শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৯:০৯ অপরাহ্ন
তানভীর চৌধুরী :: মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বন্য প্রাণীতে সমৃদ্ধ একটি চিরহরিৎ ও মিশ্র চিরহরিৎ বন। ১৯৯৬ সালে লাউয়াছড়াকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করেন। এই উদ্যানে ১ হাজার ২৫০ হেক্টরের চিরহরিৎ ও মিশ্র চিরহরিৎ এই বনে উল্লুক, বানর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, বন মোরগ, বনরুই, মায়া হরিণ, মেছো বাঘ, বন্য শূকর, অজগরসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী আছে।
লাউয়াছড়া ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৫৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ২২ প্রজাতির উভচরসহ অসংখ্য বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির আবাসস্থল ও প্রজনন ক্ষেত্র।
প্রতিবছর উদ্যানের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া সড়ক ও রেলপথে অর্ধ শতাধিক বিপন্ন, বিরল বন্য প্রাণীর মৃত্যু ঘটছে। নানারকম বন্য প্রাণীর উপস্থিতি বনটিকে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। কিন্তু এই বনের ভেতর দিয়ে চলে গেছে ঢাকা-সিলেট রেলপথ। এই রেলপথটি বন্য প্রাণীর নিরাপদ চলাচলে একটি বড় ঝুঁকি হয়ে আছে। প্রায় প্রতি বছরই দ্রুত গতির ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে অনেকগুলো বিরল, বিুলপ্তপ্রায় বন্য প্রাণীর মৃত্যু ঘটছে। কোনোভাবেই বন্য প্রাণীর মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকায় ট্রেনের গতিসীমা ২০ কিলোমিটারে নিয়ন্ত্রিত রাখতে অনেকদিন ধরে চেষ্টা করেছে বন্যপ্রাণী বিভাগ। বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ থেকে গতিসীমা কমাতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর ট্রেনের গতিসীমা ২০ কিলোমিটার রাখতে রেলপথ মন্ত্রণালয় রেলওয়েকে নির্দেশ দিয়েছে।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এবং স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ ট্রেনের গতি কমাতে বন অধিদপ্তর বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে থেকে ২০২১ সালের ৮, ১৪, ২০ নভেম্বর, ২০২২ সালের ৩জানুয়ারি, ২ অক্টেবর, ১০ নভেম্বর ও গত ২৫ জানুয়ারি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ জানুয়ারি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. তৌফিক ইমাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালককে দেওয়া হয়েছে।
এই চিঠিতে বলা হয়, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে রেললাইনে বন্য প্রাণীর মৃত্যু রোধ ও এদের জীবনযাত্রা নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে বিদ্যমান রেলওয়ে দিয়ে চলাচলকারী সকল ট্রেনের গতিসীমা ২০ কিলোমিটারের মধ্যে রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘লাউয়াছড়ার অভ্যন্তরে ট্রেনের গতিসীমা কমানো খুবই দরকার। এটার জন্য আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। আমি এখন সফল বন্যপ্রানীর জন্য এমন একটা কাজ করে। প্রতিবছর অনেক বন্যপ্রানী মারা যাচ্ছে। এখন গতিসীমা কম হচ্ছে সে ক্ষেত্রে ট্রেনে যাওয়া যাত্রীরা বনটাকে উপভোগ করে তাদের গন্তব্যে পৌছাতে পারবে। গতি কমানোর ফলে বিরল প্রজাতীর প্রাণীগুলো অনেকটা বেঁচে থাকবে।’