1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

দূরারোগ্য ¯স্নায়ুরোগ পার্কিনসনস্

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ৫৭ বার পঠিত

আফতাব চৌধুরী:

পার্কিনসনস্’ রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, দীর্ঘজীবীদের সংখ্যা খুব কম নয়। আমেরিকায় বিভিন্ন গবেষণাসূত্রে যে ওষুধপত্রগুলি আবিষ্কৃত হয়েছিল, তার সাহায্যে এই দুরারোগ্য স্নায়ুরোগের পরিণতিকে বেশ কিছু বছর ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে। চিকিৎসা, ফিজিওথেরাপি, কগনিটিভ থেরাপি রোগের উপসর্গগুলিকে সাময়িকভাবে নিয়ন্ত্রণ করায়, অক্ষমতা সত্তে¡ও রোগী অপেক্ষাকৃত স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন যদিও সকলের ক্ষেত্রে চিকিৎসায় আশানুরূপ ফলাফল হয় না।
বিখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা মহম্মদ আলি পার্কিনসনস্-এ আক্রান্ত হওয়ার পরে আরও বত্রিশ বছর বেঁচেছিলেন যদিও শেষ কয়েক বছরে অবস্থার চরম অবনতি হয়েছিল। আসলে এ রোগের সূত্রপাত হয় বহু আগে। সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের এই রোগের লক্ষণ প্রথম অবস্থায় প্রকট হয় না বলে রোগীর বুঝতেও দেরি হয়। হলিউডের অভিনেতা মাইকেল ডে ফক্স-এর ছাব্বিশ বছর আগে পার্কিনসনস ধরা পড়েছিল। তখন ডাক্তার বলেছিলেন আর বছর দশেক তাঁর কাজকর্ম করার ক্ষমতা থাকবে। পার্কিনসনস ডিজিজ-এর চিকিৎসার নতুন গবেষণার জন্য এ পর্যন্ত তিনি সাতশো মিলিয়ন ডলার দান করেছেন। মাইকেলের ডানহাত এত কাঁপে যে, কিছু ধরে রাখতে পারেন না। নিয়মিত স্পিচ থেরাপি তাঁকে এ কাজে সাহায্য করে। হাঁটার সময় ভারসাম্য রাখার জন্য, নিয়মিত ফিজিও থেরাপি করাতে হয়। এমন অক্ষমতা সত্তে¡ও পঞ্চান্ন বছর বয়সি অভিনেতা চিকিৎসা ও মনোবলের সাহায্যে যথাসম্ভব স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বজায় রাখার চেষ্টা করছেন।
পার্কিনসন্‌স ডিজিজ হচ্ছে মস্তিষ্কের নার্ভাস সিস্টেম-এর এমন এক অক্ষমতা বা ক্রমাগত পেশির সঞ্চালন ক্ষমতা নষ্ট করতে থাকে। প্রথমদিকে খুব ধীরে ধীরে এর উপসর্গ শুরু হয়। হয়তো একটি হাতে সামান্য কম্পন অনুভূত হল। কাপুনি রোগ বলে চিহ্নিত হলেও হাতে-পায়ে স্টিফনেস বা অনড় ভাব, হাঁটাচলার ধীর গতি, হাঁটার সময় হাতের সঞ্চালন না-হওয়া, চোখেমুখে অভিব্যক্তির অভাব, গলার স্বর নিচু হয়ে যাওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া- ক্রমশ এভাবেই রোগলক্ষণ ধরা পড়ে। প্রত্যেক রোগীর প্রাথমিক লক্ষণ একরকম না হতেও পারে। সাধারণত শরীরের একদিকে এর আক্রমণ শুরু হয় এবং পেশির অক্ষমতা বাড়তে থাকে। পরে ক্রমশ শরীরের অন্যদিকেও যখন উপসর্গ দেখা দেয়, প্রথমবারে আক্রান্ত অংশেরই দ্রæত অবনতি ঘটতে থাকে। প্রথম লক্ষণ কাঁপুনি বা মৃদু ঝাকানির মতো হাত নয়তো আঙুল নড়তে থাকে। বিশেষ করে বুড়ো আঙুল আর মাঝের আঙুল ঘনঘন ওঠানামা করে।
এ ছাড়া আরো একটি লক্ষণ হল, হাত যখন নিষ্ক্রিয় বা বিশ্রামে থাকে, তখন নিজে থেকেই কাঁপে। ক্রমশ এ রোগ হাত পায়ের শক্তি নষ্ট করতে থাকে। ইাঁটাচলার গতি কমে যায়। ছোটো ছোটো পদক্ষেপও কষ্টকর হয়। পা টেনে টেনে চলতে কষ্ট হয়। খাট ও চেয়ার থেকে ওঠাবসা, প্রতিটি কাজই যেন দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। শরীরের যে-কোনো অংশের পেশিগুলি অনড় বা স্টিফ হয়ে যাওয়ার ফলে যন্ত্রণা শুরু হয়। পেশি সঞ্চালন ক্ষমতার অভাবে দৈনন্দিন জীবনযাপন ব্যাহত হয়। মেরুদÐ সোজা রাখার অক্ষমতায় হাঁটার সময় ঝুঁকে পড়া, ব্যালান্স-এর অভাবে পড়ে যাওয়া- এসবই পারকিনসন্‌স রোগীর লক্ষণ। স্বয়ংক্রিয় অর্থাৎ অটোম্যাটিক মুভমেন্টগুলিও বাধা পায়। চোখের পলক ফেলা, হাসি, হাঁটার সময় দুই হাতের দুলুনি, এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া লোপ পেতে থাকে। কথা বলার সমস্যা শুরু হলে দেখা যায়- রোগী কখনও নীচু স্বরে জড়িয়ে জড়িয়ে কথা বলছে। কখনও একসঙ্গে তাড়াতাড়ি করে কিছু বলার চেষ্টা করছে। কখনও কথা খুঁজছে।
আর একটি লক্ষণ হল, এক সুরে কথা বলে যাচ্ছে। কণ্ঠস্বরের কোনো ওঠা পড়া নেই। ভাবভঙ্গির পার্থক্য নেই। পার্কিনসনস-এর ফলে ক্রমশ আরও যেসব জটিলতা দেখা দেয়, তাঁর জন্যে কিছু চিকিৎসা আছে। প্রথমত, ভুলে যাওয়া এবং চিন্তাশক্তির অবনতি। এ জটিলতা বাড়ে রোগের শেষ পর্যায়ে কিন্তু ওষুধের সাহায্যে বিস্মৃতি রোগ সারানো যায় না। এ ক্ষেত্রে ক্যানিটিভ থেরাপিও বিশেষ কাজ করে না। দ্বিতীয় উপসর্গ- ডিপ্রেসন, ভয়, অতিরিক্ত উদ্বেগ, ঘনঘন মনের অবস্থার পরিবর্তন এবং সক্রিয়তার অভাব। এই উপসর্গগুলো মনোরোগের চিকিৎসক উপযুক্ত ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। রোগী ডিপ্রেশনমুক্ত থাকলে অন্যান্য মানসিক অসুস্থতারও চিকিৎসা আছে।
এ রোগ ধীরে ধীরে আরও সমস্যার সৃষ্টি করে। যেমন খাবার গলায় আটকে যায়। কারণ সেখানেরও পেশি দুর্বল হতে থাকে। এমনকি, মুখের ভিতর লালা জমে ঠোঁটের বাইরে চলে আসে। অনিদ্রা হচ্ছে পারকিনসনস-এর বড় সমস্যা। রাতে বারবার ঘুম ভেঙে যায়। ভোর থেকে জেগে উঠে। দিনের বেলায় ঘুম আসে। গাঢ় ঘুমও নয়, রাতে স্বপ্নাচ্ছন্ন হালকা ঘুম হওয়ার জন্যে শরীর ও মন ক্লান্ত থাকে। তবে ডাক্তার ঘুমের ওষুধ দিয়ে রোগীকে বিশ্রাম দিতে পারেন। অন্যান্য উপসর্গ হচ্ছে- বøাডের কর্মক্ষমতা কমতে থাকার ফলে প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণের অসুবিধা এবং প্রস্রাবের সময় কষ্ট হয়। রোগীর কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। কারণ, পরিপাক যন্ত্রের অক্ষমতা।
এবার চিকিৎসা প্রসঙ্গে আসা যাক। এ রোগ তো সারিয়ে তোলা যায় না। কিন্তু ওষুধ দিয়ে উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণ করে হাঁটাচলার সমস্যা, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালনের বাধা এবং কম্পন সাময়িকভাবে প্রতিরোধ করা যায়। পার্কিনসনস-এর ওষুধগুলো হচ্ছে মস্তিষ্কের ‘ডোপামাইন’ নামে এক রাসায়নিকের বিকল্প। ডোপামাইন মস্তিষ্ক থেকে সংকেত পাঠায়। পার্কিনসন্‌স রোগীদের মস্তিষ্কে এর মাত্রা কমে যাওয়ার ফলে উপসর্গ শুরু হয়। সুতরাং ওষুধের মাধ্যমে (ডোপামাইনের বিকল্প) সেই অভাব পূরণ করে রোগীকে যথাসম্ভব সক্ষম রাখাই ডাক্তারের কাজ। তবে দীর্ঘদিন চিকিৎসা চলার পরে ওষুধ আর আগের মতো কাজ করে না। দুরারোগ্য ব্যাধির পরিণতি যা হয়। যখন প্রথম চিকিৎসা আরম্ভ হয়, ওষুধের মাত্রা অতিরিক্ত হয়ে গেলে, বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। অনিচ্ছাকৃত হাত-পা নাড়া বেড়ে যেতে পারে। তখন ডাক্তার ওষুধের মাত্রা এবং সময় বদলে নিয়ে, অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া বন্ধ করতে পারেন।।
ইউ এস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন” বছর দুয়েক আগে পার্কিনসনস-এর এই দুই ওষুধের সমন্বয়ে একটি মিশ্রণ অনুমোদন করেছে। এটি ‘জেলি’র মতো মিশ্রণ, যা রোগীর পেটে একটি টিউব- বসিয়ে সরাসরি খাদ্যানালির নি¤œাংশে বা স্মল ইনটেস্টাইনে পাঠানো হতে থাকে। পেটে ছোট্ট অপারেশন করে ওই টিউব বসানোর পরে একটানা সমান মাত্রায় দু’টি ওষুধের ইনফিউশন চলতে থাকে। ফলে কোনো মাত্রার হেরফের হয় না। সাংবাদিক-কলামিস্ট। ০৩.০১.২০২৪

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..