ডেস্ক রিপোর্ট : ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পঞ্চম ধাপেও প্রাণহানি দেখলো দেশ। বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ-হামলায় এখন পর্যন্ত চার জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম, গাইবান্ধা ও বগুড়ায় পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে মারা গেছেন তিন জন। এছাড়া, মানিকগঞ্জে দুই গ্রুপের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় মারা গেছেন এক নারী।

বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষে আহত হয়েছেন আরো ৫০ জন। আর নিহতের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট জনপদে এখনো বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা।

একাত্তরের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম, ভোলা, ফেনী, মানিকগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলায় নির্বাচনী অনিয়ম, সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

মানিকগঞ্জ দৌলতপুরের বাচামারা কেন্দ্রে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয় বুধবার দুপুরের দিকে। এর মধ্যে পড়ে মারা যান সমেলা বেগম নামে ষাটোর্ধ এক নারী।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের দুই নম্বর বাচামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া ওই নারীর নাম সুমেলা খাতুন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দৌলতপুর উপজেলায় দুই মেম্বার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

এ সময় ভোটকেন্দ্রের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সুমেলা এই দৃশ্য দেখে আতঙ্কে স্ট্রোক করেন। পরে তাকে বাড়িতে নেয়া হলে তার মৃত্যু হয়।

এদিকে, গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ি এলাকায় দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে আবু তাহের নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।

জুমারবাড়ী আদর্শ ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে দুই ইউপি সদস্যের সমর্থকদের সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারা যান আবু তাহের।

বিকেল পৌনে তিনটার দিকে টিউবওয়েল মার্কার সদস্য প্রার্থীর সমর্থক আবু তাহের অন্য সদস্য প্রার্থী রাসেল আহমেদের (ফ্যান) কর্মীদের হামলা হমলার শিকার হন।

এ সময় তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলায় পোচ দিলে তিনি মারাত্মক আহত হন। তাকে উদ্ধার করে বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

অন্যদিকে, চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় নির্বাচনী সহিংসতায় একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দুপুর ১২টার দিকে চাতরি ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে।

সাত নম্বর ওয়ার্ডে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে যায়। এ সময় প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান অঙ্কুর দত্ত্ব নামে এক ব্যক্তি।

এর আগে সকালে বোয়ালখালী করলডাঙ্গা আসাদিয়া স্কুল কেন্দ্রে বাইরে গণমাধ্যমের আটটি গাড়ি ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। একই সময়ে কাছাকাছি আরেকটি কেন্দ্র একজন গুলিবিদ্ধ হয়।

কুমিল্লার লালমাইয়ের পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নে মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।

এছাড়া ভোট কেন্দ্রে নগদ টাকা, নির্বাচনী কাগজপত্র ও অননুমোদিত প্রাইভেটকারসহ প্রবেশ করায় আওয়ামী লীগের এক নেতাকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

দণ্ডপ্রাপ্ত ওই আওয়ামী লীগ নেতার নাম কাজী মেহেদী হাসান। তিনি লালমাই উপজেলার আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদকের পদে রয়েছেন।

বুধবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে ভোট নেয়ার সময় উপজেলার ভুলুইন দক্ষিণ ইউনিয়নের গোলাচোঁ কেন্দ্রে তাকে দণ্ড দেয়া হয়ে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী হাকিম মৌসুমী আক্তার।

তিনি বলেন, পুলিশ তাকে নগদ ৫৭ হাজার টাকা, নির্বাচনী কাগজপত্র ও অননুমোদিত প্রাইভেটকারসহ আটক করে। পরে তাকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

বগুড়ার গাবতলী সাগাটিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই দলের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয় থেমে থেমে ৷ ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ভোট নেয়া বন্ধ করে দেন।

পরে দুই দলের সমর্থকরা আবারো লাঠিসোটা ককটেল ও দা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। এ সময় ছুরিকাঘাতে মারা যান একজন। নিহত জাকির ঘটনার সময় ফেসবুকে লাইভ করছিলেন।

এদিকে, ব্যালট পেপার ছিনতাই এবং দুই ইউপি সদস্যদের সমর্থকদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনায় গাজীপুরের কাওরাইদের একটি ভোট কেন্দ্রে ব্যাপক ভাঙচুর হয়।

কাওরাইদ নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে এই ষংঘর্ষের কারণে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ স্থগিত ছিল।

জামালপুরের বকশীগঞ্জে মেরুরচর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও একজন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সর্থকদের মাঝে ধাওয়া পাল্টায় পুলিশসহ আহত হয় ১০ জন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদরের বাসুদেবপুরে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হন।

এছাড়া সেখানের নাটাই উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে টাকা বিতরণের সময় মো. কারিফ (৩৮) নামে এক পোলিং এজেন্টকে এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

একই উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের দুই সদস্য প্রার্থীকে আটক করে পুলিশ। জালভোট দেয়ার অভিযোগে বাদশাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও দুই হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।