1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৩:৪৮ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

২০ নভেম্বর বিশ্ব শিশু অধিকার দিবস- শিশু মনে পুরস্কারের প্রভাব

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২১
  • ৫১৩ বার পঠিত

আফতাব চৌধুরী

সঠিক এবং যথার্থ কাজের জন্য পুরস্কার শুধু যে শিশুদের উৎফুল্ল করে তাই নয়, তাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতেও বিশেষভাবে তাড়না দিয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে পুরস্কৃত হওয়া বা প্রশংসা লাভ করা শিশুদের এক সহজাত প্রত্যাশা ও আকাঙক্ষা। তা শুধু শিশু কেন বলব, প্রতিটি মানুষও পুরস্কার এবং প্রশংসায় প্রভাবান্বিত হয়ে থাকবে। কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন হাজার লোকের বাহবার সামনে একটা কাপুরুষও অক্লেশে প্রাণ দেয়, ঘোর স্বার্থপরও হয় নিষ্কাম। সে যাই হোক এখানে শুধু শিশুদের কথাতেই আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকবে। স¤প্রতি সরকার ও বেসরকারী সংস্থা মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে যারা বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করছে তাদের প্রতি বছর বিভিন্ন রকম পুরস্কার দিয়ে হাজারো হাজারো বিদ্যার্থীকে সামনে এগিয়ে যাবার প্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে। প্রান্তীয় শিশু বিদ্যার্থীদের মাঝে এ জাতীয় স্বীকৃতি অভিনন্দন ও পুরস্কার বিশেষ উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে। খুশির আবহাওয়ায় তারা যেন ঝলকেও ওঠেছে। আগামী পরীক্ষাগুলোতে তাদের মধ্যে আরও নিষ্ঠা সহকারে পড়াশোনা করার জাগ্রত বাসনার উন্মেষ হচ্ছে। তাদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করেও তুলেছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে বিদ্যার্থীদের মধ্যে আগ্রহ ও প্রতিযোগিতার মনোভাব দেখা যাচ্ছে। এ প্রতিযোগিতায় সামিল হয়ে উন্নততর ফলাফলের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। লক্ষ্য করা গেছে, এ উৎসাহ সৃষ্টিকারী পুরস্কার প্রদান চালু হওয়ার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকসহ প্রায় সকল পরীক্ষার ফলাফলে বিস্তর পরিবর্তনও এসেছে। এ আশার বাতাবরণ সৃষ্টির জন্য সরকার বেসরকারি সংস্থা নিশ্চয়ই ধন্যবাদার্হ। এখানে একটা ধারণা স্পষ্ট করা প্রয়োজন। পুরস্কার বা রিওয়ার্ড, প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী শুধুমাত্র পারিতোষিক এবং মেরিট সাটিফিকেট প্রদানই বোঝায় শিক্ষাক্ষেত্রে এর পরিধি বহু বিস্তৃত। বস্তুত বিদ্যার্থীর প্রত্যেকটি সফল ও উৎকৃষ্ট কাজের অথবা সৃজনশীল প্রচেষ্টার অমিত প্রশংসা ও অভিনন্দন, পুরস্কার পর্যায়ভুক্ত। এ প্রশংসা পুরস্কারধর্মীও বটে, শিশুদের আত্মবিকাশ, প্রগতি ও নৈতিক জীবন গঠনেরও সহায়ক। প্রশংসা যথাসময়ে যথা পাত্রে সুচিন্তিতভাবে প্রয়োগ করলে শিশুরা যে শুধু অনুপ্রাণিত হয় তাই নয়, তাদের মধ্যে তাদের অজান্তেই নৈতিক শিক্ষারও প্রসার ঘটে। যেহেতু এ নৈতিক শিক্ষা শিশুরা পরোক্ষভাবে স্বেচ্ছায় গ্রহণ করে থাকে, তাই পরবর্তীকালে তা তাদের মধ্যে দৃঢ়ভাবে বদ্ধমূল হয়ে যায়। নৈতিক মূলূবোধ জাগাতে ও পড়াশোনায় এগিয়ে নিতে প্রশংসার কতটুকু কার্যকরী ভূমিকা শিশুদের জীবনে, বর্তমান আলোচনায় তা পরিস্ফুট করার চেষ্টা থাকবে । তথাকথিত পুরস্কার বা রিওয়ার্ড ছাড়াও শুধু প্রশংসা জ্ঞাপক মৌখিক বা লিখিত মন্তব্য শিশুমনে সে ঢিলপড়া জলোচ্ছ¡াসের মতো আনন্দোচ্ছ¡াস সৃষ্টি করে থাকে সেটা হয়তো মা-বাবা বা অভিভাবক অনেকেই লক্ষ্য করে থাকবেন। দৈনন্দিন ক্লাসওয়ার্ক অথবা হোমটাস্কের উপর শিক্ষক হয়তো ‘একসেলেন্ট’ মন্তব্যটি লিখে দিলেন দেখা গেছে শিশুটি বাড়িতে এসে মা-বাবাকে ডেকে উচ্ছ¡সিত হয়ে বলছে-স্কুলে আজ আমি ‘একসেলেন্ট’ পেয়েছি। প্রশংসা উদ্ভূত এই জাতীয় অনুপ্রেরনা যে কোনও প্রদত্ত পুরস্কার থেকে কোনও অংশেই শিশুমনে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। দেখা গেছে মা-বাবার প্রশংসা বা উপহার থেকে স্কুলে শিক্ষক- শিক্ষিকাদের প্রশংসা ও পুরস্কার শিশুর মনকে অধিকতর উৎফুল্ল ও উদ্ধুদ্ধ করে থাকে। অনুরূপভাবে শিশুর যে কোনও সৃজনশীল কাজ বা প্রচেষ্টা এভাবে প্রশংসিত হলে প্রশংসা প্রাপক শিশুটি বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত হয় এবং তার মনন ও সৃজনশীলতা বিকশিত হতে থাকে। এরূপ প্রশংসা বা পুরস্কার শুধু যে শিশুদের বিদ্যার্জনে উৎসাহিত করে তাকে তা নয়, প্রকৃতপক্ষে নৈতিক মূল্যবোধও তাদের মনে মুদ্রিত হয়ে যায়। নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, বিনয়ী আচরণ বাধ্যতা ও সততার জন্য যদি শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের ক্রমাগত বাহবা দিতে থাকেন এবং স্কুলপ্রধানও মাঝেমধ্যে ক্লাসে এসে শিশুদের এই গুণপনার জন্য উচ্ছ¡সিত প্রশংসা করে অনুপ্রাণিত করেন, এ নৈতিক গুণগুলো তাদের আত্মস্থ হয়ে পড়ে যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনকে সুনিয়ন্ত্রিত করে থাকে। এ তো গেল প্রশংসার অন্তর্নিহিত প্রেরণাশক্তি। বিদ্যালয়ে প্রশংসাপত্র সহ কিছু কিছু পুরস্কার শিশুদের জীবনে আমূল পরিবর্তন এনে দেয়। প্রতিটি ক্লাসে যদি সেরা পোশাক পরিহিত ছেলে ও মেয়েকে পুরস্কৃত করা হয়, তখন শিশুদের মধ্যে পরিধেয় পোশাক পরিচ্ছন্নতা যে স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য অপরিহার্য সে জ্ঞান বিদ্যালয়ই শিশুদের মধ্যে সঞ্চারিত করতে সমর্থ। প্রতিটি ক্লাসে পর্যায়ক্রমে একাধিক মনিটার নিযুক্তি দিয়ে সেরা মনিটার মনোনীত করে পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা থাকলে কিছু সংখ্যক শিশু ছোটবেলা থেকেই নেতৃত্ব দেবার ক্ষমতালাভে সমর্থ হয়। বিদ্যালয়ে বিতর্ক পটু ও উৎকৃষ্ট তাৎক্ষণিক বক্তৃতাকরীদের পুরস্কার দিয়ে উৎসাহিত করলে ভবিষ্যতে তাদের মধ্য থেকেই উৎকৃষ্ট বক্তা হবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। কবি আবুল ফজলের পিতা প্রতিদিন টেবিলের ওপর দাঁড়িয়ে বাড়ির সবার সামনে বলার অভ্যাস করাতেন। এভাবে প্রাথমিকভাবে বক্তৃতা অনুশীলনে অভ্যস্থ হয়ে পরবর্তীকালে স্কুল থেকে কলেজে ও কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন উপলক্ষে বক্তৃতার জন্য প্রশংসা ও পুরস্কার লাভ করে যে জীবনে অসাধারণ বাগ্মীতার পরিচয় দিয়েছিলেন, যারা আবুল ফজলের জীবনী পরিক্রমা করেছেন তাদের জানা। শিশুদের শারীরিক ও নৈতিক জীবন গঠনে খেলাধূলার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

Ò what I know most surely about morality
and the duty of man, I owe to sport.Ó

কিন্তু আজকাল মা-বাবা বা বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষাকার কাছে খেলাধুলা তেমন একটা গুরুত্ব পাচ্ছে না। মা-বাবা উচ্চাশা পূরণের জন্য শিশুদের তাঁরা খেলাধূলাতে ততটা উৎসাহ দিচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে খেলাধূলা, পড়াশোনা পরিপূরক। বিদ্যালয়ে-বিদ্যালয়ে ক্লাসে ক্লাসে খেলার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত করে শিশুদের যোগ্যতার প্রশংসা ও পুরস্কার প্রদান করে তাদের অনুপ্রাণিত করলে তাদের মধ্য থেকে কালে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের খেলোয়াড় বের হয়ে আসার সম্ভাবনা থাকে। প্রশংসা ও বাহবার খেলোয়াড়দের যে উজ্জীবিত করে তার দেখা মেলে মাঠে হাজারো হাজারো দর্শকের উৎসাহব্যঞ্জক হর্ষধ্বনিতে। প্রকৃতপক্ষে প্রশংসা ও অভিনন্দন প্রাপ্তিই প্রকৃত পুরস্কার। শুনুন Abraham Cowley কী বলেছেন।

ÒNothing so soon the drooping spirit on raise
As praises from the man whom all man praiseÓ

পুরস্কার, প্রশংসা নির্ভর। কেননা প্রতিটি পুরস্কার নিরূপিত হয় সুসম্পন্ন কাজের প্রশংসা থেকেই। আত্মতৃপ্তিকর স্তাবকদের তোষামোদ ইংরেজীতে যাকে বলে ফ্লাটারিও এক জাতীয় প্রশংসা, কিন্তু সেটা হচ্ছে প্রশংসার অপচার। এ জাতীয় প্রশংসা আত্মতৃপ্তিকর অনুচিত স্তুতি যা অনভিপ্রেত। তাই যে বাহবা ব্যক্তিকে শাসনে এগিয়ে যেতে প্রণোদিত করে সেটাই শুধু প্রশংসা বাচ্য। এভাবেই বিদ্যার্থীদের শিক্ষার প্রগতির সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধও পরোক্ষভাবে জেগে ওঠবে তা না হলে বর্তমান বিদ্যালয় প্রেক্ষাপটে বিদ্যার্থীদের মধ্যে সময় সময় যে দুর্বিনীত আচরণ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে সেটাকে দমানো কষ্টকর হবে এবং শিক্ষকতাও কঠিনতর হয়ে দাঁড়াবে।

সাংবাদিক-কলামিস্ট । ১৮.১১.২০২১

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..