধ দখল উ”েছদ করে জুমের জায়গা বাগান ও খাসিয়াদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এলাকায় যাতে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকে এ জন্য নজরদারি আছে। এছাড়া মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জুম উদ্ধারের এক প্রতিক্রিয়ায় বনাখালা পুঞ্জির মান্ত্রী নরা ধার বলেন, আমরা উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞ, উদ্ধার অভিযানের পরও আমাদের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছে। কিš‘ পুলিশের আশ্বাসে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি।
বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের মহাসচিব ফিলা পতমী বলেন, ঘটনার পর থেকে আমরা জায়গাগুলোতে পরিদর্শন করেছি। এখানে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের সাথে কথা বলে আমরা যা বুঝতে পেরেছি। দুই পুঞ্জির লোকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আজকে উদ্ধার অভিযানের পর আমরা এলাকা পরিদর্শন করি। এলাকাবাসীর সাথে আলাপে তাদের স্বস্তি দেখতে পাই। যদিও কিছু কিছু মানুষের মাঝে এখনো আতঙ্ক আছে। ঘটনা ঘটার প্রথম থেকে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয় যে প্রশাসনের ভুমিকা পজিটিভ ছিল। আমরা সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানাই। তারা গুর“ত্বসহকারে সংবাদ করেছে।