1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

১০ বছরে ৫ হাজার রোগীকে রক্ত দান

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৮ জুন, ২০২৩
  • ৩৩৮ বার পঠিত

আব্দুর রব বড়লেখা পতিনিধি :বড়লেখা উপজেলার তারাদরম গ্রামের কিশোরী আফসানা বেগমের (১৪) অতিরিক্ত রক্তকরণে স্বজনরা তাকে বড়লেখার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করেন। চিকিৎসকরা জানান, তাকে বাঁচাতে হলে রাতের মধ্যে ৩-৪ ব্যাগ রক্ত লাগবে। তখন কিশোরীর স্বজনরা বড়লেখা বøাড ডোনেট ক্লাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সঙ্গে সঙ্গে ক্লাবের তিন সদস্য গভীর রাতে ওই ক্লিনিকে গিয়ে কিশোরীকে তিন ব্যাগ রক্ত দান করেন। রক্ত পেয়ে নতুন জীবন ফিরে পায় ওই কিশোরী।

উপজেলার হরিনগর গ্রামের সমছ উদ্দিন (৭৮) কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন। কিডনি ডায়ালাইসিস করতে হঠাৎ তার রক্তের প্রয়োজন পড়ে। সমছের নাতি জামাল উদ্দিন যোগাযোগ করেন বড়লেখা বøাড ডোনেট ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে। খবর পেয়ে ওই রোগীকে এক ব্যাগ রক্ত দেন ক্লাবের এক সদস্য।

শুধু আফসানা বা সমছ উদ্দিনকে নয়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এভাবে বিনামূল্যে রক্ত দিয়ে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে কাজ করছে মৌলভীবাজারের বড়লেখার ‘বাড ডোনেট ক্লাব’। ক্লাবের সদস্যরা এখন পর্যন্ত ৫ হাজার রোগীকে রক্ত দিয়েছেন। বড়লেখা উপজেলার পাশাপাশি দূরদূরান্তের কারও রক্তের প্রয়োজন হলে ছুটে যান ক্লাবের সদস্যরা। বিপদে রক্ত পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন মানুষ। এতে অনেকে রক্তদানে উৎসাহী হয়ে তাদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। তবে মাঝেমধ্যে রক্ত দিতে গিয়ে ক্লাবের সদস্যরা তিক্ত অভিজ্ঞতারও মুখোমুখি হন। শুরুতেই বড়লেখা ক্লাবের ৭ জন সদস্য থাকলেও বর্তমানে এর সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়েছে। এছাড়া পাশের জুড়ী, কুলাউড়া এবং বিয়ানীবাজার উপজেলায় আরও ১ হাজার সদস্য রয়েছেন। মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহী কাপেইন, বিনামূল্যে রক্তের গ্রæপ নির্ণয় সহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন ক্লাব সদস্যরা।এছাড়া ক্লাবটি গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণের পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজও করছে।

জানা গেছে, ২০১০ সালে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পারভীন বেগম জরায়ু টিউমারে ভুগছিলেন। তার রক্তের প্রয়োজন পড়ে। পারভীনের স্বজনরা কোথাও রক্ত পাচ্ছিলেন না। পারভীনের ভাই জাবেদ আহমদ পায়েল তার বন্ধু বড়লেখার নুরুল ইসলাম বাবলুর সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানান। নুরুল তখন নিজে রক্ত দিতে রাজি হন। পারভীনের রক্তের গ্রæপের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় ওই দিন নুরুল ছুটে যান ঢাকায়। সেখানে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে তিনি পারভীনকে রক্ত দেন। নুরুলের রক্ত পেয়ে সুস্থ হয়ে উঠেন পারভীন। এরপর নুরুল ভাবতে থাকেন কখনও কারও রক্তের প্রয়োজন হলে তিনি তাকে রক্ত দেবেন। এরপর তিনি একটি রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কয়েকবার কয়েকজন রোগীকে রক্ত দেন। এভাবে রক্তাদাতা হিসেবে পরিচিতি বাড়তে থাকে নুরুলের। কখনও কারও রক্তের প্রয়োজন হলে তার কাছে ফোন আসতে থাকে। রক্তের চাহিদা বাড়ায় নুরুল তখন বড়লেখায় একটি রক্তদাতা সংগঠন খোলার চিন্তা করেন। বিষয়টি তিনি তার বন্ধুসহ পরিচিত কয়েকজনকে জানান। এতে তারা সাড়া দেন। এরপর ২০১৪ সালের ১৪ জুন ‘বিশ্ব রক্ত দিবসে’ নুরুল ইসলাম বাবলুকে সভাপতি ও আছলাম হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক এবং মিসবাহ উদ্দিন, কামরুজ্জামান শামীম, বদরুল ইসলাম বদর, কামরুল ইসলাম ও খাইরুল ইসলাম মামুনকে সদস্য করে বড়লেখা বøাড ডোনেট ক্লাবের যাত্রা শুরু হয়। এরপর থেকে সংগঠনের সদস্যরা কারও ফোন পেলে রক্ত দিতে ছুটে যান। বড়লেখা উপজেলা ছাড়াও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জায়গার পাশাপাশি ঢাকায় গিয়েও মানুষকে রক্ত দিচ্ছেন ক্লাবের সদস্যরা। তাদের হিসেব মতে, এ পর্যন্ত ক্লাবের সদস্যরা ৫ হাজার রোগীকে রক্ত দিয়েছেন।

তারাদরম গ্রামের ছায়রা বেগম বলেন, অতিরিক্ত রক্তকরণে আমার মেয়ের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তাকে হাসপাতালে ভর্তির পর ডাক্তাররা জানান, রাতের মধ্যে কয়েক ব্যাগ রক্ত লাগবে। নাহলে আমার মেয়েকে বাঁচানো যাবে না। পরে বড়লেখা বাড ডোনেট ক্লাবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা ৩ ব্যাগ রক্ত দিয়ে আমার মেয়ের প্রাণ বাঁচিয়েছেন।

হরিনগর গ্রামের সমছ উদ্দিনের নাতী জামাল উদ্দিন বলেন, আমার দাদার কিডনি সমস্যা ধরা পড়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডায়ালাইসিস করতে হবে। এজন্য রক্তের দরকার। দাদার রক্তের গ্রপ অ-পজিটিভ। বিষয়টি বড়লেখা বøাড ডোনেট ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নুরুল ইসলাম বাবলুকে জানাই। তিনি পরে নিজে এক ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন। রক্ত পেয়ে খুব উপকার হয়েছে।

ক্লাব সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত। এ পর্যন্ত তিনি ২৮ জন রোগীকে রক্ত দিয়েছেন। ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নুরুল ইসলাম বাবলু বলেন, ২০১৪ সালে ১৪ জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবসে আমাদের ক্লাবের যাত্রা শুরু হয়। এ পর্যন্ত আমি ৩৩ জনকে রক্ত দিয়েছি। আমাদের ক্লাবের সদস্য সংখ্যা শুরুতে ৭ জন থাকলেও এখন শুধু বড়লেখাতে ৩ হাজারের বেশি আছে। পাশের তিনটা উপজেলায় আরও ১ হাজার সদস্য আছে। তবে অনেক সদস্য আবার বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। বিদেশ থেকে কেউ দেশে এসে রক্ত দিচ্ছেন। রক্ত পেয়ে মানুষ সুস্থ হচ্ছেন। বিষয়টা খুব ভালো লাগে। আর কেউ মারা গেলে খুব কষ্ট লাগে। আমাদের ক্লাবের একেকজন সদস্য ১০-১২ বার রক্ত দিয়েছেন। এ পর্যন্ত আমরা প্রায় ৫ হাজার রোগীকে রক্ত দিয়েছি। এর সংখ্যা আরও বেশি হবে।

তিনি আরো বলেন, প্রতিবার রক্তদানের পর রক্তদাতার অস্থিমজ্জা নতুন রক্ত কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। ফলে রক্তদানের দুই সপ্তাহের মধ্যে সে ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। শরীরের রক্ত কণিকাগুলোর মধ্যে লোহিত রক্ত কণিকার আয়ুষ্কাল সর্বোচ্চ ১২০ দিন। তাই ১২০ দিন পর পর রক্তদানে শরীরের কোন ক্ষতি নেই। রক্তদানে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।

বড়লেখা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ল্যাব টেকনোলজিস্ট সুলতান আহমেদ বলেন, ২০১৪ সালে বড়লেখা হাসপাতালে সিজার বেশি হত। প্রতিটা সিজারের রোগীর ২-৩ ব্যাগ রক্ত দেওয়ার পাশাপাশি ক্যান্সার ও সাধারণ রোগীদের নিয়মিত রক্ত দিয়েছে বøাড ডোনেট ক্লাবের সদস্যরা।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ তাজ উদ্দিন বলেন, বড়লেখা বাড ডোনেট ক্লাবের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে বিনামূল্যে রক্ত দিয়ে নি:সন্দেহে মহৎ কাজ করছে। যা প্রসংশার দাবি রাখে। এজন্য আমি তাদের বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা করি।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..