1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

হ্যাপী নিউ ইয়ার ২০২১ বিদায় জানিয়ে ২০২২ বরণ

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ৭৮২ বার পঠিত

আফতাব চৌধুরী:
দেখতে দেখতে চলে গেল একটা বছর। ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে খসে পড়ল ইংরেজী বর্ষ পঞ্জিকার ৩৬৫ দিবসের সুখ-দুঃখের মেলবন্ধনের আবদ্ধ এক অধ্যায়। ২০২১-কে বিদায় জানিয়ে ২০২২ কে আপন করে নেয়ার পালা আজ। সমস্যার গ্যাঁড়াকলে ব্যতিব্যস্ত জীবন ব্যবস্থায় নতুন খ্রিষ্টীয় বর্ষকে বরণ করতে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা নদীগুলির বয়ে চলার সঙ্গী মানুষগুলোর উৎসাহের খামতি মোটের উপর অবহেলা করা যায় না। বছর পরিক্রমায় রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট চিরাচরিত নিয়ম অনুসারে বিভিন্ন ঘটনার প্রবহমানতা অব্যাহত থাকলেও একদিন অবশ্যই সবই স্মৃতির অতলে হারিয়ে যায়। সবাই নতুনের আবাহনে পথ চলতে চলতে অতীতকে স্মরণ করে।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, জীবনে প্রতিদিনের আমি আর নতুনের সন্ধানে আমি পরস্পর পরিপূরক হয়ে সমগ্র আমির বৃত্তায়ন সম্পূর্ণ হয়ে উঠে। প্রতিটি মানুষের এইটাই মূলত আত্মজীবনী। আমরা নিজের ও নিজের একান্ত পরিজনের জন্যে বাঁচি প্রত্যকটি মুহুর্ত। আর নববর্ষের দিন আমরা বাঁচি সকলের হয়ে সকলের মধ্যে। এই যে সকলের হয়ে সকলের মধ্যে বেঁচে ওঠা, এরই মধ্যে দিয়ে আমরা মিলতে চাই অনেকের সাথে, সকলের সাথে। এই মিলতে চাওয়ার সোপানই নতুনকে বরণ। নতুনত্বের জিয়নকাঠি, মিলনের তাগিদ। সেই তাগিদ থেকেই সমাজ সভ্যতায় নববর্ষের এত রমরমা।
পুরোনোকে ভুলে নতুনের আহŸানের মূল শর্তই হল সকলের সাথে মিলনের আনন্দে নিজের একান্ত গন্ডি থেকে মুক্তি। কাল বদলে নতুন বৎসর গতানুগতিক নিয়মে আসছে যাচ্ছে। নতুনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দিন দিন অস্থিরতা বাড়ছে না কি কমছে ? এ অবশ্য কোটি টাকার প্রশ্ন! কুয়াশাঢাকা রাতের আধাঁরে বর্ষ বিদায়ে নতুনের আহবানে কেউ কেউ নতুন বই কিনে নতুন ক্লাসে উঠবে। নতুন পড়া, নতুন পরিবেশ, নতুন সঙ্গীসাথী। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নতুন পরিবেশের সঙ্গে ‘হ্যাপি’ জীবন-যাপনের সীমাহীন আনন্দে ভাসতে থাকবে। আবার একই আকাশের তলায় কোনো অভাবগ্রস্ত পিতা পেটের তাগিদে নিজের অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানকে স্কুলের বদলে ইট-ভাটা কিংবা চায়ের দোকানে কাজ করতে দিয়ে অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিবে। এ কথার বাস্তবতা আকছার দেখতেই হয়। দূর্ঘটনা, দূর্যোগ, দুঃসময় ভাগ্যের দুয়ারে কড়া নাড়তে অনেক সময়ই আগাম সতর্কতা লঙ্ঘন করে। তবে মানবসৃষ্ট অমানবতার কারুকার্য রচিত হয় রাজনৈতিক বৈরিতায়, অতীত যার প্রত্যক্ষ উদাহরণ। তাহলে সদ্য ফেলে আসা বৎসরের দিনগুলোর সকল প্রেক্ষাপট মিলিয়ে এবং নববর্ষের শুভ সন্ধিক্ষণে নিজেকে ‘হ্যাপি’ করার অবকাশ মিলছে তো ?
এই প্রশ্ন মনের মাঝে ঘুরপাক খেলেও বলতে দ্বিধা নেই, বিশ্বের বৃহদাংশ নাগরিক ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসাবে পালন করেন। আমাদের দেশে বিভিন্ন ভাষাভাষী ও সংস্কৃতির ভিন্নতার দরুন পরখ করতে পারি না নববর্ষ পালনের চিরাচরিত ঐতিহ্য। তবুও বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন পরস্পরায় নববর্ষকে বরণ করার কথা অস্বীকারের উপায় নেই। পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন রকমে নববর্ষ বরণের রীতি দেখা যায়। জানুয়ারি মাসের প্রথম তারিখকে নববর্ষের স্বীকৃতি দিয়ে দেশভেদে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান উদযাপনের কিছু মজার রীতি নি¤œরূপ-
ভিয়েতনামবাসী নববর্ষের ভোরে গুরুজনদের কাছে দীর্ঘায়ু কামনা করে আশীর্বাদ নেয় । তারা বিশ্বাস করেন, সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেক মানুষের ঘরে বাস করেন। নববর্ষের দিনে বেড়াতে যান স্বর্গে। তাদের অনেকের মতে, কার্প মাছের পিঠে চড়ে সৃষ্টিকর্তা ভ্রমণে বের হন। এ বিশ্বাসে ভিয়েতনামের লোকদের অনেকে এই দিনে নদী বা পুকুরে কার্প মাছ ছাড়েন।
ব্রাজিলের নববর্ষের অন্যতম আকর্ষণ চোখবাঁধানো আতশবাজির প্রদর্শনী। এদিন তাদের অধিকাংশ লোকই সাদা পোশাক পরিধান করেন। তাদের ধারণা, সমুদ্রে সাতটি ডুব দিলে এবং সাতটি ফুল ছুড়ে দিলে বছরটি খুব ভালোভাবে কাটে। এ উৎসবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় দুই মিলিয়ন পর্যটক যোগ দেয়। ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো সমুদ্র-সৈকতে নববর্ষের সবচেয়ে বড়ো অনুষ্ঠান হয়।
মেক্সিকোতেও ডিসেম্বর মাসের ৩১ তারিখে রাত ১২ টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে বারোটা ঘন্টা করে বাজানোর রীতিতে অনেকে বিশ্বাসী। প্রতি ঘন্টাধ্বনির সঙ্গে একটি করে আঙুর খাওয়া হয়। তাদের মতে, নববর্ষের প্রাক মূহুর্তে সৃষ্টিকর্তাসমীপে যা কামনা করা হয়, তা-ই পূরণ হয়।
আর্জেন্টিনার অধিবাসীরা ৩১ ডিসেম্বরের রাত্রে পরিবারের সব সদস্য একসঙ্গে খাবার টেবিলে বসে আহার সারেন। অত:পর বড়রা নাচের অনুষ্ঠানে চলে যায়। ভোর পর্যন্ত চলে এ নাচের অনুষ্ঠান। নববর্ষের প্রথম দিন নদী বা পুকুরে সাতার কেটে নববর্ষ পালনের রীতি আর্জেন্টিনায় প্রচলিত। কোরিয়াতে নববর্ষর শুরুতে কেউ ভুলেও ঘুমাতে যায় না। তাদের মতে, ওই সময়ে ঘুমালে চোখের ভ্রæ সাদা হয়ে যায়। রাত বারোটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে টিভিতে ৩৩ বার ঘন্টা বাজানো হয় কোরিয়ার ৩৩ জন বীরের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। কোরিয়ানরা সকলেই সকালের সূর্যোদয় ও সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ার সময় একে অপরকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানায়।
লন্ডনে নববর্ষ পালনের কথা প্রায় সকলেই জানে। লন্ডনের মানুষেরা এদিন টেমস নদীর ধারে একত্রিত লন্ডনের চোখ ধাঁধানো ফায়ার ওয়ার্কস দেখার জন্য।
ফিলিপিন্সের লোকজন আতশবাজি, বোমা, ফাটিয়ে বিরাট শব্দ সৃষ্টি করে শয়তানকে তাড়ায়। তাদের বিশ্বাস, নতুন বছরের জন্য বিকট শব্দ তাদের দূর্ভাগ্যকে সরিয়ে নিয়ে যায়।
ফ্রান্সের লোকেরা তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আবহাওয়াকে গুরুত্ব প্রদান করে। নববর্ষের প্রভাতে বায়ু পূর্বদিকে প্রবাহিত হলে মনে করা হয় ফসলের ফলন ভালো হবে, বায়ু পশ্চিমে প্রবাহিত হলে মাছ ও পশুর ফলন গতিশীল হবে, দক্ষিণে প্রবাহিত হলে সারা বছরব্যাপী আবহাওয়া ভালো থাকবে এবং উত্তরে বায়ু প্রবাহিত হলে তাদের শস্য উৎপাদনে ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে ধারণা করেন তারা। একই ভাবে চীন, জাপানসহ পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নববর্ষ পালনে ভিন্নতা বিদ্যমান। সবাই সারা বছর ‘হ্যাপি ’ থাকার সম্ভাবনার সুত্র খুঁজতে নববর্ষের আনন্দে মেতে ওঠেন।
নতুনকে বরণের চিরাচরিত দাবিতে আমাদের এই বাংলাদেশ সাধারণ মানুষের কাছে ‘হ্যাপি’ থাকার সম্ভাবনার দ্বার খুলতে অনৈক্যের মধ্যে ঐক্যের বীজ বপন করে। আমরা সবাই সুখী হতে চাই নিত্য-নতুনের আহŸানে। এটাই জনমানবের প্রত্যাশা। তবে ‘হ্যাপি নিউইয়ার’ বাক্যটি দিয়ে নববর্ষকে সম্ভাষণ করলেই কি আমরা সবাই ‘হ্যাপি’ জীবন-যাপন করতে পারব।
পরিশেষে বলবো নববর্ষে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের ¯্রােতে উন্নয়নের জয়গান ও উন্নতি যথাযথ বাস্তবায়নে মুখরিত হোক। গত বছরের বারোটা মাস বিষাদময় অতীতের বেদনার যে সাক্ষী হয়েছিলেন আপামর দেশবাসী, সব ঘুচে যাক নিমিষে। সতত শুভবুদ্ধির উদয় হোক, সবাই ভালো থাকুক, নববর্ষের প্রাকমূহুর্তে এই কামনা শুধু করতে পারি।
সাংবাদিক-কলামিস্ট। ২৮.১২.২০২১

 

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..