বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। নতুন এই ধরনটি দেশে এখনো মারাত্মক আকার ধারণ না করলেও আগে থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করতে চায় সরকার। এজন্য এখনই লকডাউনের কথা না ভাবলেও সরকার কিছু ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ওমিক্রনের বিস্তার রোধ এবং করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিস্তারিত আলোচনা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বৈঠকের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। মন্ত্রী জানান, অনেক বিষয় আলোচনা হয়েছে, সবকিছু এখনই প্রকাশ করা হবে না। যথাসময়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের উদ্বেগ রয়েছে। তবে এখনই লকডাউনের কথা তারা ভাবছেন না। তাছাড়া এখনই লকডাউন দেওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি, এ ব্যাপারে আলোচনাও করেননি। লকডাউন যেন না দেওয়া লাগে সেজন্যই তারা আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করতে চান।
বৈঠক প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওমিক্রনে করণীয় নিয়ে বৈঠক হলেও আলোচনায় আসে করোনাভাইরাস নতুন করে বৃদ্ধির বিষয়টি। আমরা করোনাভাইরাস মোকাবেলা করছি। তাই অনেক কিছুই জানতে পারছি। কীভাবে কী করতে হবে। ওমিক্রনের বিষয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোও পরে জানানো হবে।’বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইন প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, ‘ঢিলেঢালা কোয়ারেন্টাইন নয়, পুলিশ পাহারায় কঠোর কোয়ারেন্টাইনের ওপর জোর দেওয়ার ক্ষেত্রেও আলোচনা হয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে ভ্যাকসিন নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তারা রেস্টুরেন্টে খেতে পারবেন, অফিসে যেতে পারবেন, স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারবেন। তবে এই কাজগুলো তারা করতে পারবেন মাস্ক পরা অবস্থায়। কিন্তু ভ্যাকসিন না নেওয়া থাকলে কেউ রেস্টুরেন্টে খেতে পারবেন না।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘কেউ রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেতে চাইলে তাকে ভ্যাকসিন কার্ড দেখিয়ে বলতে হবে যে, তিনি ভ্যাকসিন নিয়েছেন। তাহলেই তাকে সেই রেস্টুরেন্ট এন্টারটেইন করবে। যদি কোনো রেস্টুরেন্ট ভ্যাকসিন না নেওয়া কাউকে এন্টারটেইন করে, তাহলে সেই রেস্টুরেন্টকেও জরিমানা করা হবে।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হবে কি না এ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের টিকা নেওয়ার ওপর জোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। লক্ষ্য করা গেছে, শিক্ষার্থীরা টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে তেমন আগ্রহী নয়।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘সব ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতের বিষয়ে বৈঠকে কথা হয়েছে। মাস্ক না পরলে জরিমানার বিষয়টিও উঠেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত বিষয়টি নিশ্চিত করবে।’ এছাড়া গণপরিবহনে যাত্রী চলাচলের ক্ষেত্রে নির্ধারিত আসনের চেয়ে কম যাত্রী পরিবহনের বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় যত অনুষ্ঠান আছে, সেগুলোতে মানুষের সংখ্যা যাতে কম হয়, সেই বিষয়েও তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গণপরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে আসনের চেয়ে কম যাত্রী, পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্রে আসন সংখ্যার ৫০ শতাংশ ব্যবহার করার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক অনুষ্ঠান সীমিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আজকের বৈঠকে স্বাস্থ্যবিধি মানানোর বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে যেসব প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি না মানা হবে, তার দায় নিতে হবে তাদেরকেই। এ বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। শপিংমল, মার্কেটসহ দোকানপাটে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে প্রশাসনকে কঠোর থাকতে বলার বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া , তথ্য সচিব মো. মকবুল হোসেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমসহ অন্য কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
এছাড়া মাঠ পর্যায় থেকে জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), বিভাগীয় কমিশনার, স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক, সিভিল সার্জনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।