মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৩:৪৪ পূর্বাহ্ন
নিয়মিত কবিতা আর ছোট গল্প লিখতেন। লিখার মাঝে ছিল শৈল্পিক মাধুর্যতা। সাহিত্যাঙ্গণে ওমর ওয়াসী নামেই পরিচিত। কেউ ডাকেন ফারুক ভাই নামে, আবার কেউ ডাকেন উমর ফারুক নামে। তিনি সাপ্তাহিক মার্সিক ও বর্তমান দৈনিক মৌমাছি কন্ঠ পত্রিকার চাঁ মামার হাট সাহিত্য পাতার একজন ডেস্ক ইনচার্জ ছিলেন। তার হাতে অনেত সাহিত্য কমী ও সাংবাদিক আজ বিভিন্ন স্থানে কর্মরত রয়েছে। আমি ডাকতাম নান্নু ভাই নামে।
শহরের চৌমুহনা এলাকার পাঁচতলা অট্রালিকার চতুর্থতলায় ভাড়া থাকতেন। সপ্ন ছিল সংসার গড়ার। তবুও নিঃসঙ্গ জীবন কেটেছে। পরিবারে খোঁজ নেয়ার মতো কোন স্বজন নেই। যার কারণে ছিলেন বেশ হতাশাগ্রস্ত।
মৌলভীবাজারের একসময়ের কবি ফররুখ কেজি এন্ড মডেল হাই স্কুল, সিঙ্কাপন আপ্তাব উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও সর্বশেষ জামেয়া ইসলামীয়া নামের প্রতিষ্ঠানেও করেছেন শিক্ষকতা। শ্রেণী কক্ষের শিক্ষার্থীদের আপন করে নেয়ার দারুণ ক্ষমতা ছিলো তাঁর।
আয়-রোজগার বলতে টিউশনি আর নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া সামান্য বেতনই একমাত্র অবলম্বন। শান্ত আর গম্ভীর প্রকৃতির নিখাদ সাদামনের এই মানুষটির সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিলো অনন্য উচ্চতার। যতটুকু জানি, ভবিষ্যত নিয়ে তাঁর বড় কোন সপ্ন ছিলনা। কোনরকম জীবন চললেই হলো।
তাঁর সোয়ার রুমটি ছিলে সাহিত্যের সমৃদ্ধ সব বই-পুস্তকে ঠাঁসা। যখনি রুমে যেতাম তখনি দেখতাম বইয়ের মধ্যে চোখ বুলিয়ে আছেন। ডাক দিতেই হুঁশ ফিরতো। কতদিন তাঁর হাতের দারুচিনি আর এলাচ মিশ্রিত রং চা খেয়েছি তাঁর সঠিক হিসাব বলা মুশকিল।
আজ দুপুরে ফেসবুক খুলতে দেখি ফারুক ভাই এর মৃত্যুর খবর। জানাযা ও দাফন সম্পন্ন হয়ে গেছে। মৌলভীবাজার শহর থেকে তাঁর কয়েকজন সহকর্মী দিয়ে এসেছেন শেষ বিদায়। এমন খবর জেনে
বড় হোটচ খেয়েছি। আসমান ভেঙ্গে পড়ার মতো। ফোন করে ফারুক ভাই এর সহকর্মী এক শিক্ষকের কাছ থেকে জানতে পারলাম সামান্য হোঁচট খেয়ে পায়ে ইনফেকশন হয়েছিল। ডায়াবেটিস থাকায় দ্রুত বেড়ে গিয়ে পায়ের অবস্থার অবনতি হলে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়। পরে নিয়ে যাওয়া হয় সিলেট উসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে পা’টি কেটে ফেলেন চিকিৎসকরা। এর কিছুদিন পরই হবিগঞ্জের বাহুবলের নিজ বাড়িতে মারা যান তিনি।
একসাথে চলার কত স্মৃতি ফারুক ভাই এর সাথে। মানুষের জীবন যে কতো দ্রুত ফুরিয়ে যায় তা কল্পনা করাও কঠিন। একটা জলজ্যান্ত মানুষ। হটাৎ করে সব এলোমেলো। সমাপ্তি দুনিয়ার জীবনের।
ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন…..
আল্লাহ যেন ফারুক ভাই কে দুনিয়ার জীবনের ভুল গুলো ক্ষমা করে জান্নাত নসিব করেন।
লেখা: আব্দুল কাইয়ুম