বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ০৬:১৬ পূর্বাহ্ন
তানভীর চৌধুরী : হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম উৎসব দুর্গাপূজা। ২০ অক্টোবর থেকে শুরু হবে সবচেয়ে বড় এ উৎসব।এ উপলক্ষে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উপজেলাগুলো জমে উঠেছে পূঁজোর কেনাকাটা। দুর্গাপূজার বেশি দিন না থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতি বেড়েছে বাজারে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পূজার এখনও ৮দিন বাকি রয়েছে। এ কারণে এখন পূজার সামগ্রী বেশি বিক্রি হচ্ছে। সেই সঙ্গে কিছু শাড়ি ও সিট কাপড় বিক্রি হচ্ছে। গার্মেন্টস পণ্য এখনও সেভাবে বিক্রি শুরু হয়নি। আরও কয়েকটা দিন গেলে বাজারে বিক্রি বাড়বে বলে আশা তাদের।
বৃহস্পতিবার (১২অক্টোবর) জেলার বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, নিজেদের কেনাকাটার পাশাপাশি দেবী দুর্গাকে সাজাতে বিভিন্ন সাজ-সরঞ্জাম কিনছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এছাড়া, বাজারের বিভিন্ন শাড়ি ও কাপড়ের দোকান, জুতা ছাড়াও নানা প্রসাধনী সামগ্রী কিনতে দেখা গেছে।
দেখা যায়, শাখা, শঙ্খ, সিঁদুর, প্রতীমার শাড়ি, কীর্তনের মালা, কদম মালা, ঘণ্টা, ঘট, প্রদীপ, আগরদানি, ঠাকুরের মালা, জবের মালা, মুকুট, ধুতি, পাঞ্জাবিসহ পূজার নানা জিনিসপত্র কেনাকাটা করছেন তারা। মা দুর্গা আর সরস্বতীকে সাজাতে কিনছেন পছন্দের শাড়ি, মুকুট। নিজেদের জন্য নিচ্ছে বাহারি রকমের শাখা, শঙ্খ। দেবী দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মীকে সাজাতে বিক্রি হচ্ছে শাড়ি, মালা, মুকুট, নেইল পালিশসহ অন্যান্য সামগ্রীও।
পূজার কেনাকাটা করতে আসা সুনীলা সিনহা বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব এটি। আমাদের পূজার জন্য কেনাকাটা করে থাকি। আজকে এসেছি মা দুর্গার জন্য কিনতে। আরও দুই দিন বাসার সবার জন্য কেনাকাটা করব। মায়ের জন্য শাঁখা, সিঁদুর, আলতা, শাড়ি কিনেছি, মহালয়ায় এগুলো দিয়ে প্রতীমা সাজাব।’
পূজার শাড়ি কিনতে আসেন মৌলভীবাজার সদরে শিক্ষক রনেন্দ্র কুমার দেব বলেন ‘পূজার আর বেশি দিন নেই। তাই আগেই শাড়ি কিনে নিচ্ছি। একইসঙ্গে পরিবারের অন্য সদস্যদের পোষাক কিনেছি। এরপরে আস্তে আস্তে পূজার অন্য জিনিসপত্রগুলো কিনবো। কেননা একসঙ্গে সব কিনতে গেলে সমস্যা হয়। তাই কিছু কিছু করে কিনে রাখছি। পূজার বিভিন্ন সামগ্রী কিনবো মহালয়ার আগে।’
কমলগঞ্জ উপজেলার সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষিকা গৌড়ি দেবী বলেন, ‘শাড়ি-কাপড়গুলো আগে কিনে নিলাম। নতুবা পরে মার্কেটে ভিড়ের মধ্য কিনতে হয়। এতে করে ঠিকঠাক জিনিস কিনতে সমস্যা হয়। আবার দামও বেশি পড়ে। তাই আগেই শাড়ি-কাপড়গুলো কিনে নিচ্ছি। একইসঙ্গে সম্ভব হলে জুতা, স্যান্ডেলও কিনে নেব। আর পূজার দুই-একদিন আগে প্রসাদসহ অন্য জিনিসপত্র কিনবো।’
পবিত্র সরকার বলেন, ‘বাজার ঘুরে পোষাকের দাম মোটামুটি ভালো মনে হচ্ছে। তবে পূজার কয়েকদিন আগে কেমন দাম হবে সেটা বলা যাচ্ছে না। কারণ সে সময়টা ক্রেতাদের উপস্থিতি বেশি থাকবে দোকানগুলোতে। তাই দাম বেশি হতে পারে। এছাড়া পূজার ৮ থেকে ১০ দিন আগে জিনিসপত্র কিনলে নতুন ডিজাইনের পছন্দমত জিনিসপত্র পাওয়া যায়।’
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু- দলই বেলীর কার্যকরী কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাশ পাইনকা বলেন, চা শ্রমিকদের পূজার কেনা কাটা এখনও শুরু হয়নি। আজ বৃহস্পতিবার চা বাগানগুলোতে উতসব ভাতা পাওয়ার পর চা শ্রমিকরা পূজার কেনাকাটা বিশেষ করে কাপড় কিনবে ।
চা শ্রমিক কন্যা লক্ষী রাজভর জানায়, আজ বোনাস পাওয়ার পর পূজার কাপড় কেনা হবে।
কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী মুকুল বলেন, ‘পূজার এখনও ৮ দিন বাকি আছে। তাই পূজার কেনা-বেচা এখনও জমেনি। তবে বেচা-বিক্রি শুরু হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীরা তাদের পছন্দের শাড়ি কিনছেন। আশা করা যাচ্ছে, আরও পাঁচ থেকে ছয় দিন পরে জমবে কেনাবেচা।’
কাপড় ব্যবসায়ী প্রেমানন্দ দেবনাথ বলেন,পূজার বাজার আগে শুরু হলেও এ এলাকায় চা বাগানগুলোতে বোনাস দেওয়ার পর কাপড়ের বাজার জমে উঠে। তিনি আরও বলেন, আজ বৃহস্পতিবার রাত থেকে কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতা বেড়ে যাবে।
কমলগঞ্জের শমসেরনগর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল হান্নান বলেন, ‘বাজারে পূজার সামগ্রী বেশি বিক্রি হচ্ছে। জামা-কাপড় ও অন্যান্য পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে, তবে তুলনায় কম। পূজার এক সপ্তাহ আগে পুরোদমে শুরু হয় কেনাবেচা। আশা করা যাচ্ছে, আরও ৪ থেকে ৫ দিন পরে কেনাবেচা ভালো জমবে।’
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, শারদীয় দুর্গা পূজা উপলক্ষে পুলিশের একটা টিম প্রত্যেকটা বাজারে ডিউটি করছে। তাদের পাশাপাশি সাদা পোষাকে আরও একটা টিম কাজ করছে। কোনো ঝামেলা ছাড়া ব্যবসায়ীরা ভালো ভাবে যেন ব্যবসা করতে পারেন ও কাপড় কিনতে আশা ক্রেতারা নির্বিঘ্নে শপিং করে বাড়িতে ফিরতে পারেন সে জন্য আমাদের পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগীতা করা হচ্ছে। তাছাড়া প্রত্যেক বিট অফিসার যার যার সংশ্লিষ্ট বিটের বাজারে নজর রাখছে।’
উল্লেখ্য- হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব আসন্ন শারদীয় দূর্গাপূজা উপলক্ষে মৌলভীবাজার জেলায় ১ হাজার ৩৬ টি মন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ৮৮৪ টি সার্বজনীন এবং ১৫২ টি ব্যক্তিগত পূজামন্ডপ। পূজা মন্ডপ সমূহের মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ৯০ টি ,গুরুত্বপূর্ণ ২৯৫ এবং সাধারণ ৬৫১ টি।