1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০১ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস: শাশুড়ী-বৌ এর সম্পর্ক

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৭ মার্চ, ২০২২
  • ১০৬৭ বার পঠিত

আফতাব চৌধুরী:
গৃহ বা বাসঘর আমাদের সমাজের ভিত্তি। গৃহকে যদি আমরা সহজ না করি, পরিবেশকে যদি সুন্দর না করি, ত্যাগের দ্বারা নির্মল না করি তবে অর্থপার্জনের সহস্র নতুন পথ আবিস্কার হলেও দুগর্তি হতে আমাদের নিস্কৃতি মিলবেনা। পরিবারের সকল সদস্যের মাঝে যদি কথার মিল, কাজের মিল ও আদর্শের মিল থাকে তবেই গৃহে শান্তি রচিত হয়।অনেকক্ষেত্রে এ গৃহের পরিবেশক তুলনা করা যায় তুষের আগুনের সাথে যদি সেখানে থাকে অশান্তি আর সে অশান্তি যদি হয় শাশুড়ী ও বধুকে কেন্দ্র করে ।
এ পৃথিবীতে মানুষের মনই সব চাইতে রহস্যময়। তাই মানুষে মানুষে স¤পর্ক বোধ হয় সব চাইতে সূক্ষ¥ ও জটিল। কখন যে মনের সুতো ছিড়ে সুর কেটে যায়! তাই এ স¤পর্ক রচনা করা শুধু নয় একে বজায় রাখাও এক বিরাট ব্যাপার!
মা ও মেয়ের স¤পর্ক খুবই মধুর। মেয়ে যত বড় হয় ততই যেন মেয়ে মায়ের হƒদয়ের কাছাকাছি চলে আসে। অনেক সময় সেটা যেন পরিণত হয় বন্ধুত্বে। সুখে দুঃখে আনন্দে বেদনায় দুজন একে অপরের সাথে আবেগ-অনুভ‚তি ভাগ করে নেয়। কিন্তু প্রশ্ন হল শাশুড়ী ও বধূতে কেন স¤পর্ক মধুর হয়না? এ বধুটিইতো একজন মায়ের মেয়ে আর শাশুড়ী অন্য আর এক মেয়ের মা! তবে কেন এ ফাটল? কেন শাশুড়ী আর বৌ মানে দুপক্ষ দুমেরুতে অবস্থান! কষ্টের মুখোমুখি হই যখন দেখি এক প্রবীণ শ্বশুর ছেলের বৌ এর নীরব অবহেলা আর তাচ্ছিল্যে চোখের পানি ফেলেন। বিষ¥য় বেদনায় আহত হয় মন যখন প্রায় বৃদ্ধ শ্বশুর শাশুড়ী ছেলে আর বৌ এর শান্তির জন্য নিজেদের গুটিয়ে ফেলেন এবং একই ছাদের নীচে আলাদা থাকেন।
একটা সময় ছিল যে সময়ে শাশুড়ীর আদেশ নির্দেশ মেনে চলাই ছিল বৌ এর কর্তব্য। আর নানা ভাবে এমনকি সাহিত্যেও শাশুড়ী মানে দজ্জাল এবং ননদিনী হচ্ছে রায় বাঘিনী কিন্তু সে যুগ হয়েছে বাসী -এখন সময়ের পরিবর্তনে স¤পর্কের ধরনও বদলে যাচ্ছে। ব্যক্তি স^াতন্ত্র্যের এ সময়ে সন্তানকেও যেখানে প্রত্যক্ষ শাসন বা আদেশ নিষেধ করা যায় না সেখানে ছেলের বৌ এর স^াধীনতায় হস্তক্ষেপ, এটা কোনভাবেই গ্রহনীয় নয়। কিন্তু তাই বলে স¤পর্ক তিক্ত বা ‘সাপে নেউলে’ হবে কেন? বিভেদের প্রাচীর কেন দু’ জনের মাঝে? ছেলেকে বিয়ে করাতে মা বাবার কত উৎসাহ, আনন্দ আর আগ্রহ নিয়ে থাকেন যাতে দুটি পরিবারের মাঝে এক নিবিড় আত্মীয়তার বন্ধন গড়ে উঠে। যে মেয়েটিকে মা-বাবা একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত আদর মমতা আর যতেœ লালন করেছেন সে মেয়েটিকে বিয়ের মাধ্যমে বলতে গেলে চিরতরে বিসর্জন দিতে হয়। বৌ হয়ে মেয়েটি যে পরিবারে আসে সেতো এ পরিবারের একজন সদস্য হয়েই আসে। তারপরেও কেন ভুল বুঝাবুঝি কেন একে অপরের দোষ ত্রæটি খোঁজে, কেন একে অন্যে দ্বন্ধ লাগিয়ে থাকে, বিশেষ করে বৌ-শ্বাশুড়ীর মধ্যে।
সাধারণত ঃ দরিদ্র পরিবারে এ স¤পর্কে যে তিক্ততা বা বিভেদের সৃষ্টি হয় তার পিছনে থাকে অর্থনৈতিক কারণ। ‘অর্থ যার হাতে ক্ষমতা তার মুঠোয়। দেখা যায় এসব ক্ষেত্রে বৃদ্ধ পিতা মাতাকে এক সময় সংসার থেকে বিতাড়িত হতে হয়। আবার স^চ্ছল বা মধ্যবিত্ত পরিবারেও বধূটি নির্যাতিত হয় যৌতুক জনিত কারণে অর্থাৎ এখানেও অর্থলিপ্সা মূল কারণ। এসবের করুণ চিত্র প্রায়ই দেখি পত্র-পত্রিকায়। কখনো রিজিয়ার মত পুত্রবধুকে পুড়িয়ে মারা হয় বা মা¤মীকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। কিন্তু অর্থনৈতিক স^চ্ছলতা আছে-প্রাচুর্য আছে-ভোগ বিলাসের সব উপকরণ আছে এমন পরিবারে কেন শাশুড়ী বৌ এ স¤পর্কটা মধুর হয়না? তবে কি একে বলা যাবে মনস্তাত্বিক বিভেদ?
একবার নারী নির্যাতন বিষয়ে এক সেমিনারে একজন ভদ্রলোক বললেন তিনি বিধবা মায়ের একমাত্র সন্তান কিন্তু ‘মা ও স্ত্রী’ এ দুয়ের সমন্বয় করতে গিয়ে বড্ড বিপাকে আছেন তিনি। কর্ম প্রতিষ্ঠান থেকে কখনো নিশ্চিন্ত বা প্রশান্ত চিত্তে ঘরে ফেরার আনন্দটুকু তিনি অনুভব করতে পারেন না। আসলে ‘এ দুই নারীর’ মাঝে সবচাইতে করুণ অবস্থা হয় এ ছেলেটির অনেকটা ‘শ্যাম রাখি না ক‚ল রাখি’ এবং এক সময় বাধ্য হয়ে ছেলেটিকে একদিকে অবস্থান তো নিতেই হয়।
আমি মনে করি ব্যাপারটা দু’পক্ষের। যে কোন স¤পর্কের ভিত রচিত হয় বিশ্বাস, ভালবাসা আর পারপরিক সমঝোতার মাধ্যমে। যে মেয়েটি ভিন্ন এক পরিবেশ থেকে অন্য এক নতুন পরিবেশে আসে তাকে কিছুটা সময় দিতেই হবে। যে সময়ে সে সবাইকে জানবার, বোঝার এবং শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস করার ব্যাপারে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারে। তবে এর জন্য তার ভিতরে যে মানসিকতা, সে মানসিকতার ভিতটুকু তৈরী করে দিতে হবে মাকে। মা ভাল হলে-মায়ের কাছ থেকে সুশিক্ষা পেলে কোন ছেলের বৌ অন্যরকম হতে পারে এটি আমি বিশ্বাস করিনা। অতীতে মেয়েরা ধরেই নিত শ্বশুর বাড়ী আমার আসল ঠিকানা অতএব সেখানে আমাকে যে ভাবে হোক মানিয়ে নিতেই হবে। অবশ্য মেয়েদের নিজস^ ঠিকানা বা ঘর আদৌ আছে কিনা এ বিষয়টি এখানে ভিন্ন প্রসংগ।
অধিকার চাপিয়ে দেওয়া কিন্তু ঠিক নয় তোমাকে এভাবে চলতে হবে ‘মানতে হবে’ ‘করতে হবে’ এ গুলো যদি আদায় করতে যাওয়া হয় তাহলে সংঘাত অনিবার্য। ‘ছাড় দিতে হবে’ – অর্থাৎ ত্যাগ করতে হবে-ত্যাগের আদর্শ মনের মধ্যে থাকতেই হবে এবং দুপক্ষের ক্ষেত্রে এটি দরকার। অনেক ক্ষেত্রে সামান্য ভুল বোঝাবুঝির কারণেও স¤পর্কের বিভেদ বিন্দু থেকে সিন্দুতে পরিণত হয়। তাই খোলাখুলিভাবে মনের কথা প্রকাশ করা দরকার এতে কমিউনিকেশন গ্যাপ বোধহয় হয় না।
‘আমিই সব’ -এ সংকীর্ণতা বোধই স¤পর্কে ফাটল ধরায়। স^ার্থের কাছে যদি প্রাণের মাধুর্য নির্বাসিত হয় ব্যক্তি স^াতন্ত্র্য যদি আনন্দের চেয়ে বেশী মূল্যবান হয়, প্রতাপ বা অধিকার বোধ যদি স্নেহের উপর আধিপত্য বিস্তার করে তবে সে সুখ বলা যায় ‘আত্মসুখ’ এটিও কিন্তু সাময়িক এটি আত্মপ্রবঞ্চনারই সামিল। আমার কেবলি মনে হয় আমরা যেন যান্ত্রিকতার শিকার হচ্ছি। যন্ত্র সভ্যতা আমাদের হƒদয়ের মাধুর্য যেন হরণ করছে, আমরা হয়ে পড়ছি কৃত্রিম। অবিশ্বাস, হিংসা, পরশ্রীকাতরতা ক্রমেই ঘিরে ফেলছে আমাদের। ফলে জীবনের সৌন্দর্য ও ভালবাসার স্থান দখল করছে দ্বেষ-হিংসা ও বিলাস বিভ্রম। অথচ শান্তি আছে ভালবাসা, প্রীতি মমতা ও আন্তরিকতার মাঝে।
পরিবার হচ্ছে সমাজের ভিত্তি। পারিবারিক শান্তি একজন মানুষের মেধা, যোগ্যতাকে বিকশিত করার ব্যাপারে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখে। পরিবারের ছোট শিশুটি যদি দেখে তার মায়ের সাথে দাদীর মিল নেই তাহলে তার মনের অবস্থাটা কেমন হয়? মা বা দাদী যে কোন একজন তার কাছে কতটুকু ছোট হয়ে যায়?
যুগের প্রয়োজনে যৌথ পরিবার বিলুপ্ত হচ্ছে। আমরা অনেক ক্ষেত্রে আলাদা থাকতে বাঁধ্য হচ্ছি বা পরিস্থিতি বাধ্য করছে সেটা হতেই পারে কিন্তু এতে শাশুড়ী ও বৌ এর স¤পর্ক তিক্ত হবে কেন?
শাশুড়ী হয়ে আমরা ভুলে যাই এক সময় আমিও বৌ ছিলাম এবং এখন যে বৌ তাকেও ভাবতে হবে একটা সময়ে তাকেও শাশুড়ী হতে হবে, ব্যাপারটা শুধু মাত্র সময়ের। তাহলে এ সময়কে আমরা কেন সুন্দর ও মধুর করে তুলতে পারিনা? কেন ভোগ সর্বস^ বিষয়মুখী জীবনযাত্রাকে কিছুটা হলেও আলাদা করতে পারিনা? এ যে মানুষের অন্তর্নিহিত সত্যকে আবৃত করে রাখে ফলে অতি কাছের মানুষের প্রকৃত পরিচয় পাইনা বা পেতে চেষ্টা করিনা।
শাশুড়ী ও বধূ দুজনেই নারী। সুতরাং আমাদের অবস্থান কিন্তু এক জায়গায়-এ দৃষ্টিকোণ থেকে যদি আমরা অগ্রসর হই তবে মনে হয় একে অপরের কাছের মানুষ হওয়া যায়। নারী নির্যাতনের কথায় আমরা সোচ্চার হই প্রতিবাদী হই আর নির্যাতন শুধু শারীরিক নয় মানসিকও-এ মানসিক চাপ কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এ দু’ পক্ষের বৈরী অবস্থানের ফলে সৃষ্ট।
অতএব আসুন আমরা আমাদের মধ্যকার যত তিক্ততা, মলিনতা, সংকীর্ণতা, ভুল বোঝাবুঝি সব কিছুর অবসানে এগিয়ে আসি। পরিবারকে করে তুলি শান্তির সৌহার্দ্যের, ভালবাসার, সমঝোতার শ্রদ্ধার-প্রাচুর্য না থাক-বিত্ত বৈভবের ছড়াছড়ি না থাক-শান্তির সুধাতো থাকবে যে শান্তির অমিয় ধারায় প্লাবিত হবে আমাদের সন্তানেরা!! সাংবাদিক-কলামিস্ট।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..