শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:০৪ পূর্বাহ্ন
আর্ন্তজাতিক ডেস্ক : ইউক্রেনকে নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো। এটি হলে ইউক্রেনের আকাশে রুশ যুদ্ধবিমান ওড়া নিষিদ্ধ হয়ে যেতো। কিন্তু তাতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধার শঙ্কা রয়েছে দাবি করে এ প্রস্তাবে রাজি হয়নি পশ্চিমারা। এতেই মারাত্মক ক্ষেপেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বলেছেন, এখন থেকে ইউক্রেনে যত মানুষ মারা যাবে, তার জন্য ন্যাটোও দায়ী থাকবে।
বিবিসি জানিয়েছে, শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ইউক্রেনের জনগণের উদ্দেশে দেওয়া এক টেলিভিশন ভাষণে জেলেনস্কি অভিযোগ করে বলেন, তাদের দেশের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসনের মাত্রা আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে এটা পশ্চিমা নেতারা জানেন আর তারা শহর ও নগরগুলোতে বোমা হামলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ভ্লাদিমির পুতিনকে লাইসেন্স দিয়ে দিচ্ছেন।
রাজধানী কিয়েভ থেকে দেওয়া বলে কথিত ভিডিও ভাষণে তিনি বলেন, ‘নতুন হামলা ও হতাহত অনিবার্য, এটা জানার পরও ন্যাটো ভেবেচিন্তে ইউক্রেনের আকাশ বন্ধ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ ওই জোটের নেতারা নো-ফ্লাই জোনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ইউক্রেনের শহর ও গ্রামগুলোতে আরও বোমাবর্ষণের সবুজ সংকেত দিয়ে দিল।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, একই দিন এর আগে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ৩০ সদস্যের ন্যাটো সামরিক জোটের নেতাদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের নিন্দা ও ন্যাটো জোটের কোনো সদস্য দেশ আক্রান্ত হলে পরস্পর পরস্পরকে রক্ষা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এর নেতারা।
কিন্তু রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র থেকে ইউক্রেনের আকাশকে মুক্ত রাখতে জেলেনস্কির চাওয়া সাহায্যের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে রশিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে বলে আশঙ্কায় এমন সিদ্ধান্ত নেন তারা। তবে পুতিনকে শাস্তি দেওয়ার জন্য ইউরোপ আরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বৈঠকে ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ ইউক্রেনের পরিস্থিতিকে ‘ভয়ঙ্কর’ বলে বর্ণনা করেন কিন্তু জানান, এই জোটের বাহিনীগুলো স্থল বা আকাশপথে ইউক্রেনে প্রবেশ করবে না।
পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলেন, ‘নো-ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করলে ন্যাটোর যুদ্ধবিমানগুলো রাশিয়ার যুদ্ধবিমানগুলোকে গুলি করতে বাধ্য হবে, এতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় জেলেনস্কি বলেন, ‘আজ থেকে যেসব মানুষ মরবে, তারা আপনাদের কারণেও মরবে। মরবে আপনাদের দুর্বলতার কারণে, আপনাদের বিচ্ছিন্নতার কারণে। আজ ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলন হলো। একটি দুর্বল সম্মেলন। একটি বিভ্রান্ত সম্মেলন। এমন একটি সম্মেলন যা দেখিয়েছে ইউরোপের স্বাধীনতার জন্য লড়াইটিকে অনেকেই প্রধান লক্ষ্য বলে বিবেচনা করছেন না।’
জেলেনস্কি আরও বলেন, ন্যাটো দেশগুলোর গোয়েন্দা সংস্থাগুলো শক্রদের পরিকল্পনা সম্পর্কে সবই জানে। তারা জানে রাশিয়া আক্রমণ অব্যাহ রাখবে। নেটো ভেবেচিন্তে ইউক্রেনের আকাশ বন্ধ না করার সিদ্ধান্ত দিল। ন্যাটো দেশগুলো একটি কাহিনি তৈরি করে বলছে, ইউক্রেনের আকাশ বন্ধ করে দিলে রাশিয়াকে ন্যাটোর বিরুদ্ধে সরাসরি আগ্রাসনের উস্কানি দেওয়া হবে। এটি আত্মসম্মোহিত দুর্বলদের বক্তব্য, যারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, যদিও তাদের অস্ত্রশস্ত্র আমাদের চেয়ে অনেকগুণ বেশি শক্তিশালী।
পরে তিনি ইউরোপজুড়ে চলা বড় ধরনের প্রতিবাদ নিয়ে কথা বলেন, প্রতিবাদকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘যদি ইউক্রেন বেঁচে না থাকে, ইউরোপও বাঁচবে না। ইউক্রেনের পতন হলে, পুরো ইউরোপেরও পতন হবে।’