শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ১১:৩০ পূর্বাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়ামসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ প্রবল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। বন্যায় এ পর্যন্ত জার্মানি ও বেলজিয়ামে ১২৮ জন প্রাণ হারিয়েছে।
এ ছাড়া নিখোঁজ ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জার্মানির পশ্চিমাঞ্চল। এ অঞ্চলে বন্যার কারণে জরুরি সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। সেখানে উদ্ধারকাজ অব্যাহত রয়েছে। খবর এএফপি।
এ বন্যার সেই অর্থে কোনো পূর্বাভাস না থাকার কারণে আকস্মিক বন্যায় অনেকেই আটকা পড়েছেন। জার্মানির দৈনিক বিল্ড একে ‘মৃত্যুর বন্যা’ বলে আখ্যা দিয়েছে। বন্যার প্রভাবে কিছু কিছু এলাকার সড়ক ও বাড়িঘর ডুবে গেছে। দেশটি বেশ কয়েকটি জেলা একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে রাইনল্যান্ড ফ্যালৎস রাজ্যের বাদ নিউইনাহর এলাকার বাসিন্দা অ্যাগ্রন বেরিসচা বলেন, ‘১৫ মিনিটের মধ্যে সবকিছু তলিয়ে গেছে। আমাদের বাসা, অফিস, প্রতিবেশীর ঘর—এখন সবকিছু পানির নিচে।’
এ ছাড়া বন্যার পানির তোড়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘরবাড়ি ধসে গেছে, গাছ উপড়ে পড়েছে, গাড়ি ভেসে গেছে। জার্মানির শুল্ড এলাকার বাসিন্দা হান্স-ডাইটার ভ্রানকেন বলেন, তিনি ২০ বছর ধরে ওই এলাকায় বসবাস করছেন। কিন্তু এমন বন্যা কখনো দেখেননি।
এদিকে জার্মানির পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত দুর্গম লোকালয়ে পৌঁছাতে উদ্ধারকর্মীদের বেগ পেতে হচ্ছে। এই দুর্যোগময় পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে জার্মানির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যে নর্থ রাইন ভেস্টফালৎস ও রাইনল্যান্ড ফ্যালৎস রাজ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
জার্মানির উপদ্রুত অঞ্চলে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০৮ জন মারা গেছে। নিখোঁজ ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষ। তবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া জরুরি সেবাব্যবস্থা চালু করতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছে রাইনল্যান্ড ফ্যালৎস রাজ্য সরকার।
জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলে দুটি রাজ্যের উপদ্রুত এলাকাগুলোয় জার্মান সেনাবাহিনী তাদের বড় সাঁজোয়া যান ও হেলিকপ্টার নিয়ে উদ্ধারকাজ পরিচালনা করছে। ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবীরা গতকাল রাতেও সার্চলাইট জ্বালিয়ে দুর্গম এলাকাগুলোয় উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছেন। জার্মান সেনাবাহিনীর কয়েক শ সদস্য ও জার্মান টেকনিক্যাল সাহায্য সংস্থার কর্মীরাও ভারী উদ্ধারসামগ্রী নিয়ে দিনরাত কাজ করছেন।
এদিকে আবহাওয়াবিদেরা ওই এলাকায় আরও বৃষ্টিপাতের আভাস দিয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন এ মুহূর্তে কূল উপচে পড়া নদীর এলাকাগুলোয় নৌ, সড়ক ও রেল চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
এ বন্যা প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সফররত জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘হঠাৎ এ বিপর্যয়ের কারণে আমি হতবাক হয়েছি।’
বন্যাপীড়িত অঞ্চলে নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। উপদ্রুত এলাকার নাগরিকদের যথাসম্ভব আর্থিক সাহায্যের বিষয়ে তিনি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথাও বলেছেন।
জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ভাল্টার স্টাইনমায়ার দুর্গত অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
গতকাল বার্লিনে জার্মানির প্রেসিডেন্ট বলেন, পুরো জার্মানি বন্যাদুর্গতদের পাশে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃতির এই তাণ্ডব আমাকে স্তম্ভিত করেছে।’
গত বুধবার সারা দিন ও বৃহস্পতিবার রাতজুড়ে ব্যাপক বৃষ্টির কারণে পর্যটনস্থলখ্যাত রাইন ও মোজেল নদীর অববাহিকায় অবস্থিত শহরগুলো বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। মুষলধারে একটানা বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি নদীগুলোর পানি কূল উপচে তীব্র বেগে রাস্তা ও বাড়িঘরে ঢুকে বড় রকমের ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছে।
জার্মানির পাশাপাশি বেলজিয়ামেও বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বেলজিয়ামে বন্যায় মৃত মানুষের সংখ্যা ২০ ছাড়িয়েছে। দেশটির একটি অঞ্চলরে প্রায় ২১ হাজার মানুষ বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্দ্রা দি ক্রো এই বন্যাকে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকৃতি বিপর্যয় হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এ ছড়া আগামী মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
নেদারল্যান্ডস ও লুক্সেমবার্গেও বন্যা পরিস্থিতির নাজুক অবস্থা। নেদারল্যান্ডসের মাসত্রিস শহর থেকে হাজারো মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, প্রবল বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় এমন ভয়াবহ অবস্থা দাঁড়িয়েছে। বড় নদীগুলোর পানি বেড়ে তীর ছাড়িয়ে লোকালয়ে ঢুকেছে। অসংখ্য বাড়িঘর ধসে পড়েছে।