শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৪৩ পূর্বাহ্ন
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি : শ্রীমঙ্গলে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক চাষ করে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ‘বঙ্গবন্ধু ধান ১০০’। তুলনামূলকভাবে কম খরচ ও কমসময়ে, উচ্চফলনশীল এবং পোকামাকড়, রোগবালাই প্রতিরোধ গুণসম্পন্ন এ ধান আবাদ করে বেশি ফলন পাওয়ায় আগামীতে এ ধানের আবাদ আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষক ও কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা।
উপ-সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রকেন্দ্র শর্মা জানান, বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ এর জীবনকাল ব্রি ধান ৭৪ এর প্রায় সমান। কিন্তু ফলন ব্রি ধান ৭৪ এর চেয়ে বেশি। এই ধানে জিংকের পরিমান বেশি এবং চাল মাঝারী চিকন। বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ এর গড় ফলন ৭.৭ মে: টন। কিন্তু সঠিক পরিচর্যা করা হলে ৮.৮ মে: টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম।
তিনি আরো বলেন, মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষের উপহার হিসেবে ব্রি হাইজিংক সমৃদ্ধজাত এই ধান বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ‘বঙ্গবন্ধু ধান ১০০’ নামে অবমুক্ত করে।
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সুমা পাল জানান, বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ শ্রীমঙ্গলে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ১৫ একর জমিতে চাষ করা হয়। এর মধ্যে উপজেলার কালাপুর ও ভুনবীর ইউনিয়নে দুইটি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হয়। প্রদর্শনী প্লটে কৃষি অফিস থেকে সকল প্রকার রাসায়নিক সার, বীজ, কীটনাশক বিনামুল্যে কৃষকদের দেয়া হয়।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশীদ্রোন ইউনিয়নের পারের টং গ্রামের সফল চাষী মো. নাজমুল হাসান বলেন, আমি এবার ৩ বিঘা জমিতে বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ চাষ করেছিলাম। গতকাল বৃহস্পতিবার আমি ধান কাটা শেষ করেছি। আমি এ ধান চাষ করে বিঘা প্রতি ২১-২২ মন ফলন পেয়েছি। যা অন্যান্য ধানের তুলনায় ৫-৬ মন বেশি। আমি খুব খুশি। তিনি বলেন, আমি এবার এ ধান থেকে বীজ সংরক্ষণ করব। আগামীতে আরো বেশি জমিতে এ ধান চাষ করব।
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুকুর রহমান জানান, এবার শ্রীমঙ্গলে বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ এর ফলন হয়েছে প্রতি হেক্টরে ৬.৭ টন। যা অন্যান্য ধানের তুলনায় বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ তে সময় কম লাগে অর্থাৎ ১৪৫ দিন থেকে ১৪৮ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মহিউদ্দিন জানান, উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি জিংক বেশি থাকায় এই বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তিনি জানান, এবার এই ধানের ফলন দেখে অনেক কৃষক এ ধান চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আশা করছি আগামীতে শ্রীমঙ্গলে এ ধানের আবাদ আরো বৃদ্ধি পাবে’।
কৃষি কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আরো বলেন, রোগ-বালাই, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ রোধ করার ক্ষমতা থাকায় বেশি ফলনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু ধানের উৎপাদন খরচও কম। তাছাড়া এ ধানে জিংকের পরিমাণ বেশি থাকায় বিশেষ করে নারী ও শিশুদের পুষ্টিহীনতা দূরীকরণসহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে।