বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৫:৫৮ পূর্বাহ্ন
বিনোদন ডেস্ক:নাটকটা অনলাইনে এসেছে ১২ মে। পার হয়েছে এক সপ্তাহের বেশি। এই এক সপ্তাহেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনায় এসেছে ‘নীল অপরাজিতা’ নাটকটি। অনেকেই নাটকটি নিয়ে ইতিবাচক কথা বলছেন। অনেকেই জানাচ্ছেন বন্ধু বা পাশের মানুষকে দেখার আমন্ত্রণ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইউটিউবে মন্তব্যের ঘরে নাটকটির গল্প ও অভিনয়শিল্পীদের প্রশংসা দেখা যাচ্ছে বেশ। জাহিদ প্রীতম পরিচালিত এ নাটকটিতে অভিনয় করেছেন তানজিন তিশা ও মুশফিক ফারহান। যেখানে শিলা চরিত্রে তিশা ও সিরাজ (মেঘদূত) চরিত্রে ফারহান নজর কেড়েছে। নাটকটি নিয়ে কেন এমন ইতিবাচক কথা বলছেন সবাই?
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় নাটকটির পরিচালক জাহিদ প্রীতমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নাটকটি অনেকটা সত্য ঘটনা নিয়ে নির্মিত। যেটা আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া ঘটনা। এ কারণে অনেকেই এটার সঙ্গে কানেক্ট করছেন। আসলে নাটকটি মানুষ এত পছন্দ করবে জানা ছিল না। সম্ভবত নাটকে মেঘদূতের বিদ্রোহটাকে সবাই খুব পছন্দ করেছে। নাটকটির কলকাতার দর্শকদের কাছ থেকে আরও বেশি সাড়া পাচ্ছি। তারা রিভিউ দিচ্ছে ফেসবুকে পোস্ট করছে। আমার গল্পটা ওয়েব ফিকশন ধরনের। যেটা সমসাময়িক রোমান্টিক গল্পের মতো না। কিছুটা উপন্যাসের মতো। যেখানে অনেক ধরনের গল্প তুলে ধরা যায়।’
নাটকটির গল্পে দেখা যায়, এইচএসসি পাস শিলা, বান্ধবীর কাছ থেকে নেয়া এক বই পড়ে সেই বইয়ের চরিত্র অপরাজিতা হতে চায়। বইটি তার খুব পছন্দের জানিয়ে বইয়ের লেখক মেঘদূতের কাছে চিঠি পাঠায় সে। বইয়ের নাম ‘নীল অপরাজিতা’। এটি মেঘদূতের প্রথম বই। শিলার চিঠি পেয়ে মেঘদূতের কাছে তা অনুপ্রেরণার মনে হয়। চিঠি আদান-প্রদানের একপর্যায়ে শিলা ও মেঘদূত সিদ্ধান্ত নেয় দেখা করার। শিলা বইয়ের চরিত্রের মতো বেগুনি শাড়ি পরে দেখা করতে যায় মেঘদূতের সঙ্গে। তাদের দেখা খুব সুন্দর হলেও, দেখা করে রাতে ফেরার পথে শিলার সঙ্গে ঘটে যায় এক দুর্ঘটনা। যে ঘটনার কারণে হাসি খুশি শিলার সহজ-সরল জীবন হয়ে যায় বিভীষিকাময়। শিলার জীবনে সেই রাতে কী ঘটেছিল, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এগিয়ে যায় নাটকের গল্প।
এমন গল্প নাটকে তুলে আনা প্রসঙ্গে পরিচালক প্রীতম বলেন, “নির্মাণের পেছনে আমার একটা মজার গল্প আছে। আমার সাবেক গার্লফ্রেন্ডের বাসা ছিল নারায়ণগঞ্জ। রাত ৮টা বাজলেই ঢাকার বাইরের শহরগুলো নিস্তব্ধ হয়ে যায়। আমি তখন তাকে পৌঁছে দিতে যেতাম। দেখা যেত দিনের ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা এই যাতায়াতে সময় চলে যেত। তখন আমি রাস্তায় অনেক গল্প পেতাম। সেই গল্পগুলোর একটিই ‘নীল অপরাজিতা’। ওই সময় নারায়ণগঞ্জের রাস্তায় দুর্ঘটনা, ধর্ষণ অহরহ ছিল। কিছু মৃত্যুর খবর পেতাম, যেগুলো স্বাভাবিক মৃত্যু বলে মনে হতো না। এ কারণে ওই গার্লফ্রেন্ডকে টানা দুই বছর নিরাপদে বাসায় পৌঁছে দিয়ে নিজের বাসায় আসতাম। অনেকেই আমাকে পাগল ভাবত। ওরা ভাবত আমি প্রেমিকার নিরাপত্তার জন্য এতটা পাগলামি করছি…। কিন্তু আমার মাথায় আসত ১০-১৫ মিনিটের একটা ঘটনা একটা মেয়ের জীবন শেষ করে দিতে পারে।”
গল্পে শিলা চরিত্রে অভিনয় করেছেন তানজিন তিশা। তিনি বলেন, আমাকে যখন নীল অপরাজিতার গল্প শোনানো হয় তখন বেশ অবাক হয়েছিলাম। চরিত্রটির জন্য আমি কনফিডেন্ট ছিলাম না। কিন্তু পরিচালক সব সময়ের মতো তার ভিজ্যুয়াল আর প্ল্যান নিয়ে কনফিডেন্ট ছিলেন। অন্য কেউ হলে চ্যালেঞ্জটা নিতে চাইতাম না, ছেড়ে দিতাম। কিন্তু গল্পটা এতটাই স্ট্রং আর নির্মাতা যখন প্রীতম ভাইয়া তখন অন্যরকম সাহস পেলাম। এই চিত্রনাট্যে আমাকে দুই ধরনের চরিত্র ধারণ করতে হয়েছে। শুরুতে কলেজপড়ুয়া মফস্বলের একজন সহজ-সরল মেয়ের চরিত্র আর তারপর প্যারালাইজড ধর্ষিতা রোগীর চরিত্র। এই চরিত্রটির জন্য আমার প্রিয় চুলগুলো কেটে ফেলতে হয়েছিল।
তবে এ ধরনের নাটক নির্মাণ বেশ চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন পরিচালক জাহিদ প্রীতম। কারণ এমন গল্পে প্রযোজক পাওয়া বেশ কঠিন। যেটার জন্য ভুগতে হয়েছে তাকে। বেশ কয়েকজন প্রযোজক গল্পটা শুনে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। শেষমেশ শুটিংয়ের কয়েক দিন আগে এগিয়ে আসেন অভিনেতা মুশফিক আর ফারহান। অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনার দায়িত্বও নেন তিনি।
নীল অপরাজিতা নাটকে অভিনয় করেছেন সারা আলম, মনিরা মিঠু, ইকবাল হোসেনসহ অনেকে। নাটকটি সরকার মিডিয়া ইউটিউব চ্যানেলে দেখা যাবে।