সাদিকুর রহমান সামু:: প্রাকৃতিক জলাভূমির এক বিশাল রূপ হাকালুকি হাওর। থৈ থৈ পানির সাথে হিজলের মিতালি, সমুদ্রের মতো বিশাল ঢেউ, চারদিকে পানি আর পানি। আর বর্ষায় হাওরের অথৈজলে প্রতিফলিত হওয়া নীল আকাশ দেখতে অপরূপ। বাংলার প্রান্তর ঘিরে উপকারী হাওরের জলরাশি। বাতাসের সাথে বিচিত্র ঢেউয়ে ঢেউয়ে নেচে উঠে তার দেহ। তবে সারাবছর হাওর একই অবস্থায় থাকে না, বদলে যায়। প্রকৃতির আপন ঋতুবৈচিত্র্যের সাথে সেও দ্রুতই পাল্টে যায়। যেখানটা আজ জলপূর্ণ আছে, কয়েক মাসের মধ্যেই সেখানটা শুকনো অবস্থায় পরিবর্তিত হয়ে পড়বে।
বর্ষায় হাকালুকি হাওর তার উন্মুক্ত বুকপাঁজরের প্রসারিত প্রান্তরে তার সমস্ত সৌন্দর্য্য সহজেই মেলে ধরে। নীল আকাশজুড়ে ভাসতে থাকে তখন সাদা মেঘেদের ছুটোছুটি দৃশ্য। বোধ করি বলাই উচিত, প্রত্যেক মানুষেরই কম বা বেশি পরিমাণে একটা সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ অনুসন্ধানী দৃষ্টি রয়েছে। অনেকেই প্রকৃতির এরূপ বিমোহিত অপরূপ দৃশ্যাবলীতে মুগ্ধ হতে চান। বর্ষায় বাংলার প্রাকৃতিক জলাভূমি ঘিরে তার সৌন্দর্য্যও মেলে ধরেছে। যেখানে নীল আকাশের শোভা প্রতিফলিত হচ্ছে হাওরজলে।
বর্ষাকাল আসার আগ পর্যন্ত হাওরের তলদেশ শুকনো ছিল। হাওরের শুকনো মাঠ পানির জন্য খা খা করছিল। বর্ষাকাল অর্থাৎ আষাঢ়ের শুরুতে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে হাওরের চেহারা পাল্টে যায়। ফিরে পেতে থাকে বর্ষাকালে হাওরের প্রকৃত রূপ। আস্তে আস্তে পানিতে ভরপুরহয়ে এখন থই থই করছে পূরো হাওর।
হাওরের কোনো পাড় থেকে এই রূপ যতটা দেখতে ভালো লাগে তারচেয়ে ঢের বেশি ভালো লাগে নৌকাভ্রমণ থেকে। হাওর প্রতিবিম্বে নীল আকাশটা ধরা পড়ে দারুণভাবে। সাদা মেঘের প্রতিচ্ছবি হাওরজলে! এ এক অপূর্ব শোভা। নৌকার থেকে হাওরপাড়ের এমন সৌন্দর্যগুলো দেখতে দেখতে নয়ন জুড়িয়ে যায়। তবে দুপুরবেলার রোদের তীব্রতা সহ্য করতেই হয়। এক্ষেত্রে ছাউনিনৌকাই অতি উত্তম। নৌকা ধীরগতিতে চলে সামনের দিকে। সোজা দেখা মেলে বিশালাকৃতির জাল। কয়েকটি বাঁশের কাঠামো ওপর সজ্জিত বড় আকারের জাল বাঁধা। গ্রামাঞ্চলের এমন জালকে অঞ্চলভেদে খড়াজাল, ধর্মজাল অথবা কোণাঘর জাল বলে। কিছুক্ষণ পর আরেকটি সুন্দর দৃশ্য চোখে পড়বেই। ডিঙি নৌকা মাঝি এবং জেলেকে নিয়ে মন্থরগতিতে ধেয়ে চলে। মাঝি এক কোণায় বসে নৌকাটি চালাচ্ছেন আর সামনের দিকে দাঁড়িয়ে থাকা জেলে ত্রিকোণাজাল হাতে নিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন।
হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ একটি হাওর। এটি এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি। এর আয়তন ১৮ হাজার ১১৫ হেক্টর, তন্মধ্যে শুধুমাত্র বিলের আয়তন ৪ হাজার ৪০০ হেক্টর। এটি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখার ৪০ শতাংশ, কুলাউড়ার ৩০ শতাংশ এবং সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ১৫ শতাংশ, গোলাপগঞ্জ উপজেলার ১০ শতাংশ এবং বিয়ানীবাজারের ৫ শতাংশ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।