বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৬:৩০ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : আসন্ন রমজান মাসে বিনা বেতনে হোটেল-রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের ছাঁটাই বন্ধ, ঈদুল ফিতরে উৎসব বোনাস প্রদান এবং ৮ ঘন্টা কর্মদিবস, নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র প্রদানসহ শ্রমআইন কার্যকর করার দাবিতে ২৩ মার্চ শহরের চৌমুহনা এলাকায় মৌলভীবাবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন বিক্ষোভ মিছিল করেছে। মিছিল পরবর্তীতে সন্ধ্যা ৬.৩০ টায় চৌমুহনাস্থ দলীয় কার্যালয়ে মৌলভীবাবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তারেশ চন্দ্র দাশের সভাপতিত্বে এক শ্রমিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামাল, মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়া, মৌলভীবাবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মোঃ শাহিন ও প্রচার সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রাজিব । সভায় বক্তারা বলেন রমাজন মাস আসার আগেই দ্রব্যমূল্যের বাজার উর্দ্ধমূখী, যা রমজান মাসে আরও বাড়বে। সেরকম অবস্থায় রমজানকে অজুহাত করে মালিকরা হোটেল-রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদেরকে বিনাবেতনে শ্রমআইন লঙ্ঘন করে ছাঁটাই করে দেন। এমনিতেই সারা বছর হোটেল-রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের চাকুরিচ্যুতি করা, স্বাস্থ্য সম্মত কর্মপরিবেশ ও থাকা-খাওয়ার সু-ব্যবস্থা না থাকা, কথায় কথায় বিনা কারণে চাকুরিচ্যুতি করা, নিয়োগপত্র-পরিচয়পত্র না দিয়ে শ্রম আইনগত সুবিধা পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা এবং শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন ইত্যাদি সমস্যা-সংকট নিয়ে হোটেল-রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা চালাতে হয়। তদোপুরি রমজান মাস আসলে আরেক দফা ছাঁটাই নির্যাতনের খড়্গ নেমে আসে শ্রমিকদের কর্মজীবনে। চলমান বৈশ্বিক মন্দাজনিত পরিস্থিতির মধ্যে ২০২০ সাল থেকে বৈশ্বিক মহামারি করোনা প্রাদূর্ভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিক ও শ্রমজীবীদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হোটেল-রেস্টুরেন্ট শ্রমিকরা। করোনাকালে হোটেল শ্রমিকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে, বিনা চিকিৎসায়, বাসস্থানের সংকট ইত্যাদিতে জর্জরিত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছে। আসন্ন রমজান মাসে যারা চাকুরিতে নিয়োজিত তাদেরকে আরেক দফা ছাঁটাই করা হলে তারা কোথায় যাবে? চাল, ডাল, তেল, লবন, পিয়াজ, আদা, রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতিতে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়ছে। তার উপর সরকার গণশুনানির নাটক করে আরেক দফা গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করতে চলেছে। প্রতি বছরই দফায় দফায় জ¦ালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুত, পানির মূল্য বৃদ্ধিসহ বাড়িভাড়া, গাড়িভাড়া, চিকিৎসা, শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির ফলে জাতীয় ও জনজীবনের সংকট প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজে ধনী-গরীবের বৈষম্য দ্রুত বৃদ্ধি হচ্ছে। অথচ বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে হোটেল-রেস্টুরেন্ট-মিস্টি-বেকারি শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দেওয়া হচ্ছে না। আজকের বাজারদর হিসেব করলে দেখা যায় একজন মানুষের কোন রকমে খেয়ে বেঁচে থাকতে হলে তিন বেলা খাবারের জন্য দৈনিক (৪০+৮০+৮০)টাকা = ২০০ টাকা খরচ করতে হয়। সেখানে ৬ সদস্যের একটি শ্রমিক পরিবারে বাসাবাড়িতে খরচ হিসেবে দৈনিক এক হাজার টাকা ধরলে মাসে ৩০ হাজার টাকা প্রয়োজন। এর সাথে বাসাবাড়া, চিকিৎসা, সন্তানের শিক্ষা, বিনোদন, যাতায়াতসহ অন্যান্য সকল প্রয়োজন যুক্ত করেই মজুরি নির্ধারণ হওয়া যৌক্তিক। অথচ আমাদের নামে মাত্র মজুরি প্রদান করছে মালিকরা। তদোপরি রমজান মাস আসলে ব্যবসা মন্দার অজুহাত দেখিয়ে অধিকাংশ মালিকরা হোটেল রেস্টুরেন্ট মিস্টি বেকারী শ্রমিকদের বিনা বেতনে ছাঁটাই করে দেন। ফলে পবিত্র এই মাসে ছাঁটাইকৃত হোটেল রেস্টুরেন্ট মিস্টি বেকারী শ্রমিকদের জীবনে নেমে আসে চরম অনিশ্চয়তা, পরিবার-পরিজন নিয়ে শ্রমিকরা সিয়াম সাধনার পরিবর্তে অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হন। এমনকি শ্রমিকরা ঈদের আনন্দ উৎযাপন থেকেও বঞ্চিত হয়। অথচ শ্রমিকদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমে মালিকদের পুঁজি আরাম-আয়েশ বৃদ্ধি হয় আর শ্রমিকদের সৃষ্ট মুনাফায় মালিকপক্ষ মহাধুমধামে ঈদ উৎযাপন করেন। ঈদ উৎসবের সময় হোটেল রেস্টুরেন্ট মিস্টি বেকারী শ্রমিকরা কোন উৎসব বোনাস পান না। অথচ বাংলাদেশ শ্রমআইন-২০০৬(অদ্যাবধি সংশোধিত) এর ধারা ২(২ক) এবং বাংলাদেশ শ্রমবিধিমালা-২০১৫ এর বিধি ১১১(৫) অনুযায়ী প্রত্যেক শ্রমিককে উৎসব বোনাস ও ছুটি প্রদান করা আইনত বাধ্যতামূলক। অথচ হোটেল মালিকরা সরকারী আইন লঙ্ঘন করে মনগড়া নিয়মে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। শুধু আইনগতভাবে নয় ধর্মীয় মূল্যবোধ ও মানবাধিকারের দিক থেকেও হোটেল-রেস্টুরেন্ট-মিস্টি-বেকারি শ্রমিকদের রমজান মাসে বিনাবেতনে ছাঁটাই করা অন্যায়। হোটেল শ্রমিকরা দৈনিক ১২/১৪ ঘন্টা অমানবিক পরিশ্রম করে অর্ধাহারে-অনাহারে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হন, যার কারণে হোটেল শ্রমিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
সভা থেকে আসন্ন রমজান মাসে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, ঈদুল ফিতরে মাসিক বেতনের সমপরিমাণ উৎসব বোনাস প্রদান এবং ৮ ঘন্টা কর্মদিবস, নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র প্রদানসহ শ্রমআইন কার্যকর, অবিলম্বে হোটেল-রেস্টুরেন্ট সেক্টরে নি¤œতম মজুরি বোর্ড গঠন করে বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে বাঁচার মতো মজুরি নির্ধারণ, দফায় গ্যাস-বিদ্যুত-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি বন্ধ করা, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানো এবং স্বল্পমূল্যে রেশনিং চালুর দাবি জানান।