বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৬:১৮ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে শুনানি শুরু হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এ অভিযোগের শুনানি আরও আগে শুরুর কথা থাকলেও মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানের কারণে তা জটিল হয়ে ওঠে।
২০১৭ সালে দেশটিতে সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের শিকার ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পাড়ি জমায়। এরপর গণহত্যার অভিযোগে ওআইআসির সহায়তায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অভিযোগ দায়ের করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ চালানোর প্রমাণ পায় জাতিসংঘও। এসব অভিযোগে সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংসহ দেশটির সেনাবাহিনীর ৫ জেনারেলকে অভিযুক্ত করে সংস্থাটি।
এদিকে এর আগে ২০১৯ সালে হেগের আদালতে ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চি মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করলেও এবার তার জায়গায় অন্য প্রতিনিধি নিয়োগ করেছে জান্তা সরকার।
গত ১৯ জানুয়ারি আইসিজে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের পিস প্যালেসে ২১, ২৩, ২৫ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি এই শুনানির তারিখ রাখা হয়েছে।
মিয়ানমারে গত বছর সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয় অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন সরকার। এরপর তার অনুসারীরা একটি ছায়া সরকার গঠন করে, যা প্রবাসে থেকে কাজ করছে।
গত ২ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের খবরে বলা হয়, রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মামলা বিচারের এখতিয়ার নিয়ে অং সান সু চির দলের নেতৃত্বে গঠিত মিয়ানমারের ছায়া সরকার তাদের আপত্তি প্রত্যাহার করেছে।
আইসিজের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমান কভিড-১৯ মহামারীর পরিপ্রেক্ষিতে হাইব্রিড ফর্মেটে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। আদালতের কিছু সদস্য গ্রেট হল অব জাস্টিসে উপস্থিত থেকে এবং বাকিরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। মামলার দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা সরাসরি অথবা ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করবেন। এ ছাড়া কূটনৈতিক কোর, গণমাধ্যম কর্মী ও জনসাধারণ আদালতের ওয়েবসাইট ও ইউএন ওয়েব টিভির সরাসরি ওয়েব কাস্টের মাধ্যমে এই শুনানি দেখতে পারবেন।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিপীড়নের শিকার হয়ে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। মিয়ানমারে সামরিক দমন-পীড়নের ফলে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক রোহিঙ্গা প্রবেশ করে। জাতিসংঘ যাকে ‘গণহত্যার অভিপ্রায়’ বলে অভিহিত করেছে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা বন্ধ বা দোষীদের শাস্তি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় গাম্বিয়া ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এ মামলা করে। মামলায় প্রাথমিক শুনানির পর আইসিজে তাদের দাবিগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী বলে মনে করে এবং রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মিয়ানমারকে নির্দেশ দেয়। ২০২০ সালের ২৩ অক্টোবর গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলায় ৫০০ পৃষ্ঠারও বেশি একটি স্মারক দাখিল করে। যেখানে দেখানো হয় কীভাবে তৎকালীন মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছে।
এর আগে ওই বছর জানুয়ারিতে অভিযোগকারী গাম্বিয়া এবং অভিযুক্ত মিয়ানমারকে তাদের আইনি যুক্তি দাখিলের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছিল আইসিজে। গাম্বিয়াকে ওই বছরের ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে তাদের অভিযোগের বিষয়ে আইনি যুক্তিগুলো উপস্থাপন করতে বলা হয়েছিল। অন্যদিকে অভিযোগের মুখে থাকা মিয়ানমারকে তাদের নির্দোষিতার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারীর প্রেক্ষাপটে এ মামলার কার্যক্রমে ভাটা পড়ে।
ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত এক দেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের অভিযোগ তুলতে পারে। এ আদালত কোনো ব্যক্তিবিশেষকে সাজা দিতে পারে না। আইসিজেতে মামলা হলে আদালতের সিদ্ধান্ত মানার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে সদস্য দেশগুলোর ওপর। আর সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার কোনো সুযোগ নেই।