1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৮:৪৫ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটে শিক্ষক সংকট চরমে

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৪
  • ১৩৪ বার পঠিত

ডেস্ক রিপোর্ট : শিক্ষক সংকটসহ নানা জটিলতায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটের শিক্ষা কার্যক্রম। এতে মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক-কর্মকর্তার ১২৪টি অনুমোদিত পদ থাকলেও এখানে নিয়মিত শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ২২ জন। ফলে বাইধ্য হয়েই এক বিষয়ের শিক্ষক নিচ্ছেন অন্য বিষয়ের ক্লাস।

এতে ব্যাহত হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষক ও যন্ত্রপাতি সংকট থাকায় যথা সময়ে হচ্ছে না, তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ক্লাসও। ফলে ব্যাহত হচ্ছে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার গুণগত মান। হুমকির মুখে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। এতে কাররিগরি শিক্ষাই এখন শিক্ষার্থীদের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্রুত শিক্ষক সংকট দূরকরার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, কারিগরি শিক্ষার প্রসার বৃদ্ধি ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। লক্ষ্মীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার শিক্ষার্থীরা কারিগরি শিক্ষ গ্রহণের মাধ্যমে স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিভিন্ন কোর্সে ভর্তি হন লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির সিভিল, কম্পিউটার, আর্কিটেকচার, ইলেকট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক্স ডিপার্টমেন্টে প্রায় ১৮শ’ শিক্ষার্থী অধ্যয়ণ করছেন। তবে দীর্ঘমেয়াদী শিক্ষক সংকটসহ নানা জটিলতায় এখন হুমকির মুখে পড়েছে এ-পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষা কার্যক্রম।

লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, এ ইনস্টিটিউটে শিক্ষক-কর্মকর্তার ১২৪টি পদের বিপরীতে এখানে অধ্যক্ষসহ কর্মরত আছেন মাত্র ২২ জন শিক্ষক। এছাড়া স্কিল এ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রকল্পের আওতায় কর্মরত তিনজন শিক্ষকসহ প্রতিষ্ঠানটিতে পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছেন আরো ১০ জন খন্ডকালীন শিক্ষক। তীব্র শিক্ষক সংকটে প্রতিষ্ঠানটিতে ব্যহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। তবে শিক্ষকরা বলছেন, এতো সীমিত জনবল দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরিচালনায় হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। নিয়মিত করানো যাচ্ছে না তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ক্লাসও। এতে কারিগরি শিক্ষার গুণগতমানের উপর প্রভাব পড়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে সিভিল ডিপার্টমেন্টে ২৪ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ২ জন। আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টে ১২ জন শিক্ষককের বিপরীতে নিয়মিত শিক্ষক একজনও নেই। এই বিভাগে রয়েছেন প্রকল্প থেকে আসা ২জন শিক্ষক। তাঁরাও আবার পাচ্ছেন না ৫৩ মাস ধরে বেতন।

সিভিল ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর সাজ্জাদুল হাসান বলেন, সারাদেশের ৫০টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মত লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও এখানে পর্যাপ্ত শিক্ষকের তীব্র সংকট। ৬০০ থেকে ৮০০ শিক্ষার্থী সিভিল ডিপার্টেমেন্টে পড়াশুনা করে। সে তুলনায় এ ডিপার্টেমেন্টে ২৪ জন শিক্ষকের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র দুজন শিক্ষক। কয়েকজন খন্ডকালীন শিক্ষক থাকলেও তা অপর্যাপ্ত। বিশেষ করে তাাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ক্লাসে সঠিক ও সময়োপযোগী শিক্ষাদান চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। পিএইচসিতে ইন্সট্রাক্টর ও জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর দুইটি পদে লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষা সম্পন্ন হলেও রেজাল্ট প্রকাশে বিলম্বিত হচ্ছে। দুইটি পদে রেজাল্ট প্রকাশ করে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের জন্য শিক্ষা উপদেষ্টার নিকট দাবী জানান তিনি।

আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর (প্রকল্প) আবু ওবায়দা বলেন, ২০১৫ সালে প্রকল্পের আওতায় আমরা তিন জন শিক্ষক আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টে নিয়োগ পাই। এ ডিপার্টমেন্টে ১২ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও ওই তিন জন শিক্ষক দিয়েই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। এতে আমাদের তিন জনের উপরেই প্রচুর পেশার পড়ে। এক শিফটের ক্লাস শেষ করতে না করতে আবার অন্য শিফটের ক্লাস নিতে গিয়ে হাপিয়ে পড়ার মত অবস্থা। তার উপরে আবার শিক্ষকরা ৫৩ মাসের বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। দ্রুত বেতন ভাতা পরিশোধসহ শিক্ষক সংকট দূর করার দাবি জানান তিনি। একই কথা বললেন, ইলেক্ট্রনিক্স ডিপার্টমেন্ট জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর (প্রকল্প) ইউসফ হাসান। তিনি বলেন, ৫৩ মাসের বেতন বকেয়া হলে একজন শিক্ষকের পরিবার কিভাবে চলে? ২০১৪ সালে বিগত সরকার প্রকল্পের শিক্ষকদের রাজস্ব খাতের আওতায় চাকুরি স্থায়ী করণের জন্য অনুমোদন দিয়েছে। তারপরও কেন আমাদের সাথে এমন অন্যায় করা হচ্ছে। সরকারের কাছে প্রশ্ন শিক্ষকরা জাতি গড়ার কারিগর, তাহলে এমন বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের রাখা হয়েছে কেন? তাই বকেয়া বেতন পরিশোধ ও চাকরি রাজস্বকরণের দাবী জানান তিনি।

এদিকে শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষক সংকটের কারণে নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না তাদের। নানা সংকটে ব্যবহারিক ক্লাস থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে তারা। রয়েছে অবকাঠামোগত সমস্যাও। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান। নিয়মিত ক্লাস না পাওয়ায় হুমকির মুখে রয়েছে শিক্ষা জীবন।

সিভিল ডিপার্টমেন্টের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এনামুল বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার পর বাব-মার স্বপ্ন ছিলো ছেলে ইঞ্জিনিয়ার বানাবে। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসে কারিগরি শিক্ষাই আমার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে পর্যাপ্ত শিক্ষক সংকটে করানো হচ্ছে না ব্যবহারিক ক্লাস। কারিগরি বিভাগে ভর্তি হয়েছি হাতে কলমে শিক্ষা অর্জনের জন্য। আগামী ১০ নভেম্বর থেকে ফাইনাল পরীক্ষা অথচ শিক্ষক সংকটের কারণে একটি ব্যবহারিক ক্লাসও করানো হয়নি। ল্যাবে ক্লাসে যে কয়জন আছেন তারাও ননটেক থেকে এসেছেন। তারা নিজেরাই যন্ত্রপাতির নাম বলতে পারে না। আমাদের শিক্ষার্থীদের কি শিখাবে। এখন ইঞ্জিনিয়ারিং এ জীবন গড়ার স্বপ্ন এখন অনিশ্চয়তায় রয়েছে।

সিভিল ও আর্কিটেকচার সহ কয়েকটি ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটে বেশির ভাগ ক্লাস নেওয়া হয় খন্ডকালীন শিক্ষক দ্বারা। খন্ডকালিন শিক্ষকের কোয়ালিটি ও একজন এমপিও ভূক্ত শিক্ষকের কোয়ালিটি কখনো এক নয়। যার কারণে ক্লাসগুলোতে মানসম্মত ভাবে পড়ানো হচ্ছে না। তাছাড়া ল্যাবের যন্ত্রপাতি নষ্ট হলেও ঠিক করার উদ্যোগ নেই। বসে থাকে প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন যন্ত্র কেনার জন্য। সময়মত ল্যাবে ক্লাস করতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা। এর ফলে দক্ষ না হওয়ায় ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেও আমাদেরকে বেকার থাকতে হবে। এতে হুমকিতে রয়েছে তাদের কারিগরি শিক্ষা জীবন।

এদিকে শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের মানসম্মত ক্লাস করানো যাচ্ছে না স্বীকার করে লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. জহিরুল ইসলাম বলেন,, পর্যাপ্ত শিক্ষক সংকটের পরেও শিক্ষার গুনগতমান নিশ্চিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। রাজস্বখাতে ২২জন ও খন্ডকালিন ৮জনসহ ৪০জন্য দিয়ে পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। শিক্ষক সংকটসহ অন্যান্য সমস্যার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। শিক্ষক সংকট নিরসন হলে প্রতিষ্ঠানটি ফিরে পাবে স্বাভাবিক কার্যক্রম বলে জানান তিনি।

শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে দ্রুত শিক্ষক সংকট নিরসনের দাবী জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..