শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫০ পূর্বাহ্ন
এদিন রাত ১১টার দিকে হঠাৎই মারাত্মক শ্বাসকষ্ট শুরু হয় শাহনাজ রহমতুল্লার। সে সময় তিনি বারিধারায় নিজের বাসাতেই ছিলেন। তবে পরিবারের লোকজন তাকে হাসপাতালে নেওয়ার সুযোগ পাননি। তার ননদ নাহার আবেদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘খবর পেয়ে আমাদের বড় ভাই ডা. এনায়েত উল্লাহ বাসায় এসে দেখেন ভাবী মারা গেছেন।’
প্রয়াত শিল্পীকে পরদিন (২৪ মার্চ) জোহরের নামাজ পর বারিধারার নয় নম্বর রোডের পার্ক মসজিদে জানাজা শেষে বনানীতে সম্মিলিত সামরিক বাহিনীর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। পারিবারিবভাবে এই সিদ্ধান্তটা নেওয়া হয়েছিল বলে সে সময় গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন গায়ক ও সংগীত পরিচালক শফিক তুহিন। শাহনাজ রহমতুল্লার স্বামী মেজর (অব.) আবুল বাশার রহমত উল্লাহ একজন ব্যবসায়ী। তাদের সংসারে দুই ছেলে-মেয়ে। ছেলে এ কে এম সায়েফ রহমত উল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করে বর্তমানে থাকেন কানাডায়। মেয়ে নাহিদ রহমত উল্লাহ লন্ডনপ্রবাসী।
শাহনাজ রহমতুল্লাহর জন্ম হয়েছিল ১৯৫২ সালের ২ জানুয়ারি ঢাকায়। তার বাবা এম ফজলুল হক এবং মা আসিয়া হক। তার ভাই প্রয়াত আনোয়ার পারভেজ দেশের নামকরা সুরকার ও সংগীত পরিচালক ছিলেন। আরেক ভাই জাফর ইকবাল ছিলেন চলচ্চিত্র অভিনেতা ও গায়ক। শাহনাজ রহমতুল্লাহ গান শিখেছিলেন গজল সম্রাট মেহেদী হাসানের কাছে। ১৯৬৩ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে ‘নতুন সুর’ নামে চলচ্চিত্রে কণ্ঠ দেওয়ার মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু হয়। ১৯৬৪ সালে প্রথম টেলিভিশনে তার গাওয়া গান প্রচারিত হয়। তিনি গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আলাউদ্দিন আলী, খান আতাউর রহমানের মতো বিখ্যাত সুরকারদের সুরে গান গেয়েছেন। পাকিস্তানে থাকার সুবাদে করাচি টিভিসহ উর্দু ছবিতেও তিনি গান গেয়েছেন।
শাহনাজ রহমতুল্লাহ মূলত দেশাত্মবোধক গান গেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়ে’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল’, ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’, ‘আমায় যদি প্রশ্ন করে’, ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’ ইত্যাদি। এর মধ্যে প্রথম তিনটি গান বিবিসির একটি জরিপে সর্বকালের সেরা ২০ বাংলা গানের তালিকায় স্থান করে নেয়। শাহনাজ রহমতুল্লাহ ১৯৯০ সালে ‘ছুটির ফাঁদে’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া সংগীতে বিশেষ অবদান রাখায় ১৯৯২ সালে তিনি রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন।