1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:০৬ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

মৌলভীবাজারে খাড়িয়া জাতিগোষ্ঠী: একটি মৃতপ্রায় ভাষা

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ৫১২ বার পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদক: ‘এখন আমরা দুজন মাত্র এই ভাষায় কথা বলতে পারি। আরও দু-চারজন ভাষাটি জানেন বটে, তবে কথা বলার মতো লোক খুঁজে পান না। আর তরুণদের কয়েকজন এই ভাষার কয়েকটি শব্দ জানেন কেবল। কথা বলতে পারেন না।
বলছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার সীমান্তবর্তী বোরমছড়া চা বাগানের বৃদ্ধা ভেরোনিকা কেরকেতা। খাড়িয়া নৃগোষ্ঠীর এই নারীর বয়স ৭০ পেরিয়েছে। তিনি আর তার ছোট বোন ক্রিস্টিনা কেরকেতাই শুধু তাদের মাতৃভাষায় কথা বলেন বলে জানান ভেরোনিকা। খাড়িয়া নৃগোষ্ঠীর ভাষার নামও খাড়িয়া। সিলেটের চা বাগানগুলোয় এদের বাস। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন চা বাগানে বর্তমানে প্রায় ছয় হাজার খাড়িয়ার বসবাস, তবে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কিছু খাড়িয়া রয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, খাড়িয়া মৃতপ্রায় ভাষা। খাড়িয়া নৃ-গোষ্ঠীর মানুষই এ ভাষায় কথা বলেন। এটি অস্ট্রোএশিয়াটিক ভাষার মুন্ডা গোত্রীয় একটি ভাষা। বাংলাদেশে প্রায় বিলুপ্ত হতে চলা এই ভাষাকে সংরক্ষণেরও দাবি তাদের।

বাংলাদেশে এ ভাষা ব্যবহারকারী একেবারে কম হলেও ভারতে এখনও প্রচলিত রয়েছে এটি। পূর্ব ভারতে বাসকারী খাড়িয়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ ভাষা এখনও প্রচলিত। ছত্তিসগড়, ওডিশা ও ঝাড়খন্ড রাজ্যে এখনও এ ভাষার প্রচলন রয়েছে। বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ব্রিটিশ শাসনামলে খাড়িয়ারা চা শ্রমিক হিসেবে সিলেট আসেন। বর্তমানে তারা মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানে শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত। খাড়িয়া ভাষা ভালোভাবে জানা দুই বোনের মধ্যে ছোটজন ক্রিস্টিনা কেরকেতা বলেন, ‘আমরা দুই বোন কথা বলার সময়ই কেবল খাড়িয়া ভাষায় কথা বলি। পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে এই ভাষায় কথা বলতে পারি না। কারণ তারা খাড়িয়া জানে না। তাই তাদের সঙ্গে সাদরি বা বাংলা ভাষায় কথা বলতে হয়।বড় বোন ভেরোনিকা জানান, তার স্বামী আব্রাহাম সোরেংও খাড়িয়া ভাষায় কথা বলতে পারতেন, তবে তিনি বছর তিনেক আগে মারা গেছেন। সিলেট অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা নিয়ে ২০১৮ সালে গবেষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাশরুর ইমতিয়াজ। গত রোববার তিনি বলেন, ‘এখানকার ভাষাগুলোর মধ্যে খাড়িয়াই সবচেয়ে সংকটে আছে। আমি ২০১৮ সালেই বয়স্ক পাঁচ-ছয়জন ছাড়া এই ভাষা ভালো করে জানেন এমন কাউকে পাইনি। আর ভাষার কিছু শব্দ জানেন এমন ১৪-১৫ জনকে পেয়েছিলাম, তবে তারা ভাষাটি পুরোপুরি জানেন না। মাশরুর বলেন, ‘খাড়িয়া ভাষা অনেক আগে থেকেই সংকটে আছে। তাদের বর্ণমালা নেই। ব্যাকরণ নেই। ব্যবহারও নেই। ফলে নতুন প্রজন্ম এই ভাষা শেখা বা বলায় আগ্রহ পাচ্ছে না। ১৯২৮ সালে প্রকাশিত জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ারসনের ‘লিঙ্গুইস্টিক সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’ বইতেও খাড়িয়াকে ‘মৃতপ্রায়’ ভাষা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ভেরোনিকা ও ক্রিস্টিনা বোনদ্বয়ের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, খাড়িয়া ভাষা ভালোভাবে জানাদের মধ্যে জহরলাল পান্ডে ইন্দুয়ার নামের আরেক ব্যক্তি এখনও জীবিত আছেন। দীর্ঘ অনভ্যস্ততার কারণে আমিও এখন নিজেদের ভাষা ভুলে গেছি। কারণ এই ভাষায় কথা বলার মতো লোক খুঁজে পাই না।

জহরলালের বয়সও সত্তরের কাছাকাছি। তিনি থাকেন উপজেলার মংরাবস্তি গ্রামে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জহরলাল বলেন, ‘দীর্ঘ অনভ্যস্ততার কারণে আমিও এখন নিজেদের ভাষা ভুলে গেছি। কারণ এই ভাষায় কথা বলার মতো লোক খুঁজে পাই না। মংরাবস্তি গ্রামে ১১০টি খাড়িয়া পরিবার রয়েছে জানিয়ে জহরলাল বলেন, তারা প্রত্যেকেই নিজেদের মধ্যে আলাপের সময় বাংলা বা সাদরি ভাষা ব্যবহার করে; খাড়িয়া জানে না। বাংলাদেশে বসবাসতরত বেশ কয়েকটি নৃগোষ্ঠী সাদরি ভাষা ব্যবহার করে। চা বাগান সম্পৃক্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যেও এই ভাষা জনপ্রিয়। সাদরি ভাষা শেখার জন্য সরকারি উদ্যোগে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির বইও প্রকাশ হয়েছে। শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের চা বাগান গুলোতেই মূলত খাড়িয়া জাতিগোষ্ঠীর বাস। এ ছাড়া হবিগঞ্জের চুনারুঘাটেও রয়েছেন কিছু, তবে সেখানকার বাসিন্দারাও নিজেদের ভাষা জানেন না।

সরকারিভাবে ২০১৯ সালে তৈরি করা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তালিকায় খাড়িয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর আগে বাংলাদেশে আলাদা জাতিগোষ্ঠী হিসেবে তাদের স্বীকৃতি ছিল না। সিলেট বিভাগের ৪১টি গ্রামে খড়িয়াদের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন বিভিন্নজন। ২০১৭ সালে খাড়িয়া সম্প্রদায়ের কিছু যুবকের উদ্যোগে শিশুদের মাতৃভাষা শেখানোর জন্য শ্রীমঙ্গলে চালু করা হয় ‘বীর শহীদ তেলেঙ্গা খাড়িয়া ল্যাঙ্গুয়েজ লার্নিং সেন্টার’, তবে সেই উদ্যোগে তেমন ফল মেলেনি।

এ বিষয়ে উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত খাড়িয়া যুবক পিয়াস নানুয়ার বলেন, ‘এই ভাষা শেখানোর জন্য লোক পাওয়া যায় না। এ ছাড়া ব্যবহার না থাকায় নতুন প্রজন্মও এই ভাষা শিখতে আগ্রহী নয়। বৃদ্ধ যে কয়েকজন এই ভাষার কিছু কিছু জানেন, তারা মারা গেলে দেশ থেকে খাড়িয়া ভাষা হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা তার। নতুন প্রজন্মের খাড়িয়া ভাষায় আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন এই ভাষা জানা ভেরোনিকা কেরকেতাও। তিনি বলেন, ‘আমরা দুই বোন যখন কথা বলি, তখন আশপাশের বাচ্চারা হাসাহাসি করে। তাদের শেখাতে চাইলেও শেখার আগ্রহ দেখায় না। বিলুপ্ত হতে যাওয়া এই ভাষা সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে খাড়িয়া ভাষা নিয়ে গবেষণা করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাশরুর ইমতিয়াজ বলেন, ‘বাংলাদেশে খাড়িয়াদের নিজস্ব বর্ণমালা নেই। ভারতের খাড়িয়ারা রোমান এবং লাতিন বর্ণমালা ব্যবহার করে।

‘সংরক্ষণের জন্য বর্ণমালা ও ব্যাকরণ তৈরি করতে হবে। তারও আগে এই ভাষার বর্তমান অবস্থা নিয়ে একটি বিস্তর গবেষণা প্রয়োজন। ভাষা সংরক্ষণ একটি দীর্ঘমেয়াদি ও বিশাল প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বই তৈরির পর তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে; মানুষকে সচেতন করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে লেগে থাকলে এবং ওই জাতির মানুষের আগ্রহ থাকলে ভাষাটি নতুনভাবে উদ্ধার করা সম্ভবও হতে পারে। এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (ভাষা, গবেষণা ও পরিকল্পনা) মো. শাফীউল মুজ নবীন বলেন, ‘দেশের কয়েকটি নৃগোষ্ঠীর ভাষাই বিলুপ্তির পথে। এই ভাষাগুলো পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের জন্য আমরা একটি প্রকল্প তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। এটি অনুমোদন পেলে আমরা কাজ শুরু করব।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..