বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:৪৭ পূর্বাহ্ন
সৈয়দ আশফাক তানভীর, সরজমিন থেকে ফিরে: হাকালুকি হাওরের নাগুয়া বিলের ইজারাদার এবার শুকিয়ে মাছ ধরতে লাগিয়েছেন সেচ মেশিন। গত দুই দিন বিরুপ আবহাওয়া ও গুড়িগুড়ি বৃষ্টির ফলে সেচ যন্ত্রগুলো অচল ছিলো নাগুয়া বিলে। এর পাশেই তুরল বিলে ৩টি মেশিনে সেচ চলছিলো বেশ দ্রæত গতিতে। সরেজমিন ২৯মার্চ নাগুয়া ও তুরল বিলে গেলে এমন দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। রহস্যময় কারণে তারা নীরব ভূমিকা পালন করছেন।
ইজারাকৃত নাগুয়া বিলের ইজারার শর্তভঙ্গ করে অবৈধভাবে সেচ মেশিনে বিলের পানি শুকিয়ে মাছ শিকারের এমন আয়োজন করেছে বিল ইজারাদাররা। হাকালুকির ইজারাকৃত তুরল,নাগুয়া বিলের ইজারাদার ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে সেচ মেশিন দিয়ে বিল শুকিয়ে মাছ আহরণ করতে থাকে। প্রায় ১৫দিন যাবৎ সেচ মেশিনে অভয়াশ্রমসহ বিলের পানি শুকিয়ে প্রভাবশালীরা লাখ লাখ টাকার মাছ লুট করেছে।
জুড়ী উপজেলা পরিষদের চলতি মাসের সমন্বয় সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেন স্থানীয় জায়ফরনগর ইউপি চেয়ারম্যান হাজী মাছুম রেজা। এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু ইউসুফকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সভায় সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু মৎস্য কর্মকর্তার গোপন আঁতাতেই ইজারাদার অবৈধভাবে বিল শুকিয়ে মাছ আহরণ করছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। যার কারণে তিনি কার্যকর কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় লোকজন।
নাগুয়া বিলের ইজারাদারের বিরুদ্ধে অবৈধ ভাবে সেচ মেশিন দিয়ে বিলের পানি শুকিয়ে মাছ শিকার বন্ধসহ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য হাকালুকি মৎস্য জীবি সমিতির সভাপতি বেলাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মিরজান আলী বাদী হয়ে গত ১৪ মার্চ মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় সচিব বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ দায়েরের পর এখন পর্যন্ত কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
হাওরের নাগুয়া বিলের ইজারাদার ফয়েজ আলী জানান, তিনি সেচ মেশিন দিয়ে কখনই বিল শুকাননি। বিলে বসানো মেশিনগুলো কার? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এড়িয়ে যান।
এ ব্যাপারে জায়ফরনগর ইউপি চেয়ারম্যান হাজী মাছুম রেজা জানান, উপজেলা পরিষদের সভায় বিষয়টি উথাপন করা হলেও মৎস্য কর্মকর্তা নানা টালবাহানা শুরু করেন। তিনি সরেজমিন ঘটনাস্থলে যাওয়ার জন্য লোকবল দাবি করেন। তখন স্থানীয় মেম্বারসহ কয়েকজনকে উনার সাথে যাওয়ার জন্য দিয়েছি। আমার দেয়া লোকজন ঘটনাস্থলে গেলেও মৎস্য কর্মকর্তা ওইখানে যাননি।
জুড়ী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু ইউসুফ জানান, সেচ মেশিন দিয়ে পানি শুকিয়ে যারা বিলের মাছ আহরণ করবে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা পরিষদের সভায় এবং লিখিত অভিযোগের পরও কেন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছেন না? এর উত্তরে তিনি দ্রæত আইনী ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানান।
জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা জানান, বিষয়টি জেনে আমি মৎস্য কর্মকর্তা ও থানা পুলিশকে ঘটনাস্থলে পাঠাই। কিন্তু ঘটনাস্থলে কাউকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় ইউপি সদস্যরা এ বিষয়ে কোন সহযোগিতা করেননি সেটা খুবই দুঃখজনক। তবে নতুন করে যদি সেচ মেশিন দিয়ে বিল শুকিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা কেউ কের তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।