শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৪১ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে খাদ্য পণ্যের যেসব বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয় সেখানে মিথ্যা তথ্য দেয়া হলে নিরাপদ খাদ্য আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশে আজ শুক্রবার শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকটি দৈনিক এ সংক্রান্ত সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি ছাপিয়েছে। সেখানে যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তার কোনটাই বিজ্ঞাপনগুলোকে মানতে দেখা যায় না।টেলিভিশন, রেডিও বা পত্রপত্রিকায় বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত বিভিন্ন খাবারের নানা চটকদার বিজ্ঞাপন দেখা যায়।যেখানে দাবি করা হয় এগুলি খেলে মেধার বিকাশ হবে, বাড়ন্ত শিশু দ্রুত লম্বা ও শক্তিশালী হবে।আবার এমন বিজ্ঞাপনও আছে যেখানে ওই খাবারের পুষ্টিগুণ নিয়ে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেন। আবার খাদ্যের গুণ ও মান বোঝাতে খাঁটি, ১০০% বিশুদ্ধ, পিওর এই শব্দগুলো ব্যবহার হচ্ছে অহরহ।
অথচ বাংলাদেশের আইনানুযায়ী বিজ্ঞাপনে এ ধরনের শব্দের ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। কারণ এসব অসত্য তথ্য ভোক্তাদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে বলে জানান ভোক্তা অধিকার বিষয়ক সংগঠন ক্যাব।
কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ভোক্তাদের যেন এসব মিথ্যা আশ্বাসের ফাঁদে ফেলতে না পারে সেজন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা শামসুল আলম।
তিনি বলেন, “শুধু সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দিলেই হবে না। কারণ চোর ধর্মের কাহিনি শোনে না। এজন্য যে আইন আছে সেটার আওতায় শাস্তি দিতে হবে। দোষীদের বিচারিক প্রক্রিয়ার আওতায় না আনা মানেই ওই অসাধু প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়া।
কী আছে বর্তমান আইনে?
বাংলাদেশের খাদ্য আইন ২০১৩ সালে পাস হলেও সেট কার্যকর হয় ২০১৫ সাল থেকে। ওই আইন অনুযায়ী কোন খাদ্য দ্রব্য বা খাদ্য উপকরণের গুণ ও মান সম্পর্কে অসত্য কিংবা মিথ্যা-নির্ভর বর্ণনা দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রস্তুত, মুদ্রণ, প্রকাশ বা প্রচার করা যাবে না।মায়ের দুধের বিকল্প শিশু খাদ্য, শিশুর বাড়তি খাদ্য, রোগ নিরাময়কারী এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে কোন বিজ্ঞাপন দেয়া যাবে না।ফুড এ্যাডিটিভ আছে এই রূপ খাবারের বিজ্ঞাপনে প্রাকৃতিক, তাজা, খাঁটি, আসল, বিশুদ্ধ, পিওর, ঐতিহ্যবাহী, ঘরে তৈরি, জেনুইন ইত্যাদি বিশেষণ যুক্ত করা যাবে না, যা প্রকৃত খাবার সম্পর্কে ভোক্তাদের বিভ্রান্ত করতে পারে।ফলের রস না থাকলে ফলের পানীয় বলা যাবে না। সেক্ষেত্রে একে কৃত্রিম পানীয় বা কৃত্রিম সিরাপ হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে।চিকিৎসক, পুষ্টিবিদ বা খাদ্য বিশেষজ্ঞ বা সমতুল্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পণ্যটি সুপারিশ করছে, এমন কিছুও বিজ্ঞাপনে থাকতে পারবে না।এসব নির্দেশনা প্রথমবার অমান্য করলে অনূর্ধ্ব এক বছর বা অন্যূন ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং অনূর্ধ্ব দুই লাখ বা অন্যূন এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড কিংবা উভয়দণ্ডের বিধান আছে।পুনরায় অপরাধ করলে, এক বছরের কারাদণ্ড বা চার লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেয়ার কথা বলা আছে।
‘আইন শুধুমাত্র কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ’
আইন থাকা সত্ত্বেও বিজ্ঞাপনগুলোয় প্রতিনিয়ত এসব নিয়মভাঙা হচ্ছে।অথচ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক ড. সহদেব চন্দ্র সাহা বলছেন এমন কোন বিজ্ঞাপন তাদের চোখে পড়েনি।তিনি বলেন, “হরলিক্সের একটা বিজ্ঞাপন নিয়ে মামলা চলছে, এগুলো আগের কথা। এখন আমাদের চোখে এমন কিছু পড়েনি। চোখে পড়লে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। আমাদের সার্ভেলেন্স টিম, মোবাইল টিম, মনিটরিং টিম আছে। সারাদেশের ৬৪ জেলায় আমাদের কর্মকর্তা আছেন, ৭২৮ জন ইন্সপেক্টর আছেন, তাদের কেউ তথ্য পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা জানান, বাংলাদেশে প্রচলিত আইন শুধুমাত্র কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ থাকায় বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানগুলো ইচ্ছেমত বিজ্ঞাপন তৈরি করে প্রচার করছে, বিক্রি বাড়ানোর উদ্দেশ্যে।খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যেসব প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের যথাযথ মনিটরিং না থাকায় এসব চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচারিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে বলে তিনি জানান।এসব বিজ্ঞাপনের প্রচার রোধে সমন্বিত পদক্ষেপের ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। “আইনের প্রয়োগ না থাকলে, মনিটরিং না থাকলে বিশৃঙ্খলা হবেই,” তিনি বলেন।তার মতে, সরকারের উচিত হবে একটি পণ্য বাজারে আসার আগে সেটার গুণগত মান পরীক্ষা করে সেটা নজরদারি করা।ওই পণ্যটি বিজ্ঞাপনে সঠিক তথ্য দিচ্ছে কিনা সেটা মিলিয়ে দেখা।
নাসরিন সুলতানা বিজ্ঞাপনে যে মডেল, বিশেষজ্ঞ বা নামীদামী ব্যক্তি যাচ্ছেন তাদেরকেও শুধুমাত্র মুনাফার দিকটি না ভেবে পণ্যের গুণগত মান যাচাই করেই চুক্তিবদ্ধ হওয়ার অনুরোধ করেছেন।এছাড়া যেসব গণমাধ্যম বিজ্ঞাপনটি প্রচার করছে তাদেরকেও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।সবশেষে বিজ্ঞাপনের ভাষায় বিশ্বাস না করে এর কোন পণ্য কেনার আগে ভোক্তাদের যৌক্তিক উপায় ভাবতে বলেছেন মিস সুলতানা।