শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৯:০৬ অপরাহ্ন
আমি উনিশ বছর বয়সে গিয়েছিলাম এক মানসিক ডাক্তারের কাছে।সেদিন প্রথমবারের মত কোন পুরুষ ডাক্তারের সঙ্গে দীর্ঘ দুই ঘন্টা কথা বলেছিলাম।
আমার এই রোগের পুরো কারণটাই ডাক্তারকে গুছিয়ে বলতে হয়ত পেরেছিলাম।এজন্যই আজকে আমি তারই সংসার করছি।
ঐদিন ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে আসার পরেরদিন সে আম্মুকে ফোন করে বলে আমাকে আবার তার চেম্বারে নিয়ে যেতে।আম্মুর সাথে কথা বলার পর,লিয়নের সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে চাইলেন ডাক্তার।(লিয়ন, গল্পের আমি চরিত্র লাবণ্যের প্রাক্তন)
আম্মু ডাক্তারকে জানায় –
লিয়ন লাবণ্যের সমবয়সী ক্লাসমেট নিম্ন বিত্ত পরিবারের বেকার কমবয়সী ছেলে।যার কারণে লাবণ্যের বাবা তাকে রিজেক্ট করে।দুঃখের বিষয় ছেলেটা হঠাৎই বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।তারপর থেকেই লাবণ্য… ….
ডাক্তার কিছু ট্রিটমেন্ট করে,টেনশন মুক্ত থাকতে, দূরে কোথাও ঘুরতে যেতে, সব সময় যেন ব্যস্ততায় সময় যায় এ-সব উপদেশ দিয়ে বিদায় দিলেন।
এক শুক্রবারে ডাক্তার ও তার এক মেয়ে বন্ধু আমাদের বাসায় এসে আম্মুকে বলে আমাকে নিয়ে বাইরে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাবে।তারা দুজন মিলে নাকি আমাকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে। বাইরের জগতে আমি সম্পূর্ণ অপরিচিত ছিলাম।বাবা বাইরে যেতে দিতনা।ডাক্তারের সাথে বের হয়ে আনন্দ কি সেদিন আবার নতুন করে অনুভব করেছিলাম।
সেদিনের পর থেকে সেই ডাক্তারের সাথে আর যোগাযোগ হয়নি।
তারপর মাস খানেক পরে ডাক্তার আম্মুকে সরাসরি প্রস্তাব দেয় আমাকে বিয়ে করার।আম্মু রাজি হয়ে গেলেও বাবা রাজি ছিল না,এই ভেবে আমাকে মানিয়ে চলতে পারবে তো?পরে আবার এই ভেবে রাজি হয়ে যায় সে ডাক্তার আমার ভালো দায়িত্ব নিতে পারবে আর সুস্থ ও করে ফেলতে পারবে।
তারপর কোন এক শুক্রবারে কোন ধুমধাম ছাড়াই বিয়ে হয়ে গেল।
ডাক্তারের মা,বাবা নেই। এক বোন আছে সে ও প্রবাসে থাকে স্বামী নিয়ে। লিয়নের পরিবারের সবাই ই ছিলো। ছিলো না শুধু স্টাটাস।
যাইহোক, সংসার জীবন কেমন হয় আমার জানা ছিল না।তিনি নিজেই শিখিয়ে দিচ্ছিলেন হাতে ধরে। হাতে ধরে সব শিখানো সাহায্য দিন কয়েক থেকে মাস খানেক চলে। আজীবন না! আমার ও তাই হয়েছিলো।দিন যতই যেতে থাকে, ডাক্তার ততই বিরক্ত হয়ে পড়েছিলো।তারপর একদিন বাবার বাসায় গেলাম বেড়াতে। তার কিছু দিন পরেই আমাকে না জানিয়ে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিলো।
সেদিন খুব করে বুঝেছিলাম,মনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা রোগীদের সমাজ যাকে মানসিক রোগী উপাধি দিয়েছে,তাদের ঠিকানা স্বার্থপর ডাক্তারদের চেম্বার পর্যন্তই মানায়, মনের কোণে নয়।
বাবারা মেয়ের এমনই ভালো চান শেষে কিনা ডিভোর্সই দেখতে হয়। আমার অবস্থান যেমনই হোক খুব যত্নে বা আগলে রাখতে পারবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ও স্ট্যাটাসের কাছে হেরে যায় সত্যিকারের প্রেমিকরা।আর ডাক্তার নামক স্বার্থপর পুরুষরা ট্রিটমেন্ট করতে যেয়ে বিয়েই করে ফেলে।আর ও গাঢ় রোগী বানিয়ে আবার অন্য ডাক্তার দেখাতে বলে।
তখন সমাজের একটি মেয়ের অবস্থান কোথায় যেয়ে ঠেকে?