1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

অতিথি পাখি ও পরিবেশ

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ৩৮২ বার পঠিত

আফতাব চৌধুরী: পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দ্রæত বনায়ন বাস্তবায়নে পাখির ভূমিকা অনস্বীকার্য। ঋতুচক্রের পরিবর্তনের ফলে উত্তর গোলার্ধের শীত প্রধান অঞ্চলে যখন প্রচন্ড বরফ পড়ে তখনই বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরা দক্ষিণগোলার্ধের অপেক্ষাকৃত উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলে ছুটে আসতে থাকে। তাই আমরা দেখতে পাই প্রতিবছরই হেমন্তের বিদায় লগ্নে যখন শিশির ঝরা শুরু হয় মৌসুমী হাওয়ায় শুনা যায় শীতের আগমনী ধক্ষনি, তখনই সুদুর সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে পালে পালে ডানা ঝাপটিয়ে নানা ধরনের পাখি আমাদের দেশে ছুটে আসে। একইভাবে শীত প্রধান অঞ্চল সমূহে আবার বরফ গলা শুরুহলে এসব পাখিরা নিজ নিজ দেশে ফিরে যায়। আমাদের দেশে এসব পাখি অতিথি পাখি নামে সমধিক পরিচিত। অতিথি পাখি আসতে শুরুকরলে আমাদের দেশের চরাঞ্চল, জলাভূমি, বিল-হাওর ইত্যাদি এদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। জলকেলিতে কিচির মিচির ছন্দে এরা তখন জলাভূমির পরিবেশকে মোহনীয় করে তোলে। বিশেষ করে সাগর তীরবর্তী বিভিন্ন চরাঞ্চলে ঘন সবুজ বন বনানীতে এসব অতিথি পাখি তাদের সাময়িক নিবাস গড়ে তোলে। আমাদের দেশের সাতক্ষীরা, খুলনা, সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাট এলাকার নদী বিধৌত অঞ্চলে এবং সিলেট, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহের বিভিন্ন হাওর ও বিলে শীতের মৌসুমে হাজার হাজার অচেনা পাখির মেলা বসে।
এসময় কিছু শিকারী এসব পাখি শিকারে তৎপর হয়ে উঠে। তারা বিভিন্নভাবে জাল ও ফাঁদ পেতে রাখে পাখি শিকারের উদ্দেশ্যে। তারা ফাঁদে ফেলে এসব পাখি বন্দী করে অত্যন্ত নির্মমভাবে শহরে, বাজারে নিয়ে চড়া দামে বিক্রি করে থাকে।
আমরা জানি আমাদের দেশে পাখি শিকারীদের জন্য কড়া আইন বলবৎ রয়েছে কিন্তু আইন থাকলে কি হয়, তার প্রয়োগ নেই বললেই চলে। দেখা যায় আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করে নিষিদ্ধ অভয়ারণ্যে পাখি শিকারীরা অবাধ বিচরণ করে থাকে। তারা বিভিন্ন জাতের হাঁস ও অন্যান্য প্রজাতির পাখি নির্বিচারে নিধন করে থাকে। এসব শিকারী জ্যান্ত পাখিদের বন্দী করে খাঁচায় পুরে এদের মুক্ত জীবনকে চিরদিনের মতো স্তব্দ করে দেয়। ভাষাহীন এসব জীবের তখন আর কিছু করার থাকে না। ধুকে ধুকে শুধু মরতে থাকে।
পাখি কিন্তু আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার অন্যতম সহায়ক এ কথাটি নানা কারণে স্বীকৃত। প্রধানতঃ পাখির মল ত্যাগের ফলে চারা উৎপাদনের মাধ্যমে দ্রæত বনায়ন সম্ভব হয়ে উঠে। এদিকে পাখির বিষ্টা ভূমির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়। অন্যদিকে বসতি বিস্তার, ফুল থেকে ফল উৎপাদনে পাখির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব ছাড়াও পাখিরা ফলমূল, পোকা-মাকড়শা এবং কীটপতঙ্গ খেয়ে জীবন ধারণ করে থাকে। ফলে জমির ফসলকে কীটপতঙ্গের হাত থেকে রক্ষা করতে পাখি এক অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে।
বর্তমানে আমাদের দেশে গাছপালা নিধনসহ বনজঙ্গল উজাড় যেন দিন দিন এক নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ফলে অসহায় এসব পাখি তাদের সঠিক আবাসস্থল হারিয়ে ফেলতে বসেছে। অন্যদিকে ক্ষেত খামারে প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক ঔষধ প্রয়োগ করার ফলে অমূল্য সম্পদ কীটপতঙ্গ ধক্ষংস হয়ে যাচ্ছে। এতে করে দিন দিন পাখির সংখ্যা হ্রাস পেতে শুরুকরেছে। বন বনানীর ছায়ায় ঘেরা পাখির গুঞ্জন ও কূজন থেকে আমরা যেন ক্রমাগত অনেক দূরে সরে যাচ্ছি। যান্ত্রিকতা ও নগর সভ্যতার জটিলতা এখন গ্রাস করতে চলেছে আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রাকে। কাজেই এসব পক্ষীকূল একদিন আমাদের পরিবেশ রক্ষায় অপরিহার্য ছিল, এখন পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।
আসলে সত্যি বলতে কি আমাদের পরিবেশের প্রধান অংশ হল পাখি। এসব পাখি ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ কীটপতঙ্গ ময়লা ও আবর্জনা থেকে পোকামাকড় খেয়ে পরিবেশকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করে থাকে। পাখি নিধন এভাবে অব্যাহত থাকলে কীট পতঙ্গ ও পোকা মাকড়ের বংশ বৃদ্ধি পেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য আরো বিনষ্ট হবে বৈকি! তাই কবি জীবনানন্দের ভাষায় বলতে হয়, ‘পাখিগুলো কিছুতে যেন আজিকার নয়’। এ নদী, খাল, বিল-হাওর যেন পাখি শূন্য না হয়। এরা প্রাচীণ, এরা বর্তমান এবং এরা ভবিষ্যৎ।
পাখিরা আমাদের অতিথি। অভ্যাগত অতিথির যথাশক্তি সম্মান করা প্রত্যেক নাগরিকের অবশ্য কর্তব্য। এটি হাদিসের কথা।
পাখিকূলের প্রতি আমাদের আরো সদয় ও সহানুভূতিশীল হতে হবে আর তাহলেই পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার হাত থেকে আমরা কিছুটা হলেও নিস্তার পেতে পারি। সাংবাদিক ও কলামিস্ট।সদস্য -বন ও পরিবেশ কমিটি সিলেট।
০৮.০২.২০২২

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..