মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:১২ পূর্বাহ্ন
নাজমুল ইসলাম :: কুলাউড়ায় গহীন পাহাড়ে মৌসুমী ফল চাষ করে দরিদ্রতাকে পেছনে ফেলে স্বপ্নের উচ্চ শেকড়ে পৌছাতে চান দরিদ্র কাজল বেগম। ইতিমধ্যে মৌসুমী ফল বিক্রি করে তিনি এখন লাখ লাখ টাকা আয় করে স্বচ্ছল করে তুলেছেন পরিবারের সদস্যদের। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে গহীন পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় তাদের আয়ের উৎস একসময় কিছুই ছিলোনা। কিন্তু গত ৫-৬ বছর থেকে পাহাড়ি টিলা আবাদ করে মৌসুমী ফল চাষের উপযোগী করে তুলে প্রতি বছর শুধু মৌসুমী ফল বিক্রি করে কাজল বেগমের পরিবার এখন বেশ সাবলম্বী।
সরেজমি গিয়ে দেখা যায়, কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁ ইউনিয়নের লংলা খাস নতুন বস্তি এলাকায় পাহাড়ের মধ্যে সরকারী পতিত টিলায় বেশ কয়েকটি ভুমিহীন পরিবার দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করে আসছে। এসব পরিবারের সদস্যরা দরিদ্র হওয়ায় সংসার চালানো তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। বাড়ির পরুষ সদস্যরা দিনমজুর কাজের জন্য বাহিরে চলে গেলে মহিলারা স্ব স্ব উদ্যোগে টিলা জমিতে নানান রকমের মৌসুমী ফল চাষ করে তাদের পরিবারকে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সহযোগীতা করে যাচ্ছেন। তেমনি একজন সফল মৌসুমী ফল চাষী নারী কৃষানি কাজল বেগম। তাঁর স্বামী মোঃ তারা মিয়া একসময় প্রবাসে ছিলেন। সেই সময় ঋন করে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা খরছ করে দালাল মারফত আরব দেশে পাড়ি জমান। কিন্তু প্রবাস জীবনে তিনি তেমন সাফল্য বয়ে আনতে পারেননি পরিবারের জন্য। প্রায় বছরখানেক পর অসু¯তার কাছে হার মেনে তারা মিয়া ঋনের বোঝা মাথায় নিয়ে দেশে ফেরত চলে আসেন। এরপর তাদের পরিবারে অভাব-অনটনের ঘনঘাটা দেখা দেয়। কিন্তু ভেঙ্গে পড়েননি তার স্ত্রী কাজল বেগম। পুরুষের ন্যায়া শক্ত হাতে গ্রামীন কৃষি যন্ত্রপাতি হাতে তুলে নিয়ে শুরু করে পরিবারের জন্য নতুন যুদ্ধ। প্রায় পাঁচ বছর আগে গহীন পাহাড়ি এলাকার সরকারী খাস টিলায় ছোট দুই ছেলে ও তিন মেয়েদের নিয়ে আবাদ শুরু করেন। প্রায় তিন একর টিলা জায়গায় লাগিয়েছেন মৌসুমী ফল লিচু,আনারস,কাঠাল,আম,লেবু,গোলাপজাম ও বাগানের ফাঁকে ফাঁকে নানা ধরনের সবজি। এসব মৌসুমী ফল প্রতি বছরে বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছেন কাজল বেগম। এছাড়াও ওই এলাকার আরো ৫-৬ জন মহিলা কাজল বেগমের পথ অনুসরন করে তাদের বসত টিলায় কিছু কিছু মৌসুমী ফল চাষ করে সাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষানি কাজল বেগমের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, একসময় স্বামী তারা মিয়া প্রবাসে গেলে অনেক সুখে থাকতে পারবে ভেবেছিলেন। কিন্তু স্বামী ফেরত চলে আসায় সুখের আসা নিরাসায় পরিনত হয়। তাই স্বামীকে সাথে নিয়ে পরিবারের হাল ধরতে হয়েছে তাকে। শুরুতে মৌসুমী ফল চাষের চিন্তা মাথায় আনলে টিলা জমি প্রস্তুত করতে অনেক কষ্ট পোহাতে হয়েছে। আগে ফসলের গাছে পানি দিতে অনেক কষ্ট পোহাতে হয়েছে। কিন্তু গতবছর পল্লি বিদ্যুৎ চলে আসায় তারা পানির পাম্প স্থাপন করে অনায়াসে পানি দিতে পারায় এবার অনেকটা কষ্ট লাগব হয়েছে। এরপর যখন প্রতিবছর এসব গাছে ফল আসে এবং তা বিক্রি করতে পারি তখন আনন্দে সবার মন ভরে যায়। অন্য বছরের তুলনায় এবার তিনি প্রায় একশত লিচু গাছ থেকে গত একমাসে ফল বিক্রি করে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা আয় করেছেন। এখন বাগানে যে লিচু রয়েছে সেগুলো নিজেদের খাওয়ার জন্য রেখেছেন। আনারস বাগানে প্রায় ১০ হাজার আনারসের চারা লাগিয়েছেন। তাতে খরছ হয়েছে মাত্র ৩০-৩৫ হাজার টাকা। টানা তিন বছর থেকে ফল দিয়ে যাচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে আনারস লাল হয়ে গেলে বিক্রি শুরু করবেন। তখন আনারস বিাক্র করে বর্তমান বাজার মূল্যে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা আয় করা যাবে বলে তিনি জানান। ইতি মধ্যে বাগান থেকে আম,কাঠাল ও লেবু বিক্রি করে প্রায় ২ লক্ষ টাকা আয় করেছেন। এখনো এসব গাছে ফল রয়েছে বাকি ফসলগুলো বিক্রি করে কয়েক লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব হবে। তাছাড়া টিলার বিভিন্ন স্থানে নানান রকমের সবজি দেড়শ,জিঙ্গা ও লাউ লাগানো হয়েছে। সে গুলো বিক্রি করে ফলের পাশাপাশি বাড়তি আয় করছেন তিনি। কাজল বেগম আরো জানান,শহর থেকে অনেক দূরে দূর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় যাতায়াতের ব্যাবস্থা খুবই খারাপ। এর মধ্যে এখন বর্ষাকাল থাকায় মাটির রাস্তা খুবই বেহাল দশা। যার কারনে অনেক পাইকাররা গাড়ি নিয়ে আসতে চায় না। তাই বাধ্য হয়ে তাদের দেয়া মূল্য অনুযায়ী মৌসুমী ফসল বিক্রি করতে হয়। আবার নিজে বাজারে নেয়ার ইচ্ছা থাকলেও রাস্তা ও যানের অভাবে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়না। কাজল অভিযোগ করে বলেন, মহিলা হয়ে কয়েক বছর থেকে মৌসুমী ফল চাষ করলেও আজ পর্যন্ত সরকারীভাবে কৃষি বিভাগ থেকে কোনো সুযোগ সুবিদা সুপরাসমর্শ পাননি তিনি।