বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১০:০৮ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক রিপোট:রাজধানীসহ আশেপাশের এলাকায় আজ ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। শুক্রবার (৫ মে) সকাল ৫.৫৭ মিনিটে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার সিটি সেন্টার থেকে ৪২ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে দোহারে।
প্রাথমিক কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর না পাওয়া গেলেও ভূমিকম্পে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শহরের তালিকায় রয়েছে ঢাকার নাম। ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরটির এত কাছে এই বড় মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার ইতিহাস খুবই কম।
শুক্রবার (৫ মে) সকালে ৬টা ১২ মিনিটে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইডি গবেষক এবং আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ এ বিষয়ে তার ফেসবুকে একটি পোস্টে বলেন, ঢাকার এত কাছে এত সক্রিয় ভূ-চ্যুতি রয়েছে সেটাও খুবই চিন্তার বিষয়। ঢাকায় বিল্ডিং এর ক্ষয়-ক্ষতির আশংকা করা যাচ্ছে।
এর আগে আর্থ অবজারভেটরি সেন্টারের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মা- এ তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। ফলে এখানে যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে।
এদিকে রাজধানীর পুরান ঢাকা ঘুরে দেখা যায়, অল্প জায়গায় অনেক মানুষের বসবাস। ভবনগুলো দাঁড়িয়ে আছে একটি আরেকটির গা ঘেঁষে। যে ভবনটি তিনতলা করার কথা সেটি করা হয়েছে চার-পাঁচতলা। দুর্বল অবকাঠামো এবং পুরনো জীর্ণশীর্ণ। একেকটি ফ্ল্যাটে থাকে ১০-১৫ জন। বাণিজ্যিক কেন্দ্র হওয়ায় সেখানকার অলিগলিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তাই দিনরাত মানুষের ভিড় লেগে থাকে। রাজধানীতে ভূমিকম্প আঘাত হানলে ভবনগুলো থেকে তাত্ক্ষণাৎ সরে যাওয়ার ব্যবস্থাটুকুও নেই। রাস্তাগুলো সরু হওয়ায় সেখানে উদ্ধারকাজ করাও কঠিন বলছে ফায়ার সার্ভিস।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ঢাকার ভবনের যে কোয়ালিটি, সেটি অনেক ক্ষেত্রেই দুর্বল। অনেক এলাকায়ই বিশেষ করে গত ১০ বছরে, অল্প কিছু মাটি ভরাট করে অনেক বড় বড় ইমারত হচ্ছে। রাজউকে যখন অনুমতির জন্য আবেদন জমা দিচ্ছে, তখন আর্কিটেকচারাল ড্রয়িং জমা দিচ্ছে, কিন্তু আর্কিটেকচারালি ডিজাইনগুলো কীভাবে হবে, সেটি উল্লেখ করা হয় না। নীতিমালাতেই নেই। কিন্তু ভবনের নিরাপত্তার জন্য এটি জরুরি।
সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (সিডিএমপি) ও জাইকার ২০০৯ সালে করা এক যৌথ জরিপে জানা গেছে, ঢাকায় সাত বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে শহরের ৭২ হাজার ভবন ভেঙে পড়বে এবং ১ লাখ ৩৫ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তৈরি হবে সাত কোটি টন কংক্রিটের স্তূপ।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা শহরের ৭৬ শতাংশ রাস্তা সরু হওয়ায় ভূমিকম্প হলে উদ্ধার তত্পরতা চালানো কঠিন হয়ে যাবে। এছাড়া ৬০ শতাংশ ভবন মূল নকশা পরিবর্তন করে গড়ে ওঠায় বড় ধরনের ভূমিকম্পের সময় এ অপরিকল্পিত ভবনগুলো সঙ্গে সঙ্গেই ধসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইনে বিস্ফোরণ ঘটে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভূমিকম্প অসহনশীল ভবনগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সংস্কার বা ধ্বংস করার পরিকল্পনা করা হলেও তার কোনো বাস্তবায়ন নেই।
নেপালে ২০১৫ সালে উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পের প্রভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল ‘ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার’ প্রতিষ্ঠার। সেই সিদ্ধান্তও এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। এছাড়া ওই বৈঠকে ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এনডিএমআইএস) নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরির সিদ্ধান্তও হয়েছিল। এটিও আলোর মুখ দেখেনি।