শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২৯ পূর্বাহ্ন
সিলেট প্রতিনিধি :: মধ্যরাতের শুরু হওয়া বৃষ্টিতে সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল রোববার মধ্যরাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিতে কোথাও গোড়ালি, কোথাও হাঁটু পর্যন্ত পানি ওঠে গেছে। ভারী বর্ষণে নগরের বিভিন্ন পাড়া–মহল্লার বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশের খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া খাল ও ছড়াগুলোতে পানি উপচে পড়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেয়েছে সিলেট শহরের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া সুরমা নদীর।
নগরের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অভ্যন্তরে, লামাবাজার, মিরেরময়দান, শিবগঞ্জ, সেনপাড়া, সোনাপাড়া, শাহজালাল উপশহর, মেন্দিবাগ, তোপখানা, কাজলশাহ, লালাদীঘির পাড়, আম্বরখানা এলাকায় অতিবৃষ্টির ফলে জলাবদ্ধতা দেখা গেছে। ওই সব এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল মধ্যরাত থেকে আজ সকাল অবধি টানা বৃষ্টির ফলে বাসাবাড়ি ও সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। যে সড়কগুলোর কয়েকটিতে এখনো জলাবদ্ধতা রয়েছে।
সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অভ্যন্তরে পানি জমে রয়েছে। এই জলাবদ্ধতায় রোগীদের অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তবে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা ব্যবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে।
জলাবদ্ধতায় ভুক্তভোগী একাধিক ব্যক্তি বলেন, রাতের বেলা এমন জলাবদ্ধতায় বিপাকে পড়েন নগরের নিচু এলাকার মানুষ। ভোগান্তি কম ছিল না ব্যবসায়ীদেরও। বিভিন্ন বাসার নিচতলা পানিতে প্লাবিত হওয়ায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাসিন্দারা খাটের ওপর তুলে রাখেন। অনেক বাসা ও দোকানের মেঝেতে থাকা জিনিসপত্র ভিজে নষ্ট হয়েছে।
নগরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের পায়রা এলাকার বাসিন্দা রাজীব চৌধুরী সোমবার সকালে বলেন, মধ্যরাতে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে পায়রা এলাকায় রাত থেকেই পানি জমে। অনেক বাসাবাড়ি ও দোকানে পানি ওঠে। কিছুক্ষণ আগে সে পানি নেমে গেছে। তবে রাতভর স্থানীয় লোকজনের মধ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পায়রা এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। অথচ এর কোনো সমাধান সিটি করপোরেশন করছে না। এ অবস্থায় স্থানীয় মানুষের ভোগান্তি দূর হচ্ছে না।
এদিকে নগরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের লালাদীঘির পাড় এলাকার বাসিন্দা সুবল সিংহ বলেন, গতকাল রাত দুইটার দিকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে লালাদীঘির পাড় সড়ক ডুবে গেছে। এলাকায় নিচু নিচু কিছু ঘরে পানি ভেতরে প্রবেশ করে। সেগুলো বালতিতে ফেলতে হয়েছে।
নগরের সুরমা নদী সংলগ্ন এলাকা মেন্দিবাগ, কুশিঘাট, তোপখানা, কালীঘাট, শেখঘাট এলাকায় দেখা গেছে নদীর পানি ভরাট অবস্থায় রয়েছে। পানি আরও বাড়লে ওই এলাকাসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পানি প্রবেশ করবে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, সুরমা ও কুশিয়ারার পানি এখনো বিপদ সীমা অতিক্রম করেনি, তবে নদীর পানি বাড়ছে।
নগরের একাধিক বাসিন্দার ভাষ্য, প্রধানত চারটি কারণে নগরে অল্প সময়ের বৃষ্টিতেই এখন জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। এগুলো হচ্ছে নগরের ছড়াগুলোয় (প্রাকৃতিক খাল) অপরিকল্পিত উন্নয়নকাজ, অনেক ড্রেনের উন্নয়নকাজ ধীরগতিতে চলায় পানি চলাচলের স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ হয়ে পড়া, ছড়া-নর্দমার তলদেশে প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্যে ভরাট হয়ে থাকা এবং চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে নগরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদীতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকা।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, নগরে পানি ঘণ্টা দুয়েক ছিলো। এরপর নেমে গেছে। পানি নামার জন্য এইটুকু সময় দিতে হবে।
রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত ১৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরে এই পরিমাণ বৃষ্টিপাত অবিশ্বাস্য। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমন হচ্ছে। তাছাড়া হাওর ও নদী ভরাট হয়ে গেছে। বৃষ্টিতে টিলা থেকে বালু নেমেও ড্রেন ও ছড়া ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বৃষ্টির পানি নামবে কোনদিকে।
জলাবদ্ধতার জন্য নগরবাসীরও দায় আছে জানিয়ে তিনি বলেন, নগরবাসী সবধরনের ময়লা আবর্জনা, পলিথিন ড্রেনে ফেলে দেন। এতে ড্রেন ভরাট হয়ে যায়।
নিজেদেরও ব্যর্থতা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ড্রেনের পানি নামার মুখগুলো হয়তো আমরা সবসময় তদারকি করতে পারি না। পানি নামার লিংকগুলোও সবসময় তদারকি করা হয় না। ফলে দোষ সবারই আছে। তবে সবচেয়ে বড় কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। এরফলে এই ধরণের দুর্যোগ আমাদের সকলকে পোহাতে হবে।