রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ০৭:৫৩ অপরাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয় আজ। এদিন সকল দল, জোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করবেন নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং কর্মকর্তারা। আর প্রতীক বরাদ্দের মধ্যদিয়ে প্রচারে নেমে পড়বেন সকল প্রার্থীরা। প্রচারণার জন্য প্রার্থীরা সময় পাবেন ১৮ দিন।
এর আগে দল ও জোটের হিসাবনিকাশ চূড়ান্ত হয়। গতকাল ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ও জোটের মনোনয়ন প্রক্রিয়া। এদিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাকের পার্টিসহ বিভিন্ন দলের অনেক প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩২টি আসন ছেড়ে দিয়েছে। ক্ষমতাসীন দলটি জাতীয় পার্টির জন্য ২৬টি এবং শরিক তিনটি দলের জন্য ৬টি আসন ছেড়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। এদিকে প্রচারে আচরণবিধি ভঙ্গ করলে শাস্তি ও জরিমানার মুখোমুখি হবেন প্রতিদ্বন্দ্বীরা। এ বিষয়ে ইসি’র অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, মাঠের প্রচার-প্রচারণা সোমবার থেকে শুরু হবে। কারণ, এদিন প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে।
প্রতীক পাওয়া সাপেক্ষে পথসভা ও ঘরোয়া সভা করতে পারবেন। টানা ১৮ দিন প্রচার চালানোর সময় নির্ধারিত আছে।
প্রচারণায় যেগুলো করা যাবে না: সংসদীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ ও এর সংশোধনী (২০১৩) অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি কোনো ট্রাক, বাস, মোটরসাইকেল, নৌযান, ট্রেন কিংবা অন্য কোনো যান্ত্রিক যানবাহন নিয়ে মিছিল করা যাবে না কিংবা কোনো শোডাউন করা যাবে না; মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়ও মিছিল কিংবা শোডাউন করা যাবে না। অন্যদিকে সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকায় অবস্থিত দালান, বিল্ডিং, গাছ, বেড়া, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের খুঁটিতে বা যানবাহনে পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল লাগানো যাবে না; তবে দেশের যেকোনো স্থানে পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল রশিতে ঝুলিয়ে টানানো যাবে। শুধু মিছিল বা শোডাউন নয়Ñমসজিদ, মন্দির, গির্জা বা অন্য কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ে নির্বাচনী প্রচারণা করা যাবে না; মাইকে নির্বাচনী প্রচারণা দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে; নির্বাচনী প্রচারণার জন্য প্রার্থীর ছবি বা প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণামূলক কোনো বক্তব্য বা কোনো শার্ট, জ্যাকেট, ফতুয়া ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না; নির্বাচনী ক্যাম্পে কোনো কোমল পানীয় বা খাদ্য পরিবেশন বা কোনো উপঢৌকন প্রদান করাও যাবে না।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানে চাঁদা বা অনুদান দেয়া যাবে না; সরকারি ডাকবাংলো, রেস্ট হাউজ, সার্কিট হাউজ বা কোনো সরকারি কার্যালয়কে কোনো দল বা প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে প্রচারের স্থান হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না; নির্বাচন-পূর্ব সময়ে কোনো সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে রাজস্ব বা উন্নয়ন তহবিলভুক্ত কোনো প্রকল্পের অনুমোদন, ঘোষণা বা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন কিংবা ফলক উন্মোচনও করা যাবে না। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো গেইট বা তোরণ নির্মাণ করা যাবে না কিংবা চলাচলের পথে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না; নির্বাচনী প্রচারণার জন্য ৪০০ বর্গফুটের বেশি স্থান নিয়ে কোনো প্যান্ডেল তৈরি করা যাবে না; নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে বিদ্যুতের সাহায্যে কোনো প্রকার আলোকসজ্জা করা যাবে না; কোনো সড়ক কিংবা জনগণের চলাচলের স্থানে নির্বাচনী ক্যাম্প করা যাবে না। বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহৃত পোস্টার ও ব্যানার সাদাকালো হতে হবে; পোস্টারের সাইজ অনধিক ষাট বাই পঁয়তাল্লিশ সেন্টিমিটার এবং ব্যানার অনধিক তিন বাই এক মিটার হতে হবে; পোস্টার বা ব্যানারে প্রার্থীর নিজের প্রতীক ও ছবি ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির ছবি বা প্রতীক প্রকাশ করা যাবে না। বিধিমালায় পোস্টার ঝুলিয়ে লাগানোর কথা বলা হলেও নির্বাচনের সময় দেয়াল লিখনও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শুধু দেয়াল নয়, কোনো দালান, বাড়ি বা ঘরের ছাদ, সেতু, সড়ক দ্বীপ, রোড ডিভাইডার, যানবাহন বা অন্য কোনো স্থাপনায়ও প্রচারণামূলক কোনো লিখন বা অঙ্কন করা যাবে না।
এদিকে এসব বিধিনিষেধ প্রার্থীরা প্রতিপালন করছে কিনা তা দেখভালের জন্য ৮ শতাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভোটের মাঠে রয়েছে। ভোটের পর পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবেন। তারা বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি ও জেল-জরিমানা করবেন।
ওদিকে বিএনপি ও সমমনা অনেক দল আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। এজন্য নির্বাচনের পরিবেশ উৎসবমুখর রাখতে নানা কৌশল অবলম্বন করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তারই অংশ হিসেবে দলটি দলীয় প্রতীকের বাইরে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচন করতে অনুমতি দিয়েছে। এতে বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগের শতাধিক বিদ্রোহী ভোটের মাঠে রয়েছে। ফলে প্রতিটি আসনে মূল লড়াই হবে নৌকা বনাম নৌকার বিদ্রোহী এবং শরিক জোটের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র। জয়ের জন্য সবাই মরিয়া থাকার কারণে এবার আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক পড়ে যেতে পারে।
ইসি’র তথ্য বলছে, প্রচারণা শুরুর আগেই আচরণবিধি ভেঙেছে প্রায় অর্ধশত প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সংখ্যাই বেশি। গতকাল পর্যন্ত ইসি’র হিসাব বলছে-খুলনা, ঢাকা ও বরিশালসহ দশ বিভাগে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির পক্ষ থেকে ইসিতে অভিযোগ পাঠানো হয়েছে ৩৩টি। কুমিল্লা ও বরিশাল বিভাগ থেকে ৫টি, সিলেট, রংপুর, ফরিদপুর, খুলনা ও ময়মনসিংহ থেকে ৪টি করে এবং রাজশাহী বিভাগ থেকে ৩টিসহ মোট ৩৩টি অভিযোগ এসেছে। এসব প্রার্থীর মধ্যে ২২ জনকে সতর্ক করা হয়েছে। আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে ৭ জনের বিরুদ্ধে এবং কমিশনের করণীয় কিছু নেই মর্মে দায়মুক্তি দিয়েছে ৪ জনকে।