1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

ভুল চিকিৎসা : মারা গেলেন সেই আঁখি

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৮ জুন, ২০২৩
  • ২৩০ বার পঠিত

ডেস্ক রিপোর্ট : রাজধানীর সেন্ট্রাল হসপিটালে ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের প্রতারণায় অবশেষে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন মাহবুবা রহমান আঁখি।

রোববার (১৮ জুন) দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। আর সোয়া দুইটার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী সুমন।

এর আগে সকালে তিনি জানান, রোগীর কোন ইমপ্রুভ হচ্ছে না, বরং অবনতির দিকে যাচ্ছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোন আশ্বাস দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে সেসময় তিনি বলেন, চিকিৎসক এখন পর্যন্ত কোন আশ্বাস দেয়নি। তারা বলছে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এখান থেকে কামব্যাক করা কঠিন। একমাত্র যদি আল্লাহ চান, তাহলেই হবে।

ইয়াকুব আলী আরও বলেন, ব্লিডিংটা কিছুটা কমেছিল, কিন্তু গতকাল থেকে আবার বেড়ে গেছে। গতকাল আবার ৫ ব্যাগ রক্ত কালেকশন করে দিয়েছি। আজ দুপুর পর্যন্ত এগুলো চলবে। ডাক্তার আজকে আবার রোগীর পরিস্থিতি দেখে আবার জানাবে।

সেন্ট্রাল হসপিটালে আঁখি ও তার নবজাতকের সঙ্গে যা ঘটেছিল

গত শুক্রবার (৯ জুন) রাতের ঘটনা। মাহাবুবা রহমান আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী সুমন বারবার সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞেস করছিলেন, আমার স্ত্রী কেমন আছে? আর ডা. সংযুক্তা সাহা কোথায়? কিন্তু ইয়াকুবের কোনো কথার উত্তর না দিয়ে তাকে এড়িয়ে যাচ্ছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা বার বার ইয়াকুবকে বলছিলেন, আপনি ‘গেটের বাইরে অপেক্ষা করুন’। একপর্যায়ে একজন নার্স এসে ইয়াকুবকে জানান, আঁখির অবস্থা আশঙ্কাজনক। সেজন্য তাকে কাগজে সই দিতে হবে। সই না দিলে আঁখি ও তার নবজাতকের চিকিৎসা করবে না সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কাগজে সই দিয়েও স্ত্রী ও সন্তানের কোনো তথ্যই পাচ্ছিলেন না ইয়াকুব।

এ বিষয়ে শুরু থেকেই ইয়াকুবের সঙ্গে লুকোচুরি করছিলেন চিকিৎসকরা। একপর্যায়ে ইয়াকুবকে জানানো হয়, তার স্ত্রীর চিকিৎসা করা আর সেন্ট্রাল হাসপাতালে সম্ভব নয়। তাকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। পরে স্ত্রীর জীবন বাঁচাতে শনিবার (১০ জুন) ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে আঁখিকে ভর্তি করান ইয়াকুব। এরপর সেন্ট্রাল হাসপাতালে এসে জানতে পারেন তার নবজাতক হাসপাতালের এনআইসিইউতে মারা গেছে।

এ ঘটনায় বুধবার (১৪ জুন) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি থানায় সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন ইয়াকুব আলী। মামলার আসামিরা হলেন, সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডা. মুনা সাহা (২৮), ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা (৩৮), অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার সহকারী মো. জমির, ডা. এহসান, ডা. মিলি ও সেন্ট্রাল হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজসহ আরও অজ্ঞাত ৫-৬ জন। এর মধ্যে বুধবার এজাহারনামীয় দুই আসামি ডা. মুনা সাহা ও ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানাকে গ্রেপ্তার করেছে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। গ্রেপ্তার আসামিদের বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) আদালতে তুললে তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে ইয়াকুব আলীর স্ত্রী আঁখি ও সন্তানের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সেদিন রাতের ঘটনার বিষয়ে বৃহস্পতিবার আদালতকে এসব তথ্য জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক রাসেল।

তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক রাসেল আদালতকে বলেন, মামলার বাদী ইয়াকুব আলী সুমনের স্ত্রী মাহাবুবা রহমান আঁখি গর্ভধারণের পর থেকেই ধানমন্ডি সেন্ট্রাল হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার (গাইনি) কাছে নিয়মিত চিকিৎসায় নিতেন। এ অবস্থায় গত ৯ জুন তার প্রসব বেদনা শুরু হয়। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে ডা. সংযুক্তা সাহার সহকারী মো. জমিরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে জানতে চাওয়া হয় তিনি (সংযুক্তা সাহা) হাসপাতালে আছেন কি না। জমির আঁখির স্বামীকে জানান ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে আছেন এবং তাদের দ্রুত আসতে বলেন। পরে ইয়াকুব আলী তার স্ত্রীকে বাসা থেকে নিয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. সংযুক্তা সাহার চেম্বারের সামনে পৌঁছান।

আরও পড়ুন : সেন্ট্রাল হাসপাতালে নবজাতকের মৃত্যু, মৃত্যুশয্যায় মা

সেসময় হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মুনা সাহা বাদীকে জানান, ডা. সংযুক্তা সাহা লেবার ওয়ার্ডে আছেন। এই কথা বলে ডা. মুনা সাহা মাহাবুবা রহমানকে লেবার ওয়ার্ডে নিয়ে যান। সেসময় তাদের পেছনে পেছনে বাদীও লেবার ওয়ার্ডের সামনে যান। এর কিছুক্ষণ পর একজন নার্স লেবার ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে ইয়াকুব আলীকে জানান, তার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। নার্সের এমন কথা শুনে, ইয়াকুব আলী ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে ভর্তি বাবদ ক্যাশ কাউন্টারে ১০ হাজার টাকা জমা দিয়ে মানি রিসিট লেবার ওয়ার্ডের নার্সের কাছে জমা দেন।

তিনি বলেন, এর কিছুক্ষণ পর ডা. শাহজাদী গাহিনী ওয়ার্ডে এলে তার কাছে ইয়াকুব আলী নিজের স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার কথা জানতে চান। কিন্তু ইয়াকুবের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে তাকে গেটের বাহিরে অপেক্ষা করতে বলেন ডা. শাহজাদী।

এরপর রাত ১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ইয়াকুবের স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার কোনো খবর না পেয়ে একপর্যায়ে জোরপূর্বক লেবার ওয়ার্ডে প্রবেশ করেন। তিনি ভেতরে প্রবেশ করে দেখেন কয়েকজন নার্স মিলে তার স্ত্রীকে দ্রুত গতিতে হাঁটাচলা করাচ্ছেন। এসময় ইয়াকুব নার্সদের জিজ্ঞেস করেন ডা. সংযুক্তা সাহা কোথায়। কিন্তু নার্সরা ইয়াকুবের কথার উত্তর না দিয়ে তাকে লেবার ওয়ার্ডের বাইরে অপেক্ষা করতে বলেন।

তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও বলেন, এরপর রাত ২টা ৩০ মিনিটের দিকে ডা. শাহজাদী আঁকেখি লেবার ওয়ার্ড থেকে বের করে অপারেশন থিয়েটারে (ওটিতে) নিয়ে যান। এসময় ডা. এহসান নামে আরও একজন চিকিৎসক ওটিতে প্রবেশ করেন। ওটিতে সিজারিয়ান অপারেশন শেষে ডা. শাহজাদী ইয়াকুব ও আঁখি দম্পতির নবজাতক শিশুকে (ছেলে) জীবিত অবস্থায় এনআইসিইউ নিয়ে যান। পরে রাত সাড়ে ৪টার দিকে একজন নার্স ওটি থেকে বের হয়ে ইয়াকুব আলীকে জানান, তার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক তাই কিছু কাগজে তাকে সই দিতে হবে। কাগজে কেন সই দিতে হবে জানতে চাইলে নার্স ইয়াকুব আলীকে জানান, তার স্ত্রীকে বাঁচাতে হলে এই কাগজে সই করতে হবে। অন্যথায় ইয়াকুবের স্ত্রী আঁখি ও তার নবজাতকের চিকিৎসা তারা করবেন না। এই কথা শুনে নিরুপায় হয়ে স্ত্রী ও সন্তানের জীবন বাঁচাতে সেই কাগজে সই করেন ইয়াকুব আলী।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে বলেন, অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার অনুপস্থিতিতে ওই রাতে আঁখির সিজারিয়ান অপারেশন কোনো চিকিৎসক করেছেন তা ইয়াকুব আলীকে জানানো হয়নি। এর মধ্যে ভোর ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে আঁখির শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। এ ঘটনায় ইয়াকুব আলী বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডেপুটি ডিরেক্টর মাসুদ পারভেজকে মৌখিকভাবে জানান।

এরপর ইয়াকুব তার স্ত্রী ও নবজাতকের শারীরিক অবস্থার কথা জানতে চাইলে এ বিষয়ে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে কোনো তথ্য না দিয়ে আঁখিকে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর জন্য বলে। ইয়াকুব সেন্ট্রাল হাসপাতালের কোনো সহযোগিতা না পেয়ে পরে তার স্ত্রীকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করান। পরদিন অর্থাৎ ১০ জুন সেন্ট্রাল হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ ইয়াকুবকে জানায়, তার সন্তান বিকেল ৪টার দিকে এনআইসিইউতে মারা গেছে।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..