মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫০ পূর্বাহ্ন
বিনোদন ডেস্ক :: ষাটের দশকে বাংলা সিনেমার দৃশ্য যখন সাদাকালো, ঝিরঝির; তখন তার দাপুটে আবির্ভাব। লাস্যময়ী চেহারা, মন ভোলানো চাহনী আর নিপুণ অভিনয়ে তিনি বাজিমাৎ করলেন। জয় করে নিলেন দর্শকদের মন। তারপর অর্ধ শত বছরের লম্বা পথচলা। দুহাত ভোরে তিনি দিয়েছেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে।
বলছি খ্যাতিমান অভিনেত্রী সুজাতার কথা। বাংলা চলচ্চিত্রে যিনি ‘রূপবান’ হিসেবেই বেশি পরিচিত। আজ ১০ আগস্ট সুজাতার জন্মদিন। শুভ জন্মদিন গুণী অভিনেত্রী সুজাতা।
গিরিজানাথ মজুমদার ও বীণা পানি মুজমদারের সন্তান সুজাতার জন্ম ও বেড়ে উঠা কুষ্টিয়ায়। তার আসল নাম তন্দ্রা মজুমদার। পঞ্চাশের দশকে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার সময় পরিবারসহ কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। এরপরই সুজাতা নাটক ও থিয়েটারের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন।
থিয়েটারে সুজাতা অভিনয় করেছেন আমজাদ হোসেন ও নাজমুল হুদা বাচ্চু ও সালাহুদ্দিনের মতো বরেণ্য নির্মাতাদের নির্দেশনায়। ওবায়দুল হক পরিচালিত ‘দুই দিগন্ত’ সিনেমায় একটি নৃত্যে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেন সুজাতা। এরপর নির্মাতা সালাউদ্দিন তার নাম তন্দ্রা মজুমদার থেকে সুজাতা রাখেন এবং তাকে ‘ধারাপাত’ সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ দেন।
নায়িকা চরিত্রে সুজাতা প্রথম অভিনয় করেন ‘মেঘ ভাঙা রোদ’ সিনেমায়। এটি নির্মাণ করেছিলেন কাজী খালেক। তবে এই সিনেমাটি মুক্তির আগেই সুজাতা অভিনীত ‘রূপবান’ সিনেমাটি মুক্তি পায়। যা রাতারাতি বদলে দেয় সুজাতার ক্যারিয়ার। দেশজুড়ে ‘রূপবান’ এতো বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করে যে, এটি টানা এক বছর পর্যন্ত সিনেমা হলে চলেছিল।
সিনেমায় আসার আগে সুজাতা ভেবেছিলেন থিয়েটারেই নিয়মিত থাকবেন। আর মাঝেমধ্যে সিনেমায় অভিনয় করবেন। কিন্তু ‘রূপবান’-এর পর তার চাহিদা এতো বেড়ে গিয়েছিল যে, আর থিয়েটারে ফিরে যেতে পারেননি সুজাতা। একের পর এক লোকজ গল্পের সিনেমায় অভিনয় করে গেছেন তিনি।
সুজাতাকে বলা হয় বাংলা চলচ্চিত্রের ফোক সম্রাজ্ঞী। কারণ তার অভিনীত তিন শতাধিক চলচ্চিত্রের মধ্যে পঞ্চাশটির বেশি ফোক ঘরানার। আর সেগুলোই তাকে বেশি সাফল্য এনে দিয়েছিল।
১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত প্রায় সত্তরটি সিনেমায় নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেন সুজাতা। এরপর তিনি প্রায় একযুগ চলচ্চিত্র থেকে দূরে ছিলেন। তবে পরবর্তীতে আবারও নিয়মিত হন রূপালি দুনিয়ায়। পাশাপাশি টিভি নাটকেও অভিনয় শুরু করেন তিনি।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ১৯৬৭ সালে সুজাতা অভিনয় করেন ‘ডাকবাবু’ সিনেমায়। এতে তার নায়ক ছিলেন আজিম। সিনেমাটিতে কাজ করতে গিয়ে তারা প্রেমের সম্পর্কে জড়ান এবং বিয়ে করেন। সুজাতা ও আজিম একত্রে তিনটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে সিনেমা প্রযোজনা করেছেন। তাদের প্রযোজনা সংস্থাগুলো হচ্ছে ‘সুজাতা প্রোডাকশন্স’, ‘এস এ ফিল্মস’ ও ‘সুফল কথাচিত্র’। এই তিনটি প্রযোজনা সংস্থার ব্যানারে নির্মিত হয়েছে ‘চেনা অচেনা’, ‘টাকার খেলা’, ‘প্রতিনিধি’, ‘অর্পন’, ‘রূপবানের রূপকথা’, ‘বদলা’, ‘রং বেরং’, ‘এখানে আকাশ নীল’ ইত্যাদি সিনেমা।
অভিনয় ও প্রযোজনা ছাড়া সুজাতা একটি সিনেমাও পরিচালনা করেছেন। এর নাম ‘অর্পণ’। সিনেমাটি একাধিক শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে।