সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩, ০৭:৪৩ পূর্বাহ্ন
মিজানুর রহমান: মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের কুচাইটল এলাকায় বাচ্চা হাতিকে নিষ্ঠুর ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় মৌলভীবাজার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মুহম্মদ আলী আহসান বাচ্চা হাতির ওপর শারীরিক নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইউটিউভ দেখে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। প্রশিক্ষণের নামে হাতির উপর চালিত অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণ অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ প্রদান করলেন মৌলভীবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জাস্টিস অব্ দি পিস (১৮৯৮ এর ২৫ ধারার ক্ষমতা বলে) মৌলভীবাজার জেলার জাস্টিস অব্ দি পিস মুহম্মদ আলী আহসান অত্র আদেশ জারী করেন। সোমবার ৭ ফেব্র“য়ারী বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এবং প্রাণীকল্যাণ আইন, ২০১৯ অনুযায়ী হাতির প্রতি নিষ্ঠুর নির্যাতন নিরসনে জুড়ী থানা অফিসার ইনচার্জ ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, মৌলভীবাজার এর নিষ্ক্রিয়তা বেআইনী গণ্যেও কেন তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না সে মর্মে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সে মর্মে আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। উলেখিত তারিখের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন ও কারণ দর্শানোর জবাব দাখিলের জন্য ধার্য করা হয়। উভয় তদন্তকারী কর্মকর্তা তাদের প্রতিবেদনে হাতি নির্যাতনের উক্ত ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের নাম-ঠিকানা, স্বাধীনতার পর হতে এ পর্যন্ত প্রশিক্ষণের নামে নির্দয় নির্যাতনে ক”টি হাতি মারা গিয়েছে তার সংখ্যা, হাতি কিভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে তন্মধ্যে ক”টি পালিত ও ক”টি বন হতে সংগৃহীত মৌলভীবাজার জেলায় হাতি লালন পালন ও প্রশিক্ষণে কয়জনকে লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে এবং হাতির প্রতি উক্ত নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধের জন্য আইনানুযায়ী কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বিস্তারিত আদালতকে অবগত করতে বলা হয়েছে। উলেখ্য ‘হাদানি’ নামক প্রাচীন পদ্ধতিতে বন্য হাতিকে উক্ত প্রশিক্ষন কেন্দ্রে পোষ মানানো হয়। হাতিকে শিশু অবস্থায় দড়ি দিয়ে বেঁধে গাছের খুঁটির সাথে আবদ্ধ করা হয়, শিশু হাতির মাকে দূরে রাখা হয়, নির্দয় ভাবে শিশু হাতিকে শারীরিক নির্যাতন করা হয় এবং যথেষ্ট খাদ্য প্রদান করা হয় না। এভাবে ২ মাস প্রশিক্ষণ দেয়ার পর সার্কাসে বিভিন্ন কসরৎ এবং গাছ পালা পরিবহনের প্রশিক্ষন দেয়া হয়।
মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে পাহাড়ের গহীনে চলছে পোষ মানানোর কাজে চার বছরের হাতি শাবককে বশে আনতে পেটানো হচ্ছে ইচ্ছে মত। কখনো কখনো লোহা দিয়ে তৈরি কুকু ব্যবহার করা হচ্ছে নির্যাতনের কাজে। মা হাতিটির নাম নুরজাহান, তার দু’টি বাচ্চা। চার ও পাঁচ বছর বয়সী এই হাতি দু’টিকে ব্যবসার কাজে নামাতে চান মালিক। প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান নেই এমন একদল লোককে আনা হয়েছে প্রশিক্ষণের নামে। স্থানীয় ভাবে এ প্রশিক্ষণকে বলা হয় ‘হাদানি’। এ সময় বাচ্চা হাতিটিকে মায়ের কাছ থেকে আলাদা করে বেঁধে রাখা হয়। দুই থেকে তিন মাস ব্যাপী চলা এ প্রশিক্ষণের সময় নানা কলাকৌশল শেখাতে মূল অস্ত্রই হল নির্মম শারীরিক নির্যাতন। এই সময় হাতিটি শৃঙ্খলমুক্ত হতে জোরাজুরি করে, যন্ত্রণায় শুঁড় উপরে তুলে কাতরায়। ফাঁকে ফাঁকে, খড়ের সঙ্গে মিষ্টান্ন মিশিয়ে হাতিটিকে খাওয়ানো হয়। এরপর কাঠের গুঁড়ি থেকে ছাড়িয়ে দড়ি দিয়ে টেনে টেনে নানা জায়গায় ঘোড়ানো হয়। তারপর আবার বেঁধে রাখা হয় শাবকটিকে। এই সময় মাটিতেও লুটিয়ে পড়ে হাতি শাবক। কিন্তু প্রশিক্ষণ নামে এই নির্যাতন থামে না। সাতজন প্রশিক্ষকের হাতে থাকা সাতটি কুকু, যা দিয়ে চলে অবিরাম খোঁচা”। উক্ত পদ্ধতির মাধ্যমে প্রশিক্ষণাধীন অর্ধেক হাতি মারা হয়। হাতি পোষ মানাবার জন্য দেশে প্রচলিত আইন বিদ্যমান থাকা সত্তে¡ও উক্ত বেআইনী ও প্রাচীন পদ্ধতিতে হাতিকে পোষ মানানো হয় এবং হাতিকে নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকারে পরিণত করা হয়। যার ফলে অনেক হাতি শিশু অবস্থায় মৃত্যু মুখে পতিত হয়। উক্ত যন্ত্রণাদায়ক পদ্ধতির মাধ্যমে মানুষের বশ্যতা শিকারে বাধ্য করা হয়। যার ফলে অনেক হাতি মানষিক সমস্যাগ্রস্থ হয়ে যায়। যাকে প্রচলিত ভাষায় পাগলা হাতি বলা হয়ে থাকে। উক্ত পাগলা হাতির আক্রমণে প্রায় সময় মানুষ মৃত্যু মুখে পতিত হয়।