সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৩:৪৪ পূর্বাহ্ন
জুড়ী প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারের জুড়ীতে বন্যার পানিতে ডুবে বুধবার রাতে উপজেলার ধামাই চা-বাগানের শ্রমিক রণ রিকমুন (৪০) নামের এক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে কুলাউড়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে। তারা উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে সিলেটে ডুবরী দলকে খবর দিলে বেলা তিনটার দিকে উদ্ধারে নামেন ডুবুরি দল। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলছিল।
স্থানীয়রা জানান, রণ রিকমুন গতকাল রাত নয়টার দিকে স্থানীয় একটি দোকান থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কিনে বাড়ি ফিরছিলেন। কিন্তু তিনি নৌকা না পেয়ে হেঁটে রওনা দেন। একপর্যায়ে বাড়ির সামনে তিনি ডুবে যান।
টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে ও জুড়ী নদীর উজানে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের নেমে আসা পানির ঢলে ক্রমশ বেড়ে পুরো উপজেলা এখন পানিতে থৈথৈ। বন্যার পানিতে উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
এদিকে বন্যার পানিতে উপজেলার বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গত কয়েকদিনে পুরো উপজেলার বানবাসী মানুষ অন্ধকারে রয়েছেন। বিদ্যুৎ না থাকায় মোমবাতি জ্বালিয়ে কোনমতে রাত কাটাচ্ছেন বানবাসী মানুষ। এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মোমবাতির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন অধিক লাভের আশায়। তবে নিত্যপণ্যের দাম যাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করতে না পারে, সেজন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
বর্তমানে বন্যার পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় যাদের নৌকা কিংবা কলার ভেলা আছে, তারা কোনরকম অন্যত্র যাতায়াত করতে পারলেও, যাদের নেই তাদের কষ্টের সীমা নেই। বন্যায় উপজেলার প্রায় সব সড়কে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। এরপরেও মানুষজন বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের জন্য অধিক টাকা খরচ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানা যায়, বন্যায় উপজেলার ৩ হাজার ২২০ হেক্টর আউশ ধান পানিতে ভেসে গেছে। এছাড়া কৃষকের ধানের বীজতলা ও সবজিক্ষেত পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
বন্যাদুর্গতদের জন্য প্রশাসনিকভাবে যে সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র ও ত্রাণসামগ্রী ব্যবস্থা করা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
এদিকে গত শনিবার বিকেলে বন্যাদুর্গত এলাকায় পরিদর্শনে আসেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। তিনি সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নের হাওর পাড়ের বেলাগাও গ্রামে পরিদর্শন শেষে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন।
জুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোনিয়া সুলতানা বলেন, হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। এছাড়া বন্যাদুর্গতদের নিরাপদ আশ্রয়ে স্থান দেওয়ার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশ ও অনুরোধ জানিয়েছি। পাশাপাশি বন্যার্তদের সার্বিক সহযোগিতার ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।
গত বুধবার বন্যাদুর্গত এলাকায় পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করেন স্থানীয় সাংসদ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এমপি।
মন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, কেউ যেন বন্যার কারনে অসহায় ও অভুক্ত না থাকে দলের নেতাকর্মীদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।