শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৭:২৭ পূর্বাহ্ন
ক্রীড়া ডেস্ক : চলতি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত তিনটি ম্যাচের দুটিতেই জিতেছে ভারত ও বাংলাদেশ। দুই দলেরই হার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। তাই ভিন্ন এক সমীকরণ নিয়ে আজ শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামছে জয়ের ধারায় ফেরা টাইগাররা।
সুপার টুয়েলভে বাংলাদেশ সময় দুপুর দুইটায় অ্যাডিলেডে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে মাঠে নামবে এই দুই দল। সেমিফাইনালের টিকিট পেতে এই ম্যাচ জয়ের বিকল্প নেই টাইগারদের। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে শেষ ম্যাচ হেরে যাওয়ায় ভারতের জন্যও ম্যাচটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এমন সব কঠিন সমীকরণ মাথায় নিয়েই মাঠে নামবে দক্ষিণ এশিয়ার দল দুটি।
গতকাল ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে টাইগার অধিনায়ক জানান, ‘ভারত ফেভারিট দল, তারা এখানে বিশ্বকাপ জিততে এসেছে। আমরা ফেভারিট না, বিশ্বকাপ জিততেও আসিনি। আপনি পরিস্থিতি বুঝতে পারছেন। আমরা এটা ভালোভাবেই জানি, যদি ভারতকে হারাই সেটা হবে আপসেট, আমরা নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলে সেটাই করতে চাই’।
অপরদিকে, আজকের ম্যাচে বাংলাদেশকে ভালো প্রতিপক্ষ হিসেবেই দেখছে ভারতের কোচ রাহুল দ্রাবিড়। তিনি জানান, ‘বাংলাদেশের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে। তারা ভালো দল। টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে কেউই ফেভারিট নয়। ম্যাচে যারা ভালো খেলবে, তারাই জিতবে’।
অ্যাডিলেডে গতকাল মঙ্গলবার আলোচনার কেন্দ্রে থাকল দুটি বিষয়। প্রথমত, আবহাওয়া। দ্বিতীয়ত, সাকিব আল হাসানের মন্তব্য। গত পরশু বাংলাদেশ-ভারত দুই দলকেই অভ্যর্থনা জানিয়েছে অ্যাডিলেডের বৃষ্টিভেজা ঠান্ডা আবহাওয়া। পরশু টানা বৃষ্টি হলেও গতকাল বৃষ্টির ধরনে বেশ বৈচিত্র্য দেখা গেল। এই যায়, এই আসে। এই ঝকঝকে রোদ, তো এই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানাচ্ছে, বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে আজও। সেটিই যদি হয়, নিশ্চিতভাবে আজ দুই দলের চোখ থাকবে অ্যাডিলেডের আকাশে।
আকাশ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে যদি মাঠের লড়াইয়ে রাখা যায়, সেখানে পরিসংখ্যান-রেকর্ড এগিয়ে রাখবে ভারতকেই। দুই দলের ১১ দেখায় বাংলাদেশ হেরেছে ১০টিতেই। ২০১৯ সালের নভেম্বরে দিল্লিতে মুশফিকুর রহিমের দুর্দান্ত এক ইনিংসের সৌজন্যে বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে যে জয়টা পেয়েছিল, সেটিতে সাকিব আল হাসান ছিলেন না। বাংলাদেশ ওই জয়টা পেয়েছিল ঘোর দুঃসময়ে, ঠিক এর কদিন আগেই আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় পড়েন সাকিব।
গত তিন বছরে ভারতের বিপক্ষে আর কোনো টি-টোয়েন্টি খেলেনি বাংলাদেশ। লম্বা বিরতির পর যখন আজ আরেকটি লড়াইয়ের অপেক্ষা, সাকিব ভারতকেই পরিষ্কার ফেবারিট দেখছেন। শক্তিমত্তায় প্রতিপক্ষ যতই যোজন যোজন এগিয়ে থাকুক, একজন অধিনায়ক নিজেদের সহজেই ‘আন্ডারডগ’ হিসেবে তুলে ধরেন না। কিন্তু সাকিব মনে করেন, অ্যাডিলেডে ভারত কিংবা পাকিস্তানের মতো দলকে হারানো হবে একটা আপসেট বা অঘটন।
হারার আগে নিশ্চয়ই কোনো অধিনায়ক হারতে চান না। তাহলে সাকিব কেন আপসেটের কথা বলছেন? এটা কি শক্তিশালী প্রতিপক্ষের ওপর চাপ বাড়িয়ে নিজেদের নির্ভার রাখার কৌশল, নাকি নির্জলা বাস্তবতা হিসেবেই দুই দলের পার্থক্য অকপটে তুলে ধরা। সাকিবের এই মন্তব্যে অবাক ভারতীয় সাংবাদিকেরাও। সংবাদ সম্মেলন শেষে এক ভারতীয় সাংবাদিক বলছিলেন, ‘১৯৮৩ বিশ্বকাপেও কপিল দেব কখনো প্রতিপক্ষকে ফেবারিট বলেননি।’
ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ভারতকে পাঁচবার হারিয়েছে। টি-টোয়েন্টিতে একবার। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে মেলবোর্নের সেই কোয়ার্টার ফাইনালের পর দুই দলের লড়াই মানে অন্যরকম উত্তেজনা। ম্যাচের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দর্শক-সমর্থকদের মধ্যে চলে তুমুল লড়াই। এবার সেই লড়াইয়ের আগে যেন পানি ঢেলে দিয়েছেন সাকিব। অধিনায়ক যখন আগেই স্বীকার করে নিচ্ছেন ভারতের বিপক্ষে জয় হবে অঘটন, সে লড়াইয়ের আগে শুধু তর্কযুদ্ধে নেমে আর কী হবে!
তবে আজকের ম্যাচে সব ছাপিয়ে আলোচনায় থাকবে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পার্ফরমেন্স। সুপার টুয়েলভে তিন ম্যাচের দুইটিতেই জিতে দারুণ ছন্দে আছে সাকিবের দল। দারুণ বল করে পেসারদের ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ নিতে দেখা গেছে শেষ ম্যাচগুলোতে। তাই টাইগার ভক্তদের বাড়তি নজর থাকবে সাকিবদের বোলিং আক্রমণে। প্রয়োজন শুধু টপ অর্ডার ব্যাটারদের রানে ফেরা। ম্যাচে টাইগারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে বদলে দিতে পারে ভাগ্য।