1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৫:৫৬ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

যে ঈদগাহে মিশে আছে শহীদের রক্ত

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১১ জুলাই, ২০২২
  • ৪০০ বার পঠিত

স্টাফ রিপোর্টার :: প্রায় ৩০০ বছর পুরোনো সিলেটের ঐতিহাসিক শাহি ঈদগাহ। কেবল ঈদ জামাত নয়, শাহি ঈদগাহ পরিচিত এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের কারণেও।
জানা যায়, এই ঈদগাহ থেকেই ব্রিটিশের বিরুদ্ধে অবিভক্ত ভারতবর্ষে প্রথমদিককার বিদ্রোহের সূচনা হয়। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ১৭৮২ সালে এই ঈদগাহেই শহীদ হন দুই ভাই। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহেরও ৭৫ বছর আগের ঘটনা এটি।

ঐতিহাসিকদের তথ্যমতে, এই ঈদগাহে মহাত্মা গান্ধী, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হকের মতো নেতারা এসে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সমাবেশ করে গেছেন।

অনলাইন বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায়, সিলেটের শাহি ঈদগাহটি নির্মিত হয় ১৭০০ সালের প্রথম দশকে। সিলেটের তৎকালীন ফৌজদার ফরহাদ খাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে এটি নির্মিত হয়।

প্রায় ৩০০ বছর আগে শহরের যে জায়গায় ঈদগাহটি নির্মিত হয়, সেই এলাকাটিও এখন শাহি ঈদগাহ নামে পরিচিত। এখানে একসঙ্গে প্রায় দুই লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।

ধর্মীয় ও ইতিহাসের পাশাপাশি অপূর্ব নিমার্ণশৈলীর কারণেও সিলেটের শাহি ঈদগাহ অনন্য। এর একপাশে রয়েছে টিলাভূমি। কারুকার্যখচিত ২২টি বড় সিঁড়ি পেরিয়ে টিলায় উঠতে হয়।

টিলার ওপরে রয়েছে কারুকার্য করা ১৫টি গম্বুজ। একপাশে বিশাল পুকুর। ঈদগাহের প্রাচীর সীমানার চারদিকে রয়েছে ছোট-বড় ১০টি গেট।

২০১৫ সালে ঈদগাহ কমপ্লেক্সে নির্মাণ করা হয় ১৮০ ফুট উচ্চতার দৃষ্টিনন্দন একটি মিনার। ঈদের দিন ছাড়াও অন্য দিনগুলোতে প্রচুর মানুষ এই ঈদগাহে ঘুরতে আসেন।


ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যেভাবে জড়িয়ে শাহি ঈদগাহ

পলাশীর যুদ্ধে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হওয়ার মাত্র ২৫ বছর পেরিয়েছে তখন। ১৭৮২ সাল। দিনটি ছিল আশুরা। হিজরি ১০ মহররম।

ওইদিনই শাহি ঈদগাহে টিলার ওপরে জড়ো হয়ে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করেন স্থানীয় শতাধিক লোক। যার নেতৃত্বে ছিলেন নগরের কুমারপাড়া-সংলগ্ন ঝরনার পাড়ের সৈয়দ হাদি (হাদা মিয়া) ও সৈয়দ মাহদি (মাদা মিয়া) নামে দুই ভাই।

যথারীতি ব্রিটিশরাও শক্ত হাতে দমন করে এই বিদ্রোহ। গুলি ছোড়ে বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে। ঘটনাস্থলেই শহীদ হন হাদি ও মাহদি।

ব্রিটিশের বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহটি ইতিহাসে ‘হাদা মিয়া-মাদা মিয়ার বিদ্রোহ’ নামে খ্যাত।
যে ঈদগাহে মিশে আছে শহীদের রক্ত

গবেষক ও লেখক রফিকুর রহমান লজু এই বিদ্রোহ নিয়ে বলেন, ‘তখন সিলেটের ব্রিটিশ রেসিডেন্ট কালেক্টর ছিলেন রবার্ট লিন্ডসে। তিনি আধিপত্য বিস্তার ও সম্পদ লুণ্ঠনে মরিয়া ছিলেন। তার অত্যাচারে সবাই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। ক্ষোভ দেখা দেয় স্থানীয়দের মধ্যে। পুঞ্জীভূত এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে মহররমের দিন।

‘ওইদিন স্থানীয় মুসলমানরা ঈদগাহে জড়ো হয়ে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করেন। তাদের প্রধান টার্গেটও ছিলেন লিন্ডসে। তবে বিদ্রোহ পরিচালনার জন্য তাদের কোনো পূর্বপ্রস্তুতি বা পরিকল্পনা ছিল না। অসংগঠিত ও বিচ্ছিন্নভাবে শুধু স্থানীয় শক্তির ওপর নির্ভর করে তারা বিদ্রোহে নেমে পড়েন। ফলে উন্নত অস্ত্রধারী ও সুসংগঠিত শক্তিশালী ব্রিটিশ বাহিনীর সামনে বিদ্রোহীরা বেশি সময় টিকতে পারেননি।’

রফিকুর রহমান জানান, ভারত ছাড়ার পর স্কটল্যান্ডে স্থায়ী হয়েছিলেন রবার্ট লিন্ডসে। ১৮৪০ সালে প্রকাশিত হয় তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ An Anecdotes of an Indian life।

এই বইয়েও সিলেটের বিদ্রোহের কথা উল্লেখ আছে। লিন্ডসের আত্মজীবনীর সিলেটপর্ব- ‘সিলেটে আমার বারো বছর’ নামে অনুবাদ করেন লেখক আবদুল হামিদ মানিক। এতে দেখা যায় লিন্ডসে ওই বিদ্রোহকে ‘মহররমের দাঙ্গা’ ও ‘হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলে’ অভিহিত করেছেন।

তবে রফিকুর রহমান লজু বলেন, ঘটনাটি তা ছিল না। এটা ছিল ইংরেজ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সিলেটবাসীর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।

তিনি বলেন, ‘সমাজের একেবারে সাধারণ স্তর থেকে উঠে আসা মানুষজন এই বিদ্রোহে অংশ নেন। যার নেতৃত্বে ছিলেন হাদা মিয়া ও মাদা মিয়া।’

লজু বলেন, ‘এটি অত্যন্ত অসম ছিল। ইংরেজ পক্ষে লিন্ডসের সঙ্গে অস্ত্রধারী সৈন্য ছিল। অপরদিকে বিদ্রোহীদের একমাত্র অস্ত্র ছিল তলোয়ার।’

বৃহত্তর সিলেট ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটির সদস্য সচিব এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন ইতিহাসের সেই দিনটির বর্ণনা দেন।

তিনি বলেন, ‘সেই মহররমের দিন বিকেলে ঘোড়ায় চড়ে সুসজ্জিত বাহিনী নিয়ে শাহি ঈদগাহ ময়দানে হাজির হন হাদা ও মাদা। লিন্ডসেকে তারা আশুরা অনুষ্ঠানের সীমানায় প্রবেশে বাধা দেন। এরপর যুদ্ধ বেধে যায়।’

শাহিন জানান, যুদ্ধস্থল শাহি ঈদগাহের অদূরে নয়াসড়ক এলাকায় সমাহিত করা হয়েছিল শহীদ দুই ভাইকে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ব্রিটিশ শাসন শুরু হওয়ার পর এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে প্রথম শহীদ হয়েছিলেন সিলেটের হাদা মিয়া ও মাদা মিয়া। নয়া সড়কে তাদের কবর ঐতিহাসিকদের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এগুলো সংরক্ষণে উদ্যোগ নেয়া হবে।’

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..