1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:০৩ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

হাকালুকি হাওরে ২০ হাজার গাছ নিধন, ‘মূল হোতা’ আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল উদ্দিন!

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২২ জুন, ২০২১
  • ৮৯৭ বার পঠিত

রিপন দে,সিনিয়র স্টাফ রিপোটার: হাকালুকি হাওরের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার (ইসিএ) মালাম বিল লিজ নিয়ে সেখানে যাওয়া-আসার রাস্তা তৈরী করতে এবং বিলের বাঁধ তৈরী করতে ২০ হাজার হিজল-করচ কাছ কাটার ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। তবে বারবার স্থানীয় মৎস্যজীবীরা গাছ কাটার সাথে তারা জড়িত নয় দাবি করায় প্রশ্ন উঠেছে কারা তাহলে এই গাছ কাটল। যদিও এর পেছনে কয়েকজন প্রভাবশালী জড়িত বলে প্রথম থেকেই আলোচনায় উঠে এসেছে।এই ব্যাপারে ব্যাপক খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মৎস্যজীবীর নামে বিলের লিজ থাকলেও এখানে বিনিয়োগ করেছেন বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং বড়লেখা নারী শিক্ষা একাডেমির অধ্যক্ষ একেএম হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে স্থানীয় ৮ প্রভাবশালী। জলজ গাছগুলো কাটার ইন্দন তাদের বিরুদ্ধেই। হেলাল উদ্দিন গং এর ইন্দনে এই ছোট ছোট এই গাছগুলো কাটা হয়। পরে প্রমাণ নিশ্চিহ্ন করতে ট্রাক্টরের মাধ্যমে মাটির সাথে গাছগুলো মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। গাছগুলো ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ এবং ২০০৫ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির অর্থানয়নে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে এবং একাধিক এনজিওর সহযোগিতায় বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর সৃজন করে। তার মধ্যে ২০০৬ থেকে এখানে হিজল-করচ বনায়নে কাজ করে এনজিও সংস্থা সিএনআরএস । সিএনআরএস এর তখনকার সমন্বয়কারী তৌহিদুর রহমান জানান, ্#৩৯;হিজল খরচ গাছ খুব ধীরেধীরে বড় হয়। এই কারণে একটি গাছ রোপন করার পর থেকে তা বড় করে তোলা পর্যন্ত গড়ে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়।্ গাছ কাটার এ ঘটনায় গত ৩০ মে হাকালুকি ইসিএ ব্যবস্থাপনা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্য ও জলজ বনের পাহারাদার মো. আব্দুল মনাফ বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের অনুলিপি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী, পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসককে দেওয়া
হয়। রহস্যজনক কারণে প্রধান অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ও আইনি পদক্ষেপ দেননি সংশ্লিষ্টরা। এতে হাওর পারের সাধারণ মানুষ ও পরিবেশবাদীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ৩০ মে অভিযোগ দায়ের হলেও তা যেনো প্রকাশ না হয় তার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করেন এই প্রভাবশালীরা। যদিও বিষয়টি শেষ পর্যন্ত সামনে এসেছে এবং ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অভিযোগ সূত্র জানা গেছে, গত ২৭ মে থেকে ইজারাদারের লোকজন বিলের বাঁধ নির্মাণের নামে বিলের পাড়সহ প্রায় ১২ বিঘা জমির প্রায় ২০ হাজার গাছ অবৈধভাবে কেটে ফেলে। এরপর তারা সেখানে ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করে গাছগুলো মাটির মধ্যে মিশিয়ে দেয়। এতে হাওরের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। জানা গেছে, হাকালুকি হাওরের অর্ন্তভূক্ত বড়লেখা উপজেলার অধীনে মালাম বিলের (মৎস্য জলাশয়) আয়তন ৪২৮.৯২ একর। ১৪২৭ বাংলা হতে ১৪৩২ বাংলা সন পর্যন্ত সময়ের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ২১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৪৩ টাকায় মালাম বিলটি ইজারা নিয়েছে বড়লেখা উপজেলার মনাদি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। যদিও মনাদি মৎস্যজীবী সমিতির পরিচালক জয়নাল উদ্দিন বলেন, ‘জলমহাল ইজারায় শুধুমাত্র মৎস্যজীবী
সমবায় সমিতির নাম ব্যবহার করা হয় তা সকলেই জানেন, প্রভাবশালীরা বিনিয়োগ করেন, এখানে প্রফেসর বিনিয়োগ করেছেন। তবে কে সেই প্রফেসর তা বলতে চাননি । এরই মধ্যে মঙ্গলবার (২২ জুন) রাত ১১টার দিকে বড়লেখা থানায় পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মনাদি মৎস্যজীবী সমিতির পরিচালককে প্রধান আসামি করে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। মামলায় ১৫ থেকে ২০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি রাখা হয়েছে।

মামলার পর মনাদি মৎস্যজীবী সমিতির পরিচালক জয়নাল উদ্দিনের সাথে আবারও যোগাযোগ করা হলে তিনি দেশ রুপান্তরকে জানান, আমরা নিরীহ মানুষ আমাদেরকে মামলা দেওয়া হয়েছে, আমরা শুধু কাগজে কমলে আছি। তবে কারা বিনিয়োগ করছে তা তিনি ভয়ে বলতে চাচ্ছিলেন না। কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন এখানে বিনিয়োগ করেছেন হেলাল উদ্দিনসহ স্থানীয় ৮ প্রভাবশালী। তাদের প্রয়োজনে এবং ইন্দনেই গাছ কাটা হয়েছে। বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলীর বক্তব্যেও উঠে এসেছে হেলাল উদ্দিনের নাম। উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানিয়েছেন এই বিষয়টি জানার পর আমরা তদন্ত করছি। যেহেতু অভিযোগ পেয়েছি আশেপাশের ইজারাদাররা এই কাজ করেছে সেই হিসেবে এর পাশের ইজাদার হেলাল উদ্দিনকে আমরা ডেকে ছিলাম।
উনি তদন্তে সহযোগিতা করবেন বলেছেন সেই সাথে উনি নিজ থেকেই বলেছেন ৫ হাজার গাছের চারা তিনি কিনে দেবেন। তবে আমরা তদন্তের আগে কাউকে অভিযুক্ত করতে পারছিনা। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলায় মৎসজীবী ছাড়া আর কারো নাম নেই। এই বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের সহকারী পরিচালক বদরুল হুদা জানান, আমরা ৭ জনের নাম দিয়েছি এবং অজ্ঞাত ১৫/২০ জন রেখেছি। কিছু প্রভাবশালীর নাম আমাদের কানেও এসেছে প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। প্রমাণ পেলেই মামলায় নাম অনর্ভুক্ত করা হবে। তবে সব অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি ৫/৬ বছর আগে বিল ইজারার সাথে যুক্ত ছিলাম। এখন আর নাই। গাছ কেটেছে আশেপাশের মানুষ আমার সংশ্লিষ্টতা নেই। গাছ না কাটলে কেনো নিজ থেকে ৫ হাজার গাছ দেওয়ার কথা ইউএনও কে বললেন জানাতে চাইলে তিনি বলেন, আমার এলাকার ঘটনা তাই আমি ইউএনও অফিসে উপস্থিত ছিলাম। সে সময় অভিযুক্তদের বলি তুমরা গাছ লাগিয়ে দিও। এর বাইরে আর কিছু বলিনি। এদিকে বুধবার দুপুরে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন জলজ বৃক্ষ নিধনের নেপথ্য নায়ক অধ্যক্ষ হেলাল উদ্দিন। মঙ্গলবার এবং বুধবার দুপুওে সহকারী কমিশনার ভূমির কার্যালয়ে তাকে ধরনা দিতে দেখা যায়। ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে তিনি জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন।এ বিষয়ে কমিশনার (ভূমি) নূসরাত লায়লা নীরা দেশ রূপান্তরকে জানান, তিনি এসেছিলেন অন্যকাজে। গতকাল এবং আজ দুপুরেও এসেছিলেন। আমরা এই ব্যাপারে খুব শক্ত অবস্থানে আছি। তাই কোনো লবিং করার কিছু নাই বা এমন কিছু ঘটেনি। আজ সরেজমিনে মালাম বিলের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাচ্ছি। যা পাব তাই রিপোর্টে উঠে আসবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। পরিবেশ অধিপ্তরের বাস্তবায়নাধীন ইবিএ প্রজেক্টের এডমিন এন্ড ফিন্যান্স অফিসার (এএফও) সাহিদ আল শাহিন জানান, আমাদের প্রকল্পের মাধ্যমে ইসিএভুক্ত মালাম বিল এলাকায় প্রায় ৭০ একর জায়গায় হিজল-করচসহ পরিবেশবান্ধব গাছ লাগানো হয়েছিল। গাছগুলো অনেক বড় হয়েছিল। এ ঘটনায় পাহারাদার থানায় ও ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ইসিএভুক্ত এলাকায় সরকারি অনুমোদিত প্রকল্প ব্যতিত গাছ কাটা,খনন, স্থাপনা নির্মাণ, পাখি শিকার করা ইত্যাদি বেআইনি। গাছগুলো কাটায় হাওরের পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।
ক্ষোভ প্রকাশ করেছন পরিবেশবাদিরা। প্রাণ ও প্রতিবেশ বিষয়ক গবেষক পাভেল পার্থ জানান, দুনিয়ার সবচে বড় হাওরের ২০ হাজার হিজল, করচ, বরুণ গাছ কেটে ফেলা ভয়ংকর পরিবেশ সংকট তৈরি করবে। এতে মালাম বিলের জলজ বাস্তুতন্ত্র ও খাদ্য শৃংখলা বিনষ্ট হবে। হিজল, করচ, বরুণ গাছ হাওরের মাছ, পাখি ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। হাওরবাসীর আশ্রয়স্থল এই গাছ। মাছের খাদ্য তৈরি হয় হিজল গাছে। পবিত্র গাছ হিসেবে এসব গাছের নিচে গড়ে ওঠে হিজলবাগ-করচবাগ। এসব গাছ হাওরে ধানের আবাদকেও সহায়তা করে। অনেক ঔষধি ব্যবহার আছে এইসব জলাবৃক্ষের। একটি ইসিএ এলাকার এত গাছ কেটে ফেলা হল হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড, বনবিভাগ, প্রশাসন কি করল? একদিনেত এত গাছ কাটা সম্ভব নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে সুন্দরবন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন সেখানে দেশের সবচেয়ে বড় হাওরের গাছ কেটে ফেলা অন্যায়। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। যত দ্রুত পারা যায় মালাম বিলে আবারও হিজল, করচ, বরুণ লাগানো ও সংরক্ষনে স্থানীয় মানুষদের যুক্ত করতে হবে। এই বিলের লিজ বাতিল এবং হাওর বিল লিজের ব্যাপারে নতুন করে ভাবার জন্য সরকারকে অনরুধ করছি। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল করিম কিম জানান, পরিবেশ মন্ত্রীর নিজ উপজেলায় স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাদের ইন্দনে এতগুলো গাছ কাটার খবর হতাশার। এভাবে গাছ কেটে ফেলা ও তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫ হাজার চারা দেওয়া হাস্যকর কারণ একটি চারার দাম হয়তো ২০/২৫টাকা কিন্তু একটি গাছকে ৪/৫ ফুট করে বড় করে তোলতে খরচ হয় ৩/৪ হাজার টাকা এবং সময় লাগে কয়েক বছর। সারাদেশে ইজারার নামে মতসজীবীদের নাম ব্যবহার করে প্রভাবশালীরা বিনিয়োগ করে পরে বিনিয়োগের টাকা তুলে আনতে তারা পারলে মাটি পর্যন্ত বিক্রি করে দেয়। তাই ইজারার আইনে পরিবর্তন করা উচিত। মালাল বিলের ইজারা বাতিলের দাবী জানাচ্ছি।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (প্রকৃতি ও বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ) রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, জায়গাটি পরিবেশ অধিপ্তরের অধিনে তাই আমরা জেনেও কোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে পরিনি। তবে ঘটনাটি জানার সাথে সাথে আমরা পরিবেশ অধিপ্তরকে জানিয়েছি। আমরা মৌখিক ভাবে যে অভিযোগ পেয়েছি তাতে স্থানীয় একজন পিন্সিপাল হেলাল উদ্দিনের নাম উঠে এসেছে যদিও আমরা তা যাচাই করিনি।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..