1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

‘হাসপাতালে গেলেই ডাক্তারবাবু হাতে প্যারাসিটামল ধরিয়ে দেয়’

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০২২
  • ১৪০ বার পঠিত

স্টাফ রিপোর্টার :: প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে খুশি হলেও বাগান কতৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা নিয়ে তাদের অভিযোগ অনেক ।

বাগানে সপ্তাহে একদিন ডাক্তার আসেন। সেই একদিনও তাকে ঠিকমতো পাওয়া যায় না। একজন রোগীও ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখেন না। ইমার্জেন্সি কোনো কিছু হলেই একটু নজর দেন। তা নাহলে সেই প্যারাসিটামল দিয়েই চলে যান তিনি। অনেকসময় জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে বেকায়দায় পড়তে হয় আমাদের। শহরের ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। কিন্তু যে টাকা মজুরি পাই তা দিয়ে শহরের ডাক্তারের ভিজিটের টাকাও হয়না।

সম্প্রতি মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশজুড়ে আলোচনায় আসে দেশের অবহেলিত চা শ্রমিকরা। সর্বশেষ বাগান মালিকদের সাথে বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে চা শ্রমিকরা খুশি হলেও তাদের অভিযোগের শেষ নেই বাগান কতৃপক্ষ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন সেবাকর্ম নিয়ে।

বিশেষ করে বাগানে চিকিৎসা ক্ষেত্রে নানা অনিয়মের কথা প্রকাশ করেছেন চা শ্রমিকরা। যেকোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গেলে ডাক্তারবাবু প্যারাসিটামল, এলাট্রলের মতো সাধারণ ওষুধ দিয়েই দায় ছাড়েন বলে অভিযোগ চা শ্রমিকদের।

সোমবার (২৯ আগস্ট) মৌলভীবাজারের দেওরাছড়া চা বাগান ঘুরে চা শ্রমিকদের সাথে আলাপ করে এসব তথ্য জানা যায়। দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা বৃদ্ধিকরণে চা শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি খুশি হলেও তাদের অভিযোগ বাগান মালিক, ম্যানেজার, সর্দারদের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে। যতোটুকু সেবা আইনত তাদের পাওয়ার কথা সেটুকু খুব কম শ্রমিকই পান বলে জানান তারা।

যদিও দৈনিক মজুরির বাইরেও চা শ্রমিকদের আবাসন, চিকিৎসা, চা শ্রমিক সন্তানদের শিক্ষা খরচ, স্যানিটেশনসহ নানা সুবিধা নিয়মিত দেয়া হয় বলে বাগান মালিকরা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। কিন্তু চা শ্রমিকরা বলছেন উল্টো কথা। তাদের অভিযোগ মালিক পক্ষ থেকে প্রাপ্য এসব সুযোগ-সুবিধা সকল চা শ্রমিকদের পাবার কথা থাকলেও খুব কম শ্রমিকই এসব পেয়ে থাকেন।

দেওরাছড়া বাগানের একজন স্থায়ী চা শ্রমিক রঞ্জিত মানজারী। চা বাগানে চিকিৎসা সেবার দুর্দশার চিত্র তোলে ধরে তিনি বলেন- বাগানে আমাদের সর্বরোগের ওষুধ হয়ে গেছে প্যারাসিটামল, এলাট্রল ট্যাবলেট। যেকোনো রোগে ভোগে হাসপাতালে গেলে ডাক্তারবাবু প্যারাসিটামল নয়তো এলাট্রল হাতে ধরিয়ে দেয়। চা শ্রমিক রোগীর শরীরে ছুঁয়েও দেখেন না আসলে রোগ কী! যেকোনো কিছু হলেই প্যারাসিটামল দিয়ে দেন।

মি. রঞ্জিত বলেন- বাগানে সপ্তাহে একদিন ডাক্তার আসেন। সেই একদিনও তাকে ঠিকমতো পাওয়া যায় না। একজন রোগীও ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখেন না। ইমার্জেন্সি কোনো কিছু হলেই একটু নজর দেন। তা নাহলে সেই প্যারাসিটামল দিয়েই চলে যান তিনি। অনেকসময় জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে বেকায়দায় পড়তে হয় আমাদের। শহরের ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। কিন্তু যে টাকা মজুরি পাই তা দিয়ে শহরের ডাক্তারের ভিজিটের টাকাও হয়না। ফলে আমাদের দুঃখ আমাদেরকেই বুকে নিয়ে থাকতে হয়। এই দুঃখ, এই কষ্ট কেউ বুঝেনা। বুঝতে চায়ও না।

আছে আবাসনের দুর্ভোগ

অভিযোগ আছে বাগান কতৃপক্ষের চা শ্রমিকদের জন্য দেয়া আবাসন নিয়েও। টিনের চাল ফুটো হয়ে বৃষ্টি ঘরে প্রবেশ করে, বাগান ম্যানেজারকে একাধিকবার বললেও এসবের কোনো সুরাহা পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ সাধারণ চা শ্রমিকদের।

বেশ কয়েকজন চা শ্রমিকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, বাগান মালিক কতৃপক্ষ চা শ্রমিকদের ঘর দিলেও এরপরে ঘরের রক্ষণাবেক্ষণের বেলা গরিমসি করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চা শ্রমিক বলেন- বাগানের বাবুরা আমাকে ঘর দিয়েছিলো। বর্ষার মৌসুমে সেই ঘরের চাল নষ্ট হয়ে ঘরে পানি প্রবেশ করে। নিয়মানুযায়ী ঘরের চাল মালিক পক্ষের মেরামত করে দেবার কথা। টিনের চালের জন্য ম্যানেজারের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি আজ নয় কাল করে করে বছর কাটিয়ে দিয়েছেন, এখনো চাল মেরামত করতে পারিনি। বর্ষায় বউ-বাচ্চা, বাবা-মাসহ ঘরের মধ্যে থেকেও ভিজতে হয়। এভাবেই আমাদের দিনকাল কাটে।

এদিকে শনিবার (২৭ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে চা বাগান মালিকরা চা শ্রমিকদেরকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীও চা শ্রমিকদের দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছেন বাগান মালিকদেরকে।

বাগান মালিকরা বলছেন, বাগানের নিয়মানুযায়ী একজন চা শ্রমিকের যা যা প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা আছে তার সবই যথাযথভাবে দেয়া হয়। যদিও বাস্তবের চিত্র এর থেকে ভিন্ন।

নেই স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা

বাগান ঘুরে দেখা যায় চা বাগানের অধিকাংশ শ্রমিকের বাড়িতেই নেই স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা। অনেক জায়গায় শুধুমত্র প্লাস্টিকের বস্তা এবং বাঁশ, ইট-সুরকি দিয়ে কোনোরকমভাবে তৈরি করা হয়েছে শৌচালয়। অনিরাপদ পরিবেশ আর নানা অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়েই দিনাতিপাত করছেন সাধারণ চা শ্রমিকরা। এরপরও দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে ১৭০ টাকায় বৃদ্ধিকরণে খুশি তারা। বাগান মালিকদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকলেও মজুরি বৃদ্ধি করায় তারা ধন্যবাদ জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীকে।

প্রসঙ্গত, দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে ৯ আগস্ট আন্দোলনে নামেন মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানের শ্রমিকসহ দেশের ১৬৭ চা বাগানের শ্রমিকরা। দিনে দু’ঘণ্টা করে টানা চারদিন পালন করা হয় কর্মবিরতি। এরপর ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পুরোদমে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করেন চা শ্রমিকরা।

পরে ১৯ আগস্ট রাতে মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার বিষয়ে একটি চুক্তি হলেও সেটি প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যান শ্রমিকরা। কয়েক দফা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হলেও এ সমস্যার সমাধান হয়নি। মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে থাকা শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করতে থাকেন। অবশেষে তাদের মজুরি ১৭০ টাকা করা হলে কাজে ফেরেন তারা।

 

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..