শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৬:৪৬ অপরাহ্ন
বিকুল চক্রবর্তী :: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ডা: আলীর বাসায় বেতের সোফায় বসে সামনের টেবিলে হাত চাপড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন “শেখ মুজিব মুখে যা বলে কাজেও তা করে”
সময়টা ১৯৬৯ ইংরেজী। জেল থেকে বের হয়ে সিলেটে এক ঝটিকা সফরে বের হয়েছিলন বঙ্গবন্ধু। পথে শ্রীমঙ্গল রামকৃষ্ণ মিশন রোডের ডা. আলীর বাসায় উঠেন।
ডা. আলীর স্ত্রী আখলাতুন নাহার ওইদিন সকাল বেলা স্বামী কাছ থেকে প্রথম জানলেন বিকেলে বা সন্ধায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের বাসায় আসবেন। শুনেইতো চমকে ওঠেন আখলাতুন নাহার। মনের মধ্যে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করতে লাগলো। শোনার পর তিনি আর বসে নেই। শুরু হয় ঘর গোছানো। পই পই করে মেয়েকে নিয়ে ঘর সাজান। বঙ্গবন্ধু যদি বিশ্রাম নেন এ জন্য একটি বিছানা চাঁদর কিনে আনেন। এ সময় একসেট কাটা চামচও আনেন। আয়োজন করা হয় নাস্তার। এর পর শুরু হয় অপেক্ষা। সময় কাটেনা কখন আসবেন বঙ্গবন্ধু। সন্ধ্যা রাত পার করে একসময় গভীর রাতে আসেন বঙ্গবন্ধু। সাথে সৈয়দ তাজ উদ্দিনসহ আরো অনেক নেতা। বঙ্গবন্ধু বাসায় ঢোকছেন দেখেই তিনি চলে যান রান্না ঘরে নাস্তা তৈরীতে। তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু তাদের বৈঠক রোমে বসেন। বঙ্গবন্ধু দীর্ঘক্ষন তাদের বাসায় অবস্থান করলেও বঙ্গবন্ধুর সামনে গিয়েছেন মাত্র একবার। তিনি চা নাস্তা তৈরীতেই ব্যস্ত ছিলেন। তিনি মাত্র একবার মেয়েসহ বঙ্গবন্ধুর সামনে গিয়ে পরিচিত হয়েছেন। এ সময় তার মেয়ে ডেইজি বঙ্গবন্ধুকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। বঙ্গবন্ধু যাওয়ার সময় তাদের উঠানে ফুলবাগানে দাড়িয়ে নেতাকর্মী ও চার পাশে জড়ো হওয়া জনতার সাথে কুশল বিনিময় করেন এবং তাদের উদ্দেশ্যে কয়েক মিনিট কথা বলেন।
ওই দিন ডা: আলীর বাসায় থাকা কবি দ্বীপেন্দ্র ভট্টাচার্য জানান, বঙ্গবন্ধু অনেক নেতাসহ ডা: আলীর বাসায় আসেন। উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ছিলেন এর মধ্যে তাজ উদ্দিন আহমদ, সামাদ আজাদ, ফরিদ গাজী, মানিক চৌধুরী, আলতাফুর রহমান, মোহাম্মদ ইলিয়াসসহ আরো অনেক নেতা উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে দেখার জন্য তাঁর উচ্ছ্বাস ছিল অনেক। বারান্দায় উঁকি দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে না পেয়ে তিনি বঙ্গবন্ধু যে রোমে বসেছিলেন সে রোমের জানালার কাছে চলে যান। তিনি জানান, ওই সময় মোহাম্মদ ইলিয়াছ কিছু একটা বলার পর বঙ্গবন্ধু একটু জোড়ে বলে উঠেন “শেখ মুজিব মুখে যা বলে কাজেও তা করে।” কিন্তু কি কারনে এই কথাগুলো বলেছিলেন তা তিনি বলতে পারেননি। তবে মোহাম্মদ ইলিয়াছ ১৯৬৯ সালে আওয়ামীলীগে যোগদেন এবং ৭০ এর নির্বাচনে তিনি এমএনএ নির্বাচিত হন। হয়তো এ বিষয়ে মোহাম্মদ ইলিয়াস বঙ্গবন্ধুকে কিছু বলেছিলেন এবং প্রতি উত্তরে বঙ্গবন্ধু এ কথা বলেছিলেন।
ডা. আলীর স্ত্রী আখলাতুন নাহার আরো জানান, বঙ্গবন্ধু তাদের ঘরে যে সোফায় বসেছিলেন এটি ছিলো বেতের সোফা। এই সোফাসেটটি ছিলো তাদের সখের সোফা। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা বাসা ছেড়ে চলে গেলে তাদের সোফাগুলো লুট হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর বাসায় এসে বিভিন্ন জায়গায় সোফাসেটের খোঁজ করেন। এক সময় সন্ধান পান হবিগঞ্জের সায়েস্থাগঞ্জের শাহজীর বাজারে একজনের কাছে আছে। গাড়িভাড়া করে সেখান থেকে ওই সোফা উদ্ধার করে আনেন। আজো যত্নে রেখেছেন ওই সোফা। শুধু সোফা নয় বঙ্গবন্ধুর ব্যবহার করা সেই কাটা চামচগুলোও লুট হয়ে যায়। ছোট একটি টাংঙ্কের মধ্যে কাটা চামচসহ অনান্য জিনিসিপত্র ছিল। লুটেরারা অনান্য মালামাল লুট করে নিয়ে যাওয়ার সময় ওই ট্রাঙ্কটি বাড়ির সামনে ফেলে যায়। পাশের বাড়ির মানুষ টাঙ্কটি পেয়ে তাদের বাসায় নিয়ে রাখেন। পরে তাদের কাছ থেকে টাঙ্ক এনে এর ভিতরে চামচ গুলো পান। তবে বঙ্গবন্ধুর জন্য বিছানা চাঁদর আনলেও বঙ্গবন্ধু বিশ্রাম নেন নি। বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত কাটা চামচ, বেতের সোফা ও চাঁদর আজও বুকের মধ্যে আগলে রেখেছেন আখলাতুন নাহার।