শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৬:৫২ অপরাহ্ন
কুলাউড়া প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পুথিমপাশা ইউনিয়নে পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে নাজমা বেগম (৪০) নামক এক নারীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে ধম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। নাজমার মৃত্যুর সাথে অভিযুক্ত সোহাগ মিয়া ও ফারুক মিয়ার কোন সম্পৃক্ততা নেই। ২৫ জানুয়ারি শনিবার এ সংবাদ সম্মেলন করে ভুক্তভোগী পরিবার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায় বিচার দাবি করেন।
নাজমা রেগমের মৃত্যুর ঘটনায় মো: সোহাগ মিয়া ও মো: ফারুক মিয়া দু’ভাইকে আসামী করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা রাখা হয়েছে ২-৩ জনকে। সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে সোহাগ মিয়ার স্ত্রী মোছা রোকেয়া বেগম ও ফারুক মিয়ার স্ত্রী ডলি বেগম এবং তাদের মা আয়াতুন বেগমের দাবি, নাজমা বেগমের মৃত্যুর ঘটনা পুরোটাই সাজানো নাটক। সোহাগ মিয়া কিংবা ফারুক মিয়া কেউই নাজমা বেগমকে মারপিট তো দূরের কথা স্পর্শও করেননি। মুলত নাজমা বেগম আগে থেকে অসুস্থ। হাসপাতালে নেয়ার সময় তিনি মারা যান। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলেই এর আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
সোহাগ মিয়া ও ফারুক মিয়ার মা আয়াতুন বেগম জানান, নাজমা বেগম ও তার বোন সুমেনা বেগম, বোনের জামাই শফিক মিয়া এরা সবাই স্থানীয়ভাবে দাদন (চড়া সুদের ব্যবসা) কারবারী (ব্যবসায়ী)। ব্যবসার জন্য ওই চক্রের কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ধার (কর্য্য) নেন। সেই টাকা চক্রবৃদ্ধি হারে ৭ লাখ টাকা হয়ে গেছে বলে তাদের দাবি। গত ১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় শফিক মিয়ার নেতৃত্বে সুমেনা বেগম, নাজমা বেগম, সুবাই বেগম মুরাদ হোসেন ও মুন্না বেগম টাকা চাইতে গিয়ে সোহাগ মিয়ার দোকানে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হামলা চালায়। হামলাকারীরা সোহাগ মিয়াকে গুরুতর জখম করে এবং দোকানেও ভাঙচুর চালায়। এঘটনায় সোহাগ মিয়া কুলাউড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এদিকে ঘটনার পরদিন ১৮ জানুয়ারি সকালে নাজমা বেগম নাকি অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে তাকে রবিরবাজার একটি ক্লিনিকে এবং পরে সেখান থেকে কুলাউড়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এঘটনার আরও একদিন পর ১৯ তারিখ নাজমা বেগমের ছেলে মুরাদ মিয়া বাদী হয়ে কুলাউড়া থানায় মামলা (নং ১৫, তারিখ ১৯/০১/২৫) দায়ের করেন। মামলায়সোহাগ মিয়া ও ফারুক মিয়াকে আসামী করা হয়।
ফারুক মিয়ার স্ত্রী ডলি বেগম ও মা আয়াতুন বেগম দাবি করেন, ঘটনার সময় ফারুক মিয়া ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। ১৭ জানুয়ারি সোহাগ মিয়াকে মারপিট করে আহতবস্থায় ফেলে যায়। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে কুলাউড়া হাসপাতালে ভর্তি করেন। এর ২-৩ দিন আগে ফারুক মিয়ার দোকানের আগুন লেগে তার দুটি পা পুড়ে যায়। তিনি অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে ছিলেন। তাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। সোহাগ মিয়া জেলে আর ফারুক মিয়া পুড়া দুটি পা নিয়ে পলাতক। এমতাবস্থায় বাড়িতে কোন পুরুষ মানুষ না থাকায় বৃদ্ধ শাশুড়ীকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় দিনযাপন করছেন।
গৃহবধু রোকেয়া বেগম ও ডলি বেগম জানান, ধারকৃত সুদের টাকার বিষয়টি পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নবাব আলী নকী খানসহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সালিশে সমাধান করে দেন এবং নাজমা বেগমদের প্রাপ্য টাকা মাধ্যস্থতাকারীদের কাছে রয়েছে। এমতাবস্থায় তারা পরিকল্পিতভাবে এই হামলার ঘটনা ঘটায়। সুদের ঘটনা ধামাটাপা দিতে মুলত হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
ঘটনার সালিশকারী পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নবাব আলী নকী খান জানান, ৮৫ হাজার টাকা ধার্য্য করে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়। ফরিদ মেম্বারের মাধ্যমে ৬০ হাজার টাকা নেন নাজমা বেগমের স্বামী ফখরু মিয়া। বাকি ২৫ হাজার টাকাও পরিশোধ করেন সোহাগ মিয়া। কিন্তু সেই টাকা নিয়েও তারা সোহাগ মিয়ার দোকানে গিয়ে তার উপর হামলা চালায়। নাজমা বেগম অসুস্থ ছিলেন, এই মারামারির ঘটনায় যে তার মৃত্যু হয়েছে- এটা সঠিক নয়। তদন্ত হলেই সত্যতা মিলবে।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আলী জানান, ময়না তদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। যেহেতু নিহতের পরিবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছে, তাই মামলা নেওয়া হয়েছে।