শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:৪২ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি: প্রায় এক যুগ ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে মৌলভীবাজার বাস টার্মিনালপ্রায় এক যুগ ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে মৌলভীবাজার বাস টার্মিনাল। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অনাগ্রহ এবং প্রশাসনের উদ্যোগের অভাবে অবহেলায় পড়ে আছে মৌলভীবাজার বাস টার্মিনাল। মৌলভীবাজার শহরকে যানজটমুক্ত করতে প্রায় একযুগ আগে চার কোটি টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করা হয়। তবে দূরপাল্লার বাস-মিনিবাস ও অন্যান্য পরিবহন আসা-যাওয়া না করায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে টার্মিনালটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, টার্মিনালে কোনও যানবাহন নেই, মূল ভবনটিও পড়ে আছে অরক্ষিত অবস্থায়। পুরো ভবনজুড়ে নোংরা অবস্থা। ভবনের মেঝেতে গোবর ও বিভিন্ন রকম আবর্জনা ছড়ানো। অনেক জায়গায় ভেঙে গেছে টাইলস। দেয়ালের বিভিন্ন অংশে দেখা দিয়েছে ফাটল। বিভিন্ন কক্ষের কাচের দরজা খোলা। কক্ষের ভেতরে ময়লা-আবর্জনা স্তূপ। যানবাহন না আসার কারণে বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার নামে বরাদ্দ করা কাউন্টারগুলোতে জমেছে ধুলোর স্তর। টার্মিনালের পূর্বদিকে আবর্জনা আর গরু,মহিষ ও ছাগলের অবস্থান। আর ভবনের বাইরে ও ভেতরে রড, সিমেন্ট ও বালু স্টক করে রেখেছেন স্থানীয় ঠিকাদাররা।
কথা হয় টার্মিনালের প্রবেশ মুখের একটি চা-স্টলের মালিক মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, শুধু হবিগঞ্জ-সিলেট রুটের বাস টার্মিনালের সড়কের সামনে একটু সময়ের জন্য থামে। রাতে হানিফ,শ্যামলী,তাজ পরিবহন ও কুমিল্লার দুই-চারটি বাস এখানে রাখা হয়। তবে ভোরে চলে যায়। আগে শুধু রাতের বেলা টার্মিনালের লাইট জ্বালানো হতো। এখন আর লাইটও জ্বলে না।
পৌরসভা,পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার শহরকে যানজটমুক্ত করার জন্য শহর এলাকার সড়ক থেকে অবৈধ স্ট্যান্ড সরিয়ে নিতে পৌর বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। মৌলভীবাজার শহর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে এবং ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে পৌরসভার উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে যুগিডর এলাকায় এ টার্মিনালের অবস্থান। প্রায় তিন একর জায়গার মধ্যে নগর পরিচালনা ও উন্নীতকরণ অবকাঠামো প্রকল্প ও পৌরসভার যৌথ অর্থায়নে টার্মিনালটি নির্মাণ করা হয়। এতে জমি কেনা,ভবন নির্মাণ ও অন্যান্য খাতে খরচ হয় তিন কোটি ৯৮লাখ ৭৫হাজার ৫১৯টাকা। কাজ শেষ হওয়ার পর ২০০৯সালের আগস্ট মাসে মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূন বাস টার্মিনালের উদ্বোধন করেন।
স্থানীয় প্রশাসন পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে ২০১০ সালের ১ নভেম্বর থেকে বাস টার্মিনাল চালুর উদ্যোগ নেয়। চালুর পর কিছুদিন ঢাকা-মৌলভীবাজার, সিলেট-হবিগঞ্জ, কুমিল্লাসহ আন্তঃজেলার বিভিন্ন রুটে টার্মিনাল থেকে বাস চলাচল করে। বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কে চলাচলকারী কিছু অটোরিকশাও টার্মিনাল থেকে আসা-যাওয়া করতো। তবে কিছুদিন না যেতেই বাসগুলো টার্মিনাল থেকে সরে আগের মতো অবৈধ স্ট্যান্ডে চলে যায়।
বাস টার্মিনালের ভেতরে অবস্থিত মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল হান্নান বলেন, ‘আমি বাস টার্মিনাল উদ্বোধনের পর থেকে দায়িত্বে আছি। এই টার্মিনালের দায়িত্বে আছেন ইজারাদার মোমিত মিয়া। উনি মূলত ঠিকাদার। টার্মিনালে গত কয়েক বছর ধরে বিদ্যুৎ নাই, পানি নাই, ঝোপ জঙ্গল। নামাজে আসা মুসল্লিদের অজুর পানির জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে। বালতি দিয়ে পানি নিয়ে আসা হয়, তারপর মুসল্লিরা অজু করে নামাজ পড়েন।
তিনি আরও বলেন, মাঝে-মধ্যে শুনি পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা দূরপাল্লার গাড়িসহ সব গাড়ি টার্মিনালে নিয়ে আসবে। কিন্তু হানিফ ও শ্যামলী নানা অজুহাত দেখিয়ে বাস টার্মিনালে আসে না। তবে টার্মিনালটি চালু হলে পৌরসভা প্রতিবছর লাখ লাখ রাজস্ব আদায় করতো পারতো।
মৌলভীবাজার মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ বলেন, শহরের যানজট নিরসনে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে টার্মিনালটি নির্মাণ করা হয়। বাস টার্মিনাল চালুর বিষয়ে সাবেক মেয়র উদ্যোগ নেন। তবে কিছু নেতার আগ্রহ না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে টার্মিনালটি। অন্যদিকে কাউন্টার ভিত্তিক যারা আছেন তারাও অনীহা প্রকাশ করার কারণে আরও টার্মিনাল চালুর বিষয়টি আরও বাধাগ্রস্ত হয়। এখন যদি বর্তমান পৌর মেয়র, জেলার রাজনৈতিক নেতারা এবং প্রশাসন মিলে উদ্যোগ নেন, তাহলে হয়তো টার্মিনালটি চালু করা সম্ভব। এতে বহু লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
তবে টার্মিনালটি চালু না করে সেখানে গরুর হাট চালু করারও কথা চলছে বলে জানান তিনি।
মৌলভীবাজার শহরের পথচারী খুরশেদ,জাহেদ,হাবিব,আলম বলেন, টার্মিনাল চালু হলে শহরে যানজট থাকতো না। এটা চালু না করায় শহরের কসুমবাগ পয়েন্টে এখন অনেক বেশি যানজট।
এদিকে চার কোটি টাকার টার্মিনাল ফেলে রেখে নতুন করে আরও একটি নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক শায়েস্তাগঞ্জের মিরপুর হয়ে শেরপুর দিয়ে সিলেট চলে গেছে। এ কারণে বাস টার্মিনালের কার্যক্রম চালু করা যাচ্ছে না। এখন নতুন করে শ্রীমঙ্গল সড়কে বাস টার্মিনাল নির্মাণ করতে হবে।
তবে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, ফেলে রাখা টার্মিনালটি সচল করা গেলে শহরের বাইরের বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনগুলোকে সেখানে নেওয়া সম্ভব হতো। তবে কিছু লোকের আগ্রহ না থাকায় কাজটি সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি।