1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

১৩ অক্টোবর আন্তর্জাতিক দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা দিবস- ভূমিকম্পে আত্মরক্ষা কি সম্ভব?

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২২
  • ১৩৫ বার পঠিত

আফতাব চৌধুরী:

গেল ক’মাসে সিলেটে বেশ ক’বার ভূমিকম্প অনুভূত হয়, এতে সাধারণ জনগণ ভীত সন্ত্রস্ত। প্রশ্ন হচ্ছে বড় আকারের ভূমিকম্প যদি হয়েই যায় তাহলে তা থেকে আত্মরক্ষা করার কি কোন সহজ উপায় আছে? ভূমিকম্পে আত্মরক্ষা করার কোনো টেনিং সম্ভবত শহুরে বাংলাদেশবাসীর নেই। কারণ সবাই তখন ঊর্ধ্বশ্বাসে বাইরে ছুটে যায়।
সিঁড়ি বেয়ে, লিফট দিয়ে বহুতল বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে মানুষ। এটা যে কত বিপজ্জনক তা কয়েকটা পরিস্থিতি আলোচনা করলেই বোঝা যাবে। আর ভূমিকম্প ব্যাপারটা যে কী সেটা কিছুটা জানলে আত্মরক্ষার পন্থাগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠে।
ভূমিকম্পের স্বভাবই হঠাৎ আসা। তাও আবার শীত-গ্রীষ্ম-দিন-রাত নির্বিশেষে। আবহাওয়া দফতরের মত কোনও ব্যবস্থা নেই ভূমিকম্প কোথায়,কবে, কোন মাত্রার হবে তার সঠিক হদিশ দেওয়ার ব্যবস্থা। শুধু এইটুকু জানা
আছে যে, গোটা পৃথিবীর শক্ত মাটির স্তরটা যেন একটা তাপ্পি মারা কাঁথার মত। বিপুল মাটির খন্ডগুলোর কোনও কোনওটা প্রায় এক একটা মহাদেশ বা মহাসাগর জুড়ে। এই খন্ডগুলোকে বলা হয় টেক্ধসঢ়;টোনিক প্লেট-
একটা আর একটার সাথে ঠেলাঠেলি করে কোনও রকমে মিলে মিশে আছে,অনেকটা আধা-সিদ্ধ ডিমের ভেঙে যাওযা খোলসের মত। তলার স্তরটা নরম,তারও নিচে গলা কুসুমের মত রক্ত-হলুদ লাভা। নরম ডিমের ভাঙা খোসার মত
এই প্লেটগুলো একটু নড়েচড়ে বেড়ায়। দুটো প্লেটের ধার দিয়ে সেই ঠেলাঠেলি ঘর্ষণ যখন একটু বেশি হয়ে যায় তখনই ভূমিকম্প টের পায় মানুষ, আর বাড়াবাড়ি মাত্রার দুই প্লেটে সংঘর্ষ লেগে গেলে বিপুল বিপর্যয় এড়ানো অসম্ভব।
এবার আবার যাওয়া যাক নিরাপত্তা প্রসঙ্গে। পৃথিবীর এই নড়েচড়ে উঠার সময়ে বাড়িঘরের ঠিক কী কী হতে পাওে তা কল্পনা করা যাক। ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন অনুযায়ী বাড়ির কোন কোন জায়গাগুলো সবচেয়ে দুর্বল তা জানা দরকার। প্রথমেই মনে পড়ে সিড়িঁর কথা। একটা বাড়িকে জোরে ঝাঁকানো হলে, ওই সিঁড়িই স্যান্ডুইচের মতন হয়ে যাবে। যাঁরা সিঁড়ি বেয়ে পালাবার চেষ্টায় ব্যস্ত তাদের অবস্থা বলা বাহুল্য। এ ছাড়া পাতলা ইটের দেয়াল, দরজা বা যে-কোনো প্রবেশ পথ, জানালার কার্নিশ, জানালার কাচও মানুষের প্রাণকে বিপন্ন করতে পারে এক মুহূর্তে। সিঁড়ি দিয়ে বেরোতে গিয়ে উপরের দেয়াল ভেঙে মানুষের দল চাপা পড়বার উদাহরণ অনেক।

তাঁরা নিজেদের ঘরেই ঘাঁপটি মেরে খাটের তলায় লুকিয়ে থাকলে এর চেয়ে কম আহত হতেন নিঃসন্দেহে। বিল্ডিংয়ের বাইরে দুর্বল কার্নিশের একটা দলছুট ইট, উড়ে আসা ভাঙা কাচের টুকরো, উড়ন্ত টিনের চাল হঠাৎ মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে মানুষকে। আর শহুরে জায়গায় ইলেকট্রিকের তার ছিঁড়ে পড়লে তো কথাই নেই। আমরা টিভিতে, খবরের কাগজে ভাঙা বাড়িঘরের ছবি দেখে ভয় পেয়ে যাই ঠিকই, কিন্তু যেখানে ঠিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন অনুযায়ী বাড়ি তৈরি হয় সেখানে বাড়িঘর একেবারে গুঁড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।
প্রাচীন পন্থায় যে বাড়ি তৈরি যেমন মাটির কুঁড়েঘর, সেখানে অবশ্য বেরিয়ে আসাটাই সমীচীন। হাইতি বা নেপালেও স্থানীয় পদ্ধতিতে বাড়ি তৈরি হওয়ার ফলে ধ্বংসের হার অনেক বেশি। আজকাল শহুরে অঞ্চলে বিশেষ করে উন্নত দেশে, বহুতল বাড়িতে ক্ষতি হলেও ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বাড়িতে একা থাকলে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই আরও ভয় পেয়ে যায়, মনোবল পাওয়ার জন্য অন্য মানুষের কাছে পৌঁছতে চায়। সেটা কোনও ভাবেই করা উচিত নয়। অবশ্য শুধু বাড়িতে থাকাটাই শেষ কথা নয়। তারও একটা নিয়ম আছে। নিয়মটা হল ড্রপ, কভার অ্যান্ড হোল্ড অন। এই মন্ত্রটা মনে করিয়ে দেয় যেকোনো বিল্ডিং-এর থেকে বেরোবার চেষ্টা না-করে- এমনকি এ ঘর ও ঘর না করে হাঁটু আর কনুইয়ের উপর ভর করে, কাছের কোনও টেবিলের নিচে ঢুকে পড়ে, মাটির কাছে মাথাটা নুইয়ে দিয়ে দু’হাত দিয়ে মাথাটাকে আগলে ঢেকে রাখা বা শক্ত টেবিলের একটা পায়া ধরে রাখা। তাহলে, টেবিল যদি কাঁপুনির ফলে জায়গা বদলাতেও থাকে, তা হলে আপনিও তার সঙ্গে সঙ্গেই থাকবেন। বিপদের সম্ভাবনা এতে কম থাকে। এই ভঙ্গির সবচেয়ে বড়ো যেটা লাভ তা হল বাড়িতে কিছু উলটেও যদি পড়ে, দেয়াল থেকে তাক যদি খসেও যায়, গায়ে ব্যথা লাগলেও মাথা আর চোখ বাঁচবে। খাটে শুয়ে থাকাকালীন যদি ভূমিকম্প হয়, উঠে লকোবার মতন সময় সুযোগ না-থাকলে অন্তত বালিশটা মাথায় চাপা দিয়ে গুটিশুটি মেরেশুয়ে থাকতে হবে। মাথা আর চোখ দুটো বাঁচানো অত্যন্ত জরুরি।
অনেকের বাড়িতেই আজকাল সাবেকি খাট বা পালঙ্ক থাকে না। বক্স খাটের তলায় ঢোকা অসম্ভব। কোনও একটা ঘরে অন্তত একটা খাট চারপেয়ে সাধারণ ডিজাইনের থাকা ভালো। যেই ঘরে কোনও খাট বা টেবিল নেই,ভিতরের দিকের দেয়াল ঘেঁষে ওই ড্রপ-কভার-হোল্ড অন পোজ নিয়ে দরজা জানালার দিকে পিছন ফিরে আর যথাসম্ভব দূরে থাকতে পারলে ভালো। অনেক বাড়িতেই আলমারির উপর পাহাড় প্রমাণ জিনিস। বাড়ি হেলে গেলে সেগুলোর বৃষ্টিও কারও প্রাণ ধ্বংসের কারণ হতে পারে। টিভি, উচুঁ বইয়ের তাক, ড্রেসিং টেবিল এর উপরের অংশ লম্বা স্ক্রু দিয়ে দেওয়ালের সাথে পোক্তভাবে জুড়ে দেওয়া উচিত। এবার ধরুন, বাড়ির বাইরেই আছেন আপনি। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে কী করা? গ্রামের দিকে থাকলে খোলা চত্বরে বা মাঠের দিকে চলে যাবেন। মুশকিল হল শহরের মানুষের, ফাঁকা জায়গা পাওয়া দুস্কর। যেখানে কাছাকাছি বহুতল বাড়ি নেই, কোনও ইলেকটিকের তার নেই। নেই কোনও কাচের জানালা বা বড়ো গাছ, বড় হোর্ডিং বা গাড়ি। এ তো প্রায় অসম্ভব আর পথচারী না-হয়ে যদি গাড়িতে থেকে থাকেন তা হলে গাড়িটিকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে তার ভিতরেই যতটা সম্ভব মাথা গুঁড়ে বসে থাকা। ভুল করেও গাড়ি থেকে বেরোতে চেষ্টা করবেন না। গাড়ির ভিতরেই সবচেয়ে নিরাপদ। থিয়েটার বা স্টেডিয়ামে থাকলে চেয়ারেই মাথা গুঁজে হাত দিয়ে মাথা ঢেকে রাখা। ভূমিকম্প থেমে গেলে ধীরে ধীরে চারদিক নজর রাখতে রাখতে বেরোনো উচিত। নদীর ধারে থাকলে জেনে রাখা দরকার যে নদীতে কোনও বাঁধ থেকে থাকলে বিপদের সম্ভাবনা যথেষ্ট আছে। যদিও বাঁধে অত সহজে ফাটল ধরে না, তবুও পাড় থেকে সরে আসাই ভালো। সমুদ্রের ধারেও কাঁপুনির সময়টুকু ওই মাথা নিচু করা পোজ নিয়ে তারপর তীর থেকে দ্রæত গতিতে যতটা পারবেন দূরে চলে যাবেন। গাড়িতে চড়ে নয়, একেবারে পায়ে হেঁটে। ট্রাফিক জ্যাম বা গাছ-পাথর পড়ে রাস্তা অবরোধ হয়ে থাকলে ওই দুই পা-ই সবচেয়ে বড়ো ভরসা। সুনামির কবল থেকে বাঁচবার জন্য অন্তত দু-তিন  মাইল ভিতরে যাওয়া প্রয়োজন। পাহাড়ে উঠতে পারলে আরও নিরাপদ। গুগলে সার্চ করলে সারা পৃথিবীর টেক্ধসঢ়;টোনিক প্লেটের ম্যাপ সহজেই দেখতে পারেন। ভালো খবর হল যে, বাংলাদেশ কোনও প্লেটের ধার ধেঁষে হয়নি। বড়োজোর হিমালয় অঞ্চলের বড় ভূমিকম্পের হালকা কাঁপুনি মাঝে মাঝে নাড়া দিয়ে যাবে। তবুও উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য অবশ্যই প্রস্তুতি দরকার,দরকার মানসিক ট্রেনিং। বিপদ আসার আগেই বাড়ির সবার সঙ্গে আর বিশেষ করে ছোটো ছেলেমেয়ে আর খুব বয়স্কদের সঙ্গে, পুরো বাড়িতে সব ঘরে কোথায় কোথায় লুকোনোর জায়গা আছে তা যাচাই করা দরকার। দরজার অঞ্চল বিপজ্জনক বলে যে যেই ঘরে আছেন, সেখানে ড্রপ-কভার অ্যান্ড হোল্ড অন করুন। দেয়ালের বড়ো শো-পিস বা বাহারি আয়না হালকা পেরেকের ভরসায় থাকলে চলবে না। অনেকের বাড়িতে এখন টেবিল মানেই কাচের- সেগুলোর তলায় লুকোনো মোটেই নিরাপদ নয়। বাড়িতে প্রতিবন্ধী থাকলে, তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োজন। সময় থাকতে প্রস্তুতি নেওয়ার জুড়ি নেই। আসল ঘটনার সময় যেখানেই থাকুন ছোটোদের সামনে খুব বেশি চাঞ্চল্য দেখাবেন না। ওরা আরও ভয় পেয়ে যায়। টিভির পর্দায় আর পাড়ায় যদিদেখা যায় লোকদের উত্তেজিত অভিব্যক্তি-উচুঁ গলায় বহু লোক কথা বলে চলেছে একসঙ্গে, একনাগাড়ে। কেউ যদি সাহায্য চাওয়ার ক্ষীণ আর্তনাদও করে, তা শোনাই যাবে না। কিছু বিচক্ষণ ব্যক্তি যদি নিরাপত্তার কোনও নির্দেশ দেন, তার কোলাহলে ডুবে যাবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় মানুষের ভয়ার্ত উত্তেজনা স্বাভাবিক, কিন্তু কোলাহল শৃঙ্খলাকে নষ্টও করে।
বিপদের মুখে নিয়মমাফিক ডিসিপ্লিন আসে শুধুমাত্র অভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে। উন্নত দেশগুলোতে এই পরিমিত প্রকাশির পিছনে ওই অভ্যেসের নিয়ন্ত্রণই কাজ করছে। জাপান আর আমেরিকায় প্রাকৃতিক বিপর্যয় লেগেই আছে কোনও না কোনও দিকে। সেই সবের মোকাবিলা করতে স্কুল, কলেজ, অফিস করানো হয় ‘ড্রল’ বা মিছিমিছি পরিস্থিতিতে প্রস্তুতি নেওয়ার মকশো । ফায়ার ড্রিল, টরনেডো নামক ঝড়ের ড্রিল আর আর্থকোয়েক ড্রিল তাদের মধ্যে অন্যতম। আর আছে স্কুলের নিরাপত্তার জন্য ‘লক আউট’। বিশেষ করে স্কুলের আশেপাশে কোনও বন্দুকধারী আসামীকে যদি ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় তো পুলিশের থেকে এই ‘লক আউট’ অর্ডার আসে। এই সব ক’টির ক্ষেত্রেই নিয়ম হল যে, প্র্যাক্টিসের সময় টু শব্দটি না করা। উত্তেজনা প্রকাশ করে ফেললে অনেক খেসারত দিতে হয়। সাংবাদিক-কলামিস্ট।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..