1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০১:১২ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

পর্যটক প্রবেশে নিষাধাজ্ঞা থাকায় ফিরছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বনের প্রাণ

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১২ জুন, ২০২১
  • ২২২ বার পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদক :: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বনে ভ্রমণপিপাসু উৎপাত আর প্রকৃতির ওপর নানা অত্যাচার বন্ধ থাকায় বনে ফিরছে প্রাণিকুল ও বনের প্রাণ।

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান জাতীয় উদ্যান লাউয়াছড়া। ঘন সবুজ জঙ্গলে পরিপূর্ণ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানটি পশ্চিম ভানুগাছ রিজার্ভ ফরেস্টের অন্তর্ভুক্ত।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঘন সবুজ জঙ্গলে পরিপূর্ণ ১২৫০ হেক্টর জায়গা নিয়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এই রেইন ফরেস্টে রয়েছে প্রায় ৪৬০ প্রজাতির জীব বৈচিত্র্য, যেসবের মধ্যে রয়েছে ১৬৭ প্রজাতির গাছ, ৪ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ প্রাণী, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ২৪৬ প্রজাতির পাখি। ১৯৭৪ সালের বন্যপ্রাণী আইনের অধীনে বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৬ সালের ৭ই জুলাই এই উদ্যানটিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে। সুন্দরবন পরেই রয়েছে লাউয়াছড়া এর স্থান।

ব্রিটিশ শাসনামলে এ অঞ্চলে বৃক্ষায়ন করলে ধীরে ধীরে তা আজকের এ ২য় সুন্দরবনে পরিণত হয়। এ জাতীয় উদ্যানে গত এক বছরে মহাবিপন্ন ও বিপন্ন বিরল প্রকৃতির নানা প্রাণিকুলের সঙ্গে রয়েছে বিপন্ন উদ্ভিদকুল। প্রকৃতি নীরব নিস্তব্ধ পরিবেশ পেলেই বেড়ে উঠে আপন মনে। শৌখিন ফটোগ্রাফার আর প্রাণী গবেষকদের ক্যামেরায় ধরা পড়ছে নানা প্রাণীর ছবি।

করোনায় লকডাউনে দুই দফায় প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ লাউয়াড়া জাতীয় উদ্যান। এ সময়ে লাউয়াছড়া বনে নেই কোনো কোলাহল, মানুষের কোনো যাতায়াত। নীরব নিস্তব্ধ বনের নানা প্রাণিকুল ঘুরে বেড়াচ্ছে সারা পাহাড়। তাদের খাবারের নেই কোনো কমতি ও চলাচলের সীমাবদ্ধতা। প্রাণিকুলের মতোই উদ্ভিদকুলও দীর্ঘ সময় পেয়েছে আপন মহিমায় ফিরে। বৃষ্টি আর ঠান্ডা বাতাস তাদের জীবণের অনুষঙ্গ। নানা জাতের গাছপালা আর লতাপাতায় এখন ভরে উঠছে এ জাতীয় উদ্যান। গাছের যেমনি বেড়েছে ডালপালা, তেমনি লতাপাতার বেড়েছে আগা, প্রকৃতি তার সাজগোজ সেরে নিয়েছে এ সময়ে। বিপন্ন বন ফিরে পেয়েছে তার প্রাণ। গত কয়েক দশকে এই বনের গভীরতা অনেক হ্রাস পেয়েছে।

প্রাচীন গাছগাছালি চুরি, মাগুরছড়ায় গ্যাসক‚প বিস্ফোরণ, বনের ভেতর দিয়ে উচ্চ শব্দে রেল ও সড়কপথে যানবাহনের যাতায়াত, গাড়ির হর্র্ণ, অত্যধিক দর্শনার্থীর হইহুল্লোড়, পার্শ্ববর্তী টিলাভ‚মিতে হোটেল, কটেজ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম সব মিলিয়ে অস্থিত্ব সংকটে পড়েছিল বন ও বন্যপ্রাণী। কিন্তু প্রকৃতি ও জীব জন্তু লাউয়াছড়া বনের প্রধান আকর্ষন।

আগর, চাপলিশ, আকাশমণি, সেগুন, জারুল, আওয়াল ও লোহাকাঠের মত দর্লভ উদ্ভিদ রয়েছে ৪৬০ প্রজাতি। রয়েছে ২৪০ প্রজাতি পাখি। রয়েছে ২০ও ৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী ও সরীসৃপ প্রানী। এছাড়াও সাদা বানর লজ্জাবতী বানর, হনুমান, সজারু, শিয়াল, মেছো-বাঘ, চিতা বিড়াল, কাঠবিড়ালি, বন্য কুকুর, বনবিড়াল, বনরুই, বনমোরগ, বাঘডাশ, অজগর সাপ, কানা সাপ, গুই সাপ, বনবিড়াল, বিরল প্রজাতীর উল্লুক ইত্যাদি দেখতে পাবেন লাউয়াছড়া জঙ্গলে। পাখির মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি যেমন ময়না, শালিক, মতুরা, ধনেশ, বাদামী ঘুঘু, সবুজ ঘুঘু, মথুরা ইত্যাদি অন্যতম।

এশিয়ার মধ্যে বিরল ক্লোরোফোর্মের গাছ রয়েছে এখানে যা সত্যিই আকর্ষণীয়। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের দুপাশে ঘন বন আর মাঝখান দিয়ে ট্রেন এর রাস্তা অসাধারন। তাছাড়া এখানে খাসিয়া উপজাতিদের বসবাস। খাসিয়া উপজাতিদের গ্রামগুলো পাহাড়ের উঁচুস্থরে ও গভীর বনের মধ্যে যা শহর থেকে অনেক দুরে। লাউয়াাছড়া বনকে বলা হয়ে থাকে প্রকৃতির স্বর্গের রাজ্য যা ভ্রমনে প্রশান্তি এনে দিবে।

লকডাউনের কারণে পর্যটক প্রবেশে নিষাধাজ্ঞা থাকায় বন যেন ফিরে পেয়েছে তাদের রাজত্ব। ছায়া ডাকা পাখির কোলাহলমুখর এ উদ্যানটিতে এখন চোখে পড়বে নানা পাখির কলতান। যান্ত্রিক সভ্যতার বাহিরে অন্য একটি জগত এখন পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেখানে প্রকৃতি সৌন্দর্যকে অবলোকন করা যায় আপন মনে। ডানা মেলেছে বড়-বড় বৃক্ষরাজি, পাখির কলতান, উঁচু-নিচু পাহাড়, নাম না জানা অসংখ্য পাহাড়ি ফুল, প্রকৃতির সবুজ জগত।

সম্প্রতি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ঘুরে বাস্তবতা উপলব্ধিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আব্দুল আজিজ জানান, করোনার কারণে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পর্যটক প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে প্রাণিকুলের ওপর। সকালে রাস্তা দিয়ে আসার সময় মায়া হরিণের ডাক শোনা যায়। আগে সচরাচর এমন ডাক শোনা যেত না। পর্যটক না থাকার কারণে বনের স্বাভাবিক পরিবেশে বন্যপ্রাণীর এমন স্বস্তি দেখা দিয়েছে।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির হেডম্যান জিডিশন প্রধান সুচিয়াং বলেন, এখন মানুষের আনাগোনা না থাকায় বন যেন দিন দিন জীবন্ত হয়ে উঠছে। নানা প্রজাতির পশুপাখি এখন আপন মনে ঘুরে বেড়াচ্ছে বনে বনে। বানর, শূকর, সাপসহ নানা প্রাণী এখন অনায়াসেই দেখা যায়। প্রকৃতি আরো সুন্দর হয়ে উঠছে তার আপন মহিমায়।

বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, লাউয়াছড়া বন্যপ্রাণীর জন্য সমৃদ্ধ একটি বন। দেশের বিপন্ন ও বিলুপ্ত নানা প্রাণীর দেখা মিলছে এ উদ্যানের বনে। ডাক শোনা যাচ্ছে বন্যপ্রাণীর।

তিনি আরও বলেন, করোনাকালীন সময়ে বন্যপ্রাণী অবাধে চলাচল করছে বা উল্লুকসহ অন্যান্য প্রাণীও গর্ভবতী হয়ে বাচ্চাও প্রসব করছে। এ বনকে রক্ষা করতে হবে, রক্ষা করতে হবে প্রাণীদের। তবেই প্রাণ ফিরে পাবে পরিবেশর।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..