1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:১২ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

ঈদ কেন মানব সভ্যতার সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব?

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১০ মে, ২০২১
  • ৩৩০ বার পঠিত
ফিরোজ মাহবুব কামাল

 

উৎসবটি মহান আল্লাহতায়ালা-প্রদত্ত

পৃথিবীর নানা দেশে নানা ধর্মের ও নানা জাতির মানুষের মাঝে শত শত বছর ধরে চলে আসছে বিচিত্র উৎসব। কিন্তু সে সব উৎসব থেকে ঈদ যে অনন্য ও শ্রেষ্ঠতর তা নিয়ে কি সামান্যতম সন্দেহ আছে? সামান্যতম সন্দেহ চলে কি মহান আল্লাহতায়ালার হিকমত, প্রজ্ঞা ও তাঁর প্রদত্ত বিধানগুলির কল্যাণধর্মীতা নিয়ে? আল্লাহতায়ালার প্রতিটি সৃষ্টির মধ্যেই তাঁর অসীম কুদরতের পরিচয়। ধরা পড়ে মানব কল্যাণে মহান আল্লাহর মহা আয়োজন। ঈদ সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব হওয়ার কারণ,এটি কোন মানুষের আবিস্কৃত উৎসব নয়। এটি এসেছে মহান আল্লাহতায়ালা থেকে।মানব সভ্যতার সর্বশেষ্ঠ উৎসব হওয়ার জন্য এই একটি মাত্র কারণই যথেষ্ঠ। ঈদের সে সর্বাঙ্গ সুন্দর বিধান,সেটি যে কোন বিবেকবান ও সুস্থ্য চেতনার মানুষের চোখে ধরা পড়তে বাধ্য। আলোচ্য নিবন্ধের সেটিই আলোচ্য বিষয়। কিন্তু তা নিয়ে অবিশ্বাস থাকতে পারে একমাত্র তাদের যাদের অবিশ্বাস আল্লাহতায়ালার অস্তিত্ব, তাঁর প্রজ্ঞা ও তার অপার সৃষ্টি ক্ষমতা নিয়ে। এখানে সমস্যা তাদের অসুস্থ্য বিবেকের,ঈদ উৎসবের নয়।এমন মানসিক অসুস্থ্যতার কারণে তারা যেমন ইসলামের ইবাদতের বিধানের মধ্যে কোন শ্রেষ্ঠত্ব খুঁজে পায়না তেমনি পায়না মুসলমানদের ঈদ উৎসবের মাঝেও।

ঈমানদারের জীবন চলে মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত সিরাতুল মোস্তাকীম বেয়ে। এ পথে চলায় মুসলমানের জীবনে যেমন প্রচুর ত্যাগ-তিতীক্ষা ও জান-মালের কোরবানী আছে, তেমনি খুশিও আছে। দুঃখ-বেদনার সাথে উৎসবও আছে। তবে সে উৎসবে মোহচ্ছন্নতা নাই, আছে পবিত্রতা। মুসলিম বিশ্বের ঘরে ঘরে ঈদ তাই পবিত্র উৎসব বা খুশি বয়ে আনে। এমন খুশির দিন সারা বছরে মাত্র দু’টি। একটি ঈদুল ফিতর, এবং অপরটি ঈদুল আযহা। এ খুশির দিন দু’টিতে প্রতিটি মুসলিম দেশ নতুন ভাবে সাজে। কিন্তু কেন এ খুশি বা উৎসব? খুশি বা উৎসব তো আসে বিশাল বিজয় বা বড় কিছু অর্জনের পর। কিন্তু কি সে বিজয় বা অর্জন, যার জন্য মুসলমানেরা ঘরে ঘরে ঈদের খুশি করবে? অন্য ধর্ম বা অন্য জাতির উৎসব ইসলামের এ উৎসবের পার্থক্য কোথায়? ঈদের শ্রেষ্ঠত্বই বা কি? কেনই বা দিন দু’টি মানব-সংস্কৃতিতে অনন্য? ইসলাম শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম, কিন্তু এ উৎসবে শান্তি ও কল্যাণই বা কি? খৃষ্টান,বৌদ্ধ ও শিখ ধর্মের অনুসারিরা তাদের ধর্মের প্রচারকদের জন্ম বা মৃত্যু দিবসকে উৎসবের দিনে পরিণত করেছে,কিন্তু ইসলাম সেটি করেনি। অন্যদের উৎসবগুলির দিনক্ষণ ও উপলক্ষ তাদের মনগড়া,কিন্তু ঈদের উৎসব ও তার দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়েছে মহান আল্লাহ থেকে। তিনি যেমন পবিত্র কোরআন দিয়েছেন এবং নামায-রোযা,হজ-যাকাতের বিধান দিয়েছেন,তেমনি এ উৎসবটিও দিয়েছেন। উৎসবের পরিকল্পনায় ও উদযাপনের যে বিধানটি মহান আল্লাহতায়ালা থেকে আসে তাতে কি কোন ত্রুটি থাকতে পারে?

মুসলমানদের এ দুটি উৎসবের পেক্ষাপট যেমন ভিন্ন,তেমনি ভিন্ন তার লক্ষ্যও। এ দুটি উৎসবের কোনটিই কোন বিখ্যাত ব্যক্তির জন্মদিবস উদযাপনের লক্ষ্যে যেমন নয় তেমনি বছরের সুন্দরতম কোন দিনকে মহামান্বিত করার লক্ষ্যেও নয়। উভয় উৎসবই নির্ধারিত হয়েছে মহান আল্লাহর অনুগত গোলাম রূপে তাঁর বান্দাহ কতটা সফল বা বিজয়ী হলো সে বিষয়টিকে সামনে রেখে। এদিক দিয়ে মানব জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে সফল এবং বিজয়ী ব্যক্তিটি হলেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ)। তিনি বিস্ময়কর প্রজ্ঞা দেখিয়েছেন কোন বৈজ্ঞানিক আবিস্কারে নয়,বরং মহা সত্যের আবিস্কারে। এবং সফলতা দেখিয়েছেন সে সত্যের আপোষহীন অনুসরণে। তিনি খুঁজে পেয়েছেন মহান আল্লাহকে। মানব জাতির ইতিহাসে এরচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ আবিস্কার আছে কি? বৈজ্ঞানিক আবিস্কারে ব্যর্থতার কারণে কেউ জাহান্নামে যাবে না, জাহান্নামে যাবে সত্য আবিস্কারে ব্যর্থতার কারণে। কি আল্লাহর উপর অটল বিশ্বাসে,কি ইবাদতে, কি হিজরতে, কি আত্মত্যাগে – আল্লাহর প্রতিটি হুকুমে তিনি নিষ্ঠার সাথে লাব্বায়েক বলেছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর সে নিষ্ঠাকে নিয়ে বার বার গর্ব করেছেন। আল্লাহর নির্দেশে তিনি নিজ জন্মস্থান ছেড়ে নানা দেশের পথে পথে ঘুরেছেন। স্ত্রী হাজেরা এবং শিশুপুত্র ঈসমাইলকে যখন জনমানব শূণ্য মক্কার বুকে ছেড়ে আসার নির্দেশ এসেছে তখনও তিনি নিজের ও নিজ-পরিবারের স্বার্থকে গুরুত্ব দেননি। বরং গুরুত্ব দিয়েছেন মহান আল্লাহর ইচ্ছাকে। ফলে আল্লাহতায়ালার সে নির্দেশের জবাবে তিনি ত্বরিৎ লাব্বায়েক বলেছেন। রাব্বুল আলামীনকে খুশি করতে নিজ পুত্র ঈসমাইলকে কোরবানী করতে তাঁর গলায় ছুড়িও চালিয়েছেন। নিজ খেয়াল-খুশি ও নিজ প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে মানব জাতির ইতিহাসে এটাই হলো সবচেয়ে বড় বিজয়। আল্লাহপাক তাঁর এ বিজয়ে এতই খুশি হয়েছিলেন যে তাঁর সে বিজয়কে তিনি মানবজাতির উৎসবে পরিণত করেছেন। এবং সেটি ক্বিয়ামত অবধি। মুসলমান হওয়ার অর্থ মূলতঃ মহান আল্লাহর প্রতি হুকুমে লাব্বায়েক তথা “আমি হাজির বা প্রস্তুত” বলার ধর্ম। দ্বীনে ইব্রাহীমের এটিই মূল শিক্ষা। মুসলিম নামটিও তাঁরই দেয়া। হযরত ইব্রাহীম (আঃ)র মূল কৃতিত্বটি হলো,খেয়ালখুশি ও প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে আল্লাহর উপর ঈমানকে তিনি বিজয়ী করেছেন। সে অটল ঈমান কে ব্যক্ত করেছিলেন এভাবে,“নিশ্চয়ই আমার নামায,আমার কোরবাণী,আমার বেঁচে থাকা এবং আমার মৃত্যুবরণ –সবকিছুই আল্লাহর জন্য।” মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর সে প্রদীপ্ত উচ্চারণকে এতটাই পছন্দ করেছেন যে পবিত্র কোরআনে নিজ কথাগুলোর পাশে হযরত ইব্রাহীমের সে কথাগুলোকেও ক্বিয়ামত অবধি মানবজাতির জন্য শিক্ষণীয় করেছেন। মানব ইতিহাসে এর চেয়ে বড় বিজয় আর কি হতে পাররে? এ বিজয় সামরিক বিজয় নয়,শারিরীক শক্তি বা কুশলতার বিজয়ও নয়,বরং কুফরির উপর ঈমানের।হযরত ইব্রাহীম হলেন মুসলিম উম্মাহর পিতা। ঈদুল আজহার দিনে বিশ্বের মুসলমানগণ বস্তুতঃ পিতার সে বিজয়কে নিয়ে উৎসবই করে না,বরং তার আদর্শের সাথে একাত্মতাও জাহির করে। এর চেয়ে পবিত্র উৎসব আর কি হতে পারে?

 

উৎসব প্রবৃত্তির উপর ঈমানের বিজয় নিয়ে

অপর দিকে ঈদুল ফিতর হাজির হয় বিজয়ের আরেক প্রেক্ষাপটে। সেটি মাসব্যাপী আত্মসংযম, আত্মপরিসুদ্ধি, ও আল্লাহতে আত্মসমর্পণের। উৎসব আসে মাহে রামাদ্বানের মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ শেষে। অন্য মাসে পানাহারের ন্যায় বহু কিছুই হালাল, কিন্তু সেগুলির বহু কিছুই রোযা কালীন সময়ে হারাম। ঈমানদার হওয়ার শর্তই হলো হারাম-হালাল নিয়ে আল্লাহর প্রতিটি হুকুমের কাছে আত্মসমর্পণ করা। সেটি জীবনের প্রতি মুহুর্তে। “শুনলাম এবং মেনে নিলাম” –থাকতে হবে এমন এক সদাপ্রস্তুত চেতনা। তেমন একটি চেতনার কারণে মু’মিন ব্যক্তি একান্ত নিভৃতেও কিছু খায় না। তীব্র ক্ষুধা বা প্রচণ্ড তৃষ্ণার মুখেও খাদ্য বা পাণীয় মুখে দেয় না। লোক দেখাতে মানুষ নামায পড়তে পারে,অর্থদান করতে পারে,এমন কি হজও করতে পারে। কিন্তু লোক দেখানোর সে লোভ কি একান্ত গোপনে কিছু খাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারে? এক্ষেত্রে যেটি কাজ করে তা হলো আল্লাহর ভয় তথা তাকওয়া। নামায-রোযা, হজ-যাকাতের ন্যায় ইসলামে যত ইবাদত তার লক্ষ্য মাত্র একটিই। তা হলো ঈমানদারের জীবনে তাকওয়া বৃদ্ধি। প্রশ্ন হলো তাকওয়ার অর্থ কি? তাকওয়া হলো, জীবন যাপনের প্রতি পদে মহান আল্লাহতায়ালার প্রতিটি হুকুম ও তাঁর প্রদর্শিত সিরাতুল মুস্তাকীম মেনে চলার গভীর তাড়না। সে সাথে সে প্রদর্শিত পথ থেকে বিচ্যুতির প্রচণ্ড ভয়। যার মধ্যে মহান আল্লাহতায়ালার হুকুম মেনে চলার তাড়না নাই এবং তাঁর প্রদর্শিত পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার ভয়ও নেই, তার মধ্যে যে বিন্দুমাত্র তাকওয়াও নাই –তা নিয়ে কি সন্দেহ থাকে? মহান আল্লাহতায়ালার কাজে কোরবানীর রক্ত বা গোশতো পৌঁছে না, রুকু-সিজদাও পৌঁছে না। পৌঁছে এই তাকওয়া। ব্যক্তির প্রকৃত বুদ্ধিমত্তা তো এটাই যে সে তার সকল বুদ্ধিবল ও অর্থবলকে তাকওয়ার বল বাড়াতে ব্যয় করবে। এটিই আখেরাতের মুদ্রা। ব্যক্তির জীবনে তাকওয়া সুস্পষ্ট দেখা যায়, -যেমন দেখা যায় মুর্তিপূজা, ব্যক্তি পূজা, চুরি-ডাকাতি ও সন্ত্রাসীর ন্যায় দুবৃত্তি। যে ব্যক্তি ঘুষ খায়, সূদ খায়, সূদ দেয়, মিথ্যা কথা বলে, রাস্তায় বেপর্দা চলে, চুরি-ডাকাতি ও সন্ত্রাসী করে এবং দেশে শরিয়ত, হুদুদ, খেলাফত ও জিহাদের বিরুদ্ধে রাজনীতি করে -সে ব্যক্তির মাঝে কি সামান্যতম তাকওয়া আছে? সে তো মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর দ্বীনের দুষমন। সে যদি সারা বছর রাজা রাখে, শত শত গরুবাছুর কোরবানী করে বা প্রতি বছর হজ্ব করে -তাতে কি তাকওয়ার প্রমাণ মেলে? তাতে কি পাপ মোচন হয়? বরং সে ব্যক্তিই তো তাকওয়ার অধিকারী বা প্রকৃত মুত্তাকী যে মাসভর রামাদ্বানের রোযা রাখে এবং আল্লাহর প্রতিটি হুকুমকে মেনে চলে । সেই বস্তুতঃ বিজয়ী। এ বিজয় লোভ-লালসা ও প্রবৃত্তির খায়েশাতের উপর তাকওয়ার বিজয়। মুমিনের জীবনে ঈদুল ফিতর আসে সে বিজয়ের উৎসব নিয়ে।

ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব বুঝতে হলে রোযার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বুঝা জরুরী। এবং ঈদুল আযহার গুরুত্ব বুঝতে হলে বুঝতে হয় হযরত ইব্রাহীম (আ:)র জীবনের মিশন। ব্যক্তির সে সমঝ-বুঝই ঈদকে ইবাদতে পরিণত করে; এবং জনগণের জীবনে জন্ম দেয় গভীর সাংস্কৃতিক বিপ্লবের। নইলে ঈদ অর্থশূণ্য থেকে যায়। নামাযের ন্যায় রোযারও মূল লক্ষ্য হলো, মুসলমানদের মনে তাকওয়া বা আল্লাহভীতি সৃষ্টি। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,“হে ঈমানদারগণ রোযা তোমাদের উপর ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর যেন তোমরা তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয় অর্জন করতে পার।”- সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)। আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত,মাগফেরাত এবং আখেরাতে নাজাত প্রাপ্তির জন্য অপরিহার্য হলো এই তাকওয়া। জান্নাতে প্রবেশের এটিই হলো মূল চাবি। তাকওয়া হলো মু’মিনের মনে আল্লাহর কাছে জবাবদেহীর সার্বক্ষণিক এমন এক জাগ্রত চেতনা যা তাকে প্রতিদিন ও প্রতিক্ষণে আল্লাহর প্রতিটি হুকুমের আজ্ঞাবহ গোলামে পরিণত করে। ফলে ঈমানদারের প্রতিটি দিন ও প্রতিটি মুহুর্ত কাটে আল্লাহর প্রতি হুকুমের আনুগত্য নিয়ে। সেটি প্রকাশ পায় তার কথা,কর্ম ও আচরণে। আর আল্লাহর যে কোন হুকুমের আনুগত্যই তো ইবাদত। তাই ঈমানদারের ইবাদত শুধু নামায-রোযা,হজ-যাকাতে সীমাবদ্ধ থাকে না,সে তো সর্বক্ষণের আবেদ। এরূপ তাকওয়াকে মু’মিনের জীবনে স্থায়ী তথা সার্বক্ষণিক করাই রামাদ্বানের রোযার মূল লক্ষ্য। মু’মিনের ঈমান তখন দৃশ্যমান হয় তাঁর ধর্ম-কর্ম,আচার-আচারণ,ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি,সংস্কৃতি, যুদ্ধবিগ্রহ তথা জীবনের সর্বাঙ্গ জুড়ে। এভাবে রোযা আল্লাহর গোলামীকে ব্যক্তির জীবনে চির অভ্যাসে পরিনত করে। তখন সে আল্লাহর গোলাম শুধু নামাযে নয়,শুধু রোযা বা হজকালীন সময়ে নয় বরং সর্বক্ষণে এবং সর্বক্ষেত্রে। এটিই হলো মু’মিনের জীবনে সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। সে তখন পরিণত হয় মহান আল্লাহর সেনাদলের সার্বক্ষণিক সৈনিকে। মাহে রামাদ্বান তাই ইসলামের অতিগুরুত্বপূর্ণ ট্রেনিংয়ের মাস। ট্রেনিং পর্বের শিক্ষাগ্রহণে যারা কৃতকার্য হয় তাদের নিয়ে ট্রেনিং শেষে যেমন সমাপনি উৎসব হয় তেমনটি আছে ইসলামেও। ঈদুল ফিতরের উৎসব তো সেটাই।

রামাদ্বানের এ পবিত্র মাসটিতে তাকওয়া অর্জনে যারা সফল হয়, সেসব মোত্তাকীদের জন্য এ মাসটিতে রয়েছে বিশাল সুখবর। তাদের জন্য মহান আল্লাহতায়ালা খুলে দেন রহমত,মাগফেরাত এবং নাজাতের দ্বার। এ মাসেই রয়েছে লায়লাতুল ক্বদর যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ পবিত্র মাসে যারা রোযা রাখে, তারাবিহ নামায পড়ে, নানাবিধ নফল ইবাদত করে এবং মিথ্যা-ইর্ষা-কুৎসা-গিবত ও নানাবিধ খারাপ কর্ম থেকে বাঁচে এবং লায়লাতুল ক্বদরের রাতে মহান আল্লাহতায়ালা থেকে মাগফেরাতের সুযোগ নেয়, এ মাস তাদের জন্য বয়ে আনে জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য। এ পবিত্র মাসের ইবাদতের বরকতে মাফ হয়ে যায় অতীত জীবনের সকল গুনাহ। এবং বিপুল সমৃদ্ধি আসে ঈমানে। মু’মিনের জীবনে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে? ব্যবসায়ীক লাভ,পেশাদারি সাফল্য,বিপুল অর্থপ্রাপ্তি বা কর্ম জীবনের অন্য কোন সফলতায় কি এমন অর্জন ঘটে? এমন সফলতা খুশি বয়ে আনবে সেটিই কি যথার্থ নয়? আল্লাহতায়ালাও চান,তাঁর অনুগত বান্দারা জীবনের এ বিশাল অর্জনের পর উৎসব করুক। সেই জন্যই তিনি ঈদুল ফিতরের বিধান দিয়েছেন।

রামাদ্বান হলো প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মাস। যুদ্ধজযের পর যোদ্ধারা যেমন মহাধুমধামে উৎসব করে, ঈমানদারেরাও তেমনি প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের পর উৎসব করে। ঈদুল ফিতরে ঘটে সে উৎসবেরই আয়াজন। তবে এ পবিত্র মাসটিতে যারা রোযা রাখেনি এবং তাকওয়া অর্জন করেনি, প্রকৃত অর্থেই তারা ব্যর্থ। এ পবিত্র মাসটিতে নিজেদের বিদ্রোহী প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা অংশই নেয়নি। ফলে তারা বিজয়ী হবে কীরূপে? বরং পরাজিত ক্ষুধা,যৌনতা,অশ্লিলতা তথা অবাধ্য প্রবৃত্তির কাছে। ঈদুল ফিতরের উৎসবের দিনে এমন পরাজিত ব্যক্তিদের জন্য খুশির কিছু নেই। এদিন তো তাদের জন্য মাতমের। তারা তো মহান আল্লাহর অবাধ্য বান্দাহ। এরূপ অবাধ্যতা তো কুফরি। তাদের সে অবাধ্যতা বিমূর্ত হয় শুধু রামাদ্বানে নয়, বরং বছরের অপর ১১টি মাসেও। রামাদ্বানের এ ব্যর্থতা তাদের জীবনে দুঃখময় বিপর্যয় ডেকে আনে। এমন বিপর্যয় নিয়ে তারা উৎসব করে কি করে? নবীজী (সাঃ) তাই তাদের জন্য বলেছেন,“মাহে রামাদ্বানে যারা রোযা রাখেনি তাদের জন্য এ ঈদ খুশির নয়, বরং বড়ই অখুশির।”

 

আনন্দ যেখানে সার্বজনীন

ইসলামের কল্যাণের ধর্ম। কল্যাণ চায় ব্যক্তির সাথে সমষ্ঠিরও। কল্যাণ চায় সমাজের ধনী-দরিদ্র সর্বশ্রেণীর মানুষের। তাই উৎসবের মাঝেও সে কল্যাণ-চেতনা থেকে ঈমানদারদের বিচ্যুতির অবকাশ নেই। এ দিনে সমাজের সচ্ছল মানুষেরা আনন্দ করবে করবে আর অভাবী মানুষেরা সে আনন্দ নীরবে দেখবে সে বিধান ইসলামে নাই। ঈদের আনন্দ এখানে সার্বজনীন। খুশির এ দিনটিতে কল্যাণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে সমাজের অভাবগ্রস্থ দুঃখী মানুষেরও। অনাথ-ইয়াতিম-দুস্থ্য মানুষেরাও যাতে ঈদের খুশিতে সামিল হতে পারে সে জন্য ঈদের জামায়াতে শামিল হওয়ার পূর্বে তাদের হাতে ফিতরার টাকা পৌঁছে দিতে হয় প্রতিটি স্বচ্ছল মুসলমানকে। নবীজী (সাঃ) হাদীস,যে ব্যক্তি ফিতরা না দিয়ে ঈদের নামাযে হাজির হয় তার রোযা আল্লাহর আরশের নীচে শূণ্যে ভাসতে থাকে। তাই রোযা কবুলের শর্ত হলো ঈদের নামাযে হাজির হওয়ার পূর্বে পরিববারে প্রতিটি সদস্যের মাথাপিছু ফিতরা আদায় করা। এটি গরীবের হক,ধনীর দান বা কৃপা নয়। সমাজের অভাবগ্রস্থদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব এখানে প্রতিটি স্বচ্ছল ব্যক্তির। সম্পদ লাভের সাথে সাথে মু’মিনের ঘাড়ে এ এক বাড়তি দায়িত্ব। গরীবেরা এসে তার দরওয়াজায় ধর্ণা দিবে এবং ফিতরা ভিক্ষা করবে সেটি ইসলামের বিধান নয়। এমন বিধানে গরীবের প্রচ্ণ্ড অসম্মান হয়। এভাবে গরীবের অসম্মান বাড়িয়ে কি ঈদের খুশি হয়? নির্মিত হয় কি সামাজিক সংহতি? প্রতিষ্ঠা পায় কি শান্তি? ইসলাম ভিক্ষাবৃত্তির সংস্কৃতি গড়ে না, গড়ে দানের সংস্কৃতি। ইসলাম তাই ধনীকে বরং গরীবের দরজায় ছুটতে বলে। খলিফা হযরত উমর (রা:) তাই আটার বস্তা নিজের কাঁধে চাপিয়ে ক্ষুদার্ত মানুষের ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন। সম্পদ-লাভ এভাবেই মু’মিনের জীবনে অহংকার না বাড়িয়ে দায়িত্ববোধ বাড়ায়। অর্থ এভাবেই তাঁকে পরীক্ষার মুখে ফেলে। ইসলাম চায় সমাজের ধনী-দরিদ্র সর্বস্তরের মানুষের মাঝে সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় মজবুত একতা। দানখয়রাত এবং গরীবের কল্যাণ চিন্তা সে একতার নির্মাণে সিমেন্টের কাজ করে। দুস্থ দরিদ্র জনগণ তখন সমাজের হৃদয়বান স্বচ্ছলব্যক্তিদের আপন ভাবতে শেখে। শোষন-নির্ভর পুঁজিবাদী দেশে ধনী-দরিদ্রের যে বিশাল বিভাজন ও বিভেদ সেটি রাজনৈতীক লড়াই ও রক্তক্ষয়ী শ্রেণীযুদ্ধের জন্ম দেয়্, কিন্তু ইসলামী সমাজে সেটি ঘটে না। বরং সমাজের ধনী ব্যক্তিগণ বুঝে,অর্থসম্পদ তাদের উপর মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অর্পিত আমানত। যেরূপ পবিত্র আমানত হলো তার নিজ জীবন। মু’মিনের দায়িত্ব হলো, অর্পিত এ আমানতকে আল্লাহরই নির্দেশিত পথে ব্যয় করা। নইলে প্রচণ্ড খেয়ানত হয়। আর সে খেয়ানত ইহকালে আযাব এবং পরকালে জাহান্নাম ডেকে আনে। তাই মু’মিন ব্যক্তি সম্পদশালী হলে জীবন যাপনে স্বেচ্ছাচারি হয় না,এবং স্বেচ্ছাচারি হয়না সম্পদের ব্যয়েও। আর এমন একটি আত্মসচেতন ও আত্মসমর্পিত চেতনার কারণেই বাংলাদেশের মত একটি দরিদ্র দেশেও ঈদুল ফিতরের উৎসবে বহু শতকোটি টাকা ধনীর পকেট থেকে গরীবের ঘরে গিয়ে পৌঁছে। ফিতরার অর্থের সাথে যোগ হয় বহু শত কোটি টাকার যাকাতের অর্থ। ফলে আনন্দের ছোয়া লাগে লক্ষ লক্ষ গরীব মানুষের ঘরে। মুসলিম সমাজে এমন অর্থ হস্তান্তরের ফলে ক্রয় ক্ষমতা বাড়ে বহু কোটি দরিদ্র মানুষের। ফলে রক্ত-সঞ্চালন হয় অর্থনীতিতে। মুসলিম দেশ তো এই ভাবেই সামাজিক কল্যাণ ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে এগুয়। একই ভাবে ঈদুল আযহার দিনে হাজার হাজার টন কোরবানীর গোশত বিতরণ হয় মুসলমানদের ঘরে। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে মক্কা থেকে কোরবানীর গোশত গিয়ে পৌছে বহু হাজার মাইল দূরের শত শত ইয়াতিম খানা,উদ্বাস্তু শিবির ও দুস্থ্য পল্লীতে। অর্থাভাবে বা পুষ্টির অভাবে মুসলিম প্রাণ হারাবে সেটি একারণেই অভাবনীয়। এবং সেটি ঘটলে বুঝতে হবে,সে সমাজ যে শুধু বিবেকশূণ্য তাই নয়, ইসলামশূণ্যও। ইসলামের প্রাথমিক যুগে যাকাতের অর্থ নেয়ার লোক পাওয়া যেত না মদিনাতে। অর্থের সুষ্ঠ বণ্ঠন হলে প্রতি সমাজেই তেমনটি ঘটে। অভাব, দুর্ভিক্ষ ও অনাহারে মৃত্যু তো সামাজিক অবিচার,অর্থনৈতিক শোষণ,রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্বৃত্তির ফল। অতীতে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ নেমে এসেছে তো এগুলির ফলে। একই কারণে,দুনিয়ার সবচেয়ে সম্পদশালী দেশ হওয়া সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বহু নগরীতে বহু দুস্থ্য মানুষের বাস।

অনন্য উৎসব সমগ্র মানবসংস্কৃতিতে

প্রতি ধর্মে এবং প্রতি জাতির জীবনেই উৎসব আছে। আনন্দ প্রকাশের নানা দিনক্ষণ,পর্ব এবং উপলক্ষও আছে। কিন্তু ইসলামের ঈদে যেরূপ সার্বজনীন কল্যাণ চিন্তা আছে সেটি কি অন্য ধর্মে আছে? ইসলামের ন্যায় অন্য কোন ধর্মে ধনীদের উপর দরিদ্রদের জন্য অর্থদান বাধ্যতামূলক? খৃষ্টান ধর্মে সবচেয়ে বড় উৎসব হলো ক্রীসমাস। এ উৎসবে বিপুল সাজ-সজ্জার আয়োজন আছে,বিস্তর অর্থব্যয়ও আছে। কিন্তু সে উৎসবে যাকাত-ফিতরার ন্যায় গরীব মানুষের অর্থদানের নির্দেশ নেই। ক্রীসমাসের দিনে যে ভোজের আয়োজনের করা হয় সেগুলি নিতান্তই পারিবারীক। তাতে বিপুল আয়োজন হয় খাদ্য ও পানীয়ের। মদ্যপান হয়, নাচগানও হয়। বিপুল আদান-প্রদান হয় উপহারের। কিন্তু সে উৎসবে দরিদ্র মানুষের কি ভাগ আছে? সেসব পারিবারীক ভোজে এবং উপহারের আদান প্রদানে পরিবারের বাইরের মানুষের কোন অধিকার নেই। তাছাড়া ক্রীসমাসের উৎসবে প্রকৃতির উপর নাশকতাই কি কম? কোটি কোটি গাছ কেটে ঘরে ঘরে ক্রীসমাস ট্রি সাজানো হয়। উৎসবের পর সে সবুজ গাছগুলোকে আবর্জনার স্তুপে ফেলা হয়।একই ভাবে বিপুল তছরুপ হয় পুঁজা উৎসবে। শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে ও হাজার হাজার মুর্তি নির্মাতার বহু শ্রমে গড়া হয় হাজার হাজার মুর্তি। কিন্তু এত শ্রম,এত অর্থ,এত কাট-মাটি ও রংয়ে গড়া মুর্তিগুলি অবশেষে পানিতে ফেলা হয়। এতে দূষিত হয় নদী ও জলাশয়ের পানি। ভারতীয় হিন্দুদের বড় উৎসব হলো দেয়ালী। সেখানেও কি নাশকতা কম? শত শত কোটি টাকা ব্যয় হয় বৈদ্যুতিক বাতিতে শহরগুলি সাজাতে। বিপুল অর্থ ব্যয় হয় আতশ বাজীতে। তাতে যেমন পরিবেশদূষণ ঘটে,তেমনি মাঝে মাঝে ভয়ানক দূর্ঘটনাও ঘটে। অথচ এত অর্থব্যয়ের মাঝে গরীবের অর্থদানের কোন ব্যবস্থা নাই। পুজার মন্ডপে আয়োজিত হয় হিন্দি ফিল্মি গান ও অশ্লিল নাচ। ফলে পবিত্রতা কোথায়? কোন আয়োজন তো তখনই পবিত্রতা পায় যখন সেটি একমাত্র মহানস্রষ্টাকে খুশি করার উদ্দেশ্যে আয়োজিত হয়। এবং যিকর হয় তাঁর পবিত্র নামের। কিন্তু যেখানে ফিল্মি গান ও নাচের অশ্লিলতা সেখানে কি পবিত্রতা থাকে? ইসলামের ঈদে কি এমন অপচয়, এমন নাচগান ও অশ্লিলতার আয়োজন আছে? বর্ষবরণ,বসন্তবরণ,জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেশে যে উৎসব হয় তাতেও কী গরীব মানুষের কোন কল্যাণ চিন্তা থাকে? থাকে কি পবিত্রতা?

অথচ ঈদের উৎসবের শুরু আতশবাজি বা উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে নয়। এতে নাচগান যেমন নেই, তেমন মদ্যপানও নেই। বরং দিনের শুরুটি হয় অজু-গোছলের মধ্য দিয়ে। পরিবারের সবাই পরিধান করে উত্তম পোষাক। পাঠ করা হয় মহান আল্লাহর নামে তাকবীর। এভাবে দিনের শুরু থেকেই প্রাধান্য পায় পবিত্রতা। মহল্লার ঈদগাহে বা মসজিদে সে হাজির হয় আল্লাহর নামে তাকবীর দিতে দিতে। এদিনটিতে বিশাল জামায়াতে নামায হয়, খোতবাহ হয় এবং আল্লাহর দরবারে সমবেত দোয়া হয়। দোয়া শেষে একে অপরের সাথে কোলাকুলি হয়। এরপর শুরু হয় প্রতিবেশীর গৃহে ঈদের শুভেচ্ছা-সাক্ষাতের পালা। ঈদের এ দিনটিতে ঘরের দরওয়াজা সবার জন্য খোলা। কারো গৃহে মেহমান হওয়ার জন্য এ দিনে কোন দাওয়াতের প্রয়োজন পড়ে না। আত্মীয় হওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। মহল্লার যে কেউ যে কোন গৃহে কুশল বিনিময়ে হাজির হতে পারে। এরূপ নির্মল আয়োজন কি অন্য ধর্মে আছে? ইসলাম যেমন জামায়াতবদ্ধ ভাবে নামায আদায়ের উপর গুরুত্ব দেয়,তেমনি জামায়াতবদ্ধতা ও সমাজবদ্ধতার গুরুত্ব দেয় উৎসব পালনেও। ঈদের দিন বেশী বেশী মানুষের সাথে দেখা হবে, কুশল বিনিময় হবে এবং কোলাকোলি হবে –তেমনি একটি লক্ষ সামনে রেখে নবীজী (সা:) সূন্নত হলো ঈদগাহের নামাযে এক পথ দিয়ে যাওয়া এবং অন্য পথ দিয়ে ফেরার।

 

ঈদ দেয় মিশন নিয়ে বাঁচার নব প্রত্যয়

অনর্থক গাছ কাটা দূরে থাক, গাছের একটি ডাল ভাঙ্গা বা পাতা ছেড়াও ইসলামে হারাম। ফলে কোটি কোটি বৃক্ষ নিধন করে উৎসব পালন কীরূপে ধর্মীয় কর্ম রূপে গণ্য হতে পারে? অপর দিকে মদ্যপান এবং নাচ-গান ব্যক্তির মন থেকে আল্লাহর স্মরণকে বিলুপ্ত করে। বিনষ্ট করে সত্যসন্ধানী মানুষের ধ্যানমগ্নতা,এবং বিচ্যুতি আনে সিরাতুল মুস্তাকীম থেকে। অন্য বহুজাতির উৎসবে যেমন মদ্যপান আছে তেমনি নাচগাণ এবং অশ্লিলতাও আছে। ফলে প্রচণ্ডতা পথভ্রষ্টতাও আছে। শয়তান সরাসরি আল্লাহকে অস্বীকার করতে বলে না, মুর্তিকেও পুজা করতে বলে না। হযরত আদম (আ:)কে ইবলিস কখনই এমন অবাধ্য হতে বলেনি। কিন্তু মিথ্যা প্রলোভনে সে ভূলিয়ে দিয়েছিল মহান আল্লাহর দেয়া নির্দেশকে। ভুলিয়ে দেয় আল্লাহর স্মরণ ও আনুগত্য। মদ্যপান ও নাচ-গান তো সেটিই করে। ফলে মুসলমানের উৎসবে যেমন নাচগান নাই, তেমনি মদ্যপানও নাই। কোনরূপ অশ্লিলতাও নাই। সকল প্রকার ভেদা-ভেদ ভূলে এক জামায়াতে নামায পড়া এবং অন্যকে বুকে জড়িয়ে আলিঙ্গন করা,নিজঘরে প্রতিবেশীকে আপ্যয়ন করা হলো ইসলামের সংস্কৃতি। এমন আলিঙ্গণে ও আপ্যায়নে ধনী-দরিদ্র,আমির-উমরাহ,শাসক-প্রজার মাঝে কোন দুরত্ব রাখার সুযোগ নাই। বরং সবাইকে একই সমতলে খাড়া করে। এবং বিলুপ্ত করে বর্ণভেদ, গোত্রভেদ ও শ্রেণীভেদের বিভক্তি। উচ্চতর সমাজ নির্মাণে অপরিহার্য হলো মানুষে মানুষে এমন ভাতৃত্ব ও সৌহার্দ। সভ্যতর ও সমৃদ্ধতর সমাজ নির্মাণে এমন ভাতৃত্ব হলো সবচেয়ে বড় পুঁজি তথা সোস্যাল ক্যাপিটাল। মুসলমানের জীবনে এটিই তো মহান মিশন। মিশন এখানে বিভক্তির দেওয়াল ভাঙ্গার। প্রকৃত মুসলমান ঈদের উৎসবমুখর দিনেও সে পবিত্র মিশন ভূলে না। বরং সে মিশন নিয়ে বাঁচায় পায় নব প্রত্যয়। সমগ্র মানবসংস্কৃতিতে এমন পবিত্র ও সৃষ্টিশীল উৎসব কি দ্বিতীয়টি আছে?

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..