বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৫:০১ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক: মৌলভীবাজার প্রবাসী অধ্যুষিত জেলা হওয়ার সুবাধে বেরীরপাড় রয়েল ম্যানসন মার্কেটের নিচ তলা ও আশপাশের এলাকায় অবৈধ বৈদেশিক মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ফলে সাধারন প্রবাসীরা এসে হচ্ছেন প্রতারনার শিকার। সরজমিনে দেখা গেছে, কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে সরকারের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে ডলার পাউন্ডের এসব অবৈধ ব্যবসা। ফলে সরকারের বিশাল অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে পাওয়া তথ্যে পাওয়া যায়,শহরের রয়েল ম্যানসন মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় সোনালী ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্যক শাখা। মার্কেটের নিচ তলার ডান দিকের তৃতীয় নম্বর দোকানটি দেখে মনে হবে এটি মোবাইলের চার্জার ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিক্রির দোকান। সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে দোকানের ক্যাশে বসা এক ব্যক্তির কাছে মানি এক্সচেঞ্জ করা যাবে কিনা-জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘যাবে,ডলার নাকি পাউন্ড। ১০পাউন্ডের নোট বলায় তিনি বলেন,‘পাউন্ড প্রতি ১২০টাকা দেওয়া যাবে। তারপর অনেক বাকবিতন্ডার পর পাউন্ড প্রতি ১৩০টাকা দিতে রাজি হলেন। ১০পাউন্ডের নোট এক্সচেঞ্জ করা হলো ১৩০০টাকায়।
এভাবে প্রতিদিন সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে লাখ লাখ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় করছে এই সংঘবদ্ধ চক্র। প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে এসব মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলায় একটি মাত্র বৈদেশিক মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেটি হলো সৈয়দ মানি এক্সচেঞ্জ। সেটি দীর্ঘদিন থেকে সরকারের নিয়ম নীতিসহ প্রবাসীদের ন্যর্য ডলার পাউন্ডের টাকা বাংলাদেশের টাকায় পাচ্ছেন। এছাড়াও বিদেশ গ্রমনে দেশীয় টাকা দিয়ে বিদেশী টাকা পাচ্ছেন সরকার নিধারিত মুল্যে। এদিকে মৌলভীবাজার জেলায় যততত্র শতাধিক অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জমা দেওয়া অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের তালিকাসহ একটি নথি পাওয়া গেছে। সেই তালিকায় অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে রয়েল ম্যানশনের তরফদার এন্টারপ্রাইজ,এসএ ট্রাভেলস এন্ড কনসাল্টেড,কোরেমি ট্রেডার্স,জিসান এন্টারপ্রাইজ,এফ ইলেকট্রনিক্স,শাহ মোস্তফা টেলিকম,ইউনিক টাইলস, এসকে এন্টাপ্রাইজ,রুমন এন্টারপ্রাইজ, শায়েক এন্টাপ্রাইজ, ফারিয়া ইলেট্রনিক্স,মদিনা ট্রেডার্স,আহমদ ম্যানশনের আনোয়ার এন্টাপ্রাইজ, নিউ জলি ক্লথ স্টোরের নাম।
এসব মানি চেঞ্জার ব্যবসার আড়ালে রয়েছেন প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্র। তারা অবৈধ্যভাবে ব্যবসা করতে বিভিন্ন সময়ে রাজনীতিবিদদের শেলটারে ব্যবসা পরিচালারও অভিযোগ রয়েছে।
সে নথিতে আরো উল্লেখ রয়েছে,এগুলো ছাড়াও অবৈধ আরও শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা প্রকাশ্যে ও গোপনে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় করে আসছেন। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে,এই চক্র বৈদেশিক মুদ্রা কম দামে প্রবাসীদের কাছ থেকে কিনে নেয়। যখন দাম বেড়ে যায় তা আবার বেশি মূল্যে হুন্ডি ব্যবাসায়ীদের কাছ বিক্রি করে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার বৃহৎ একটি অংশ কালো টাকা হিসেবে আড়ালে রয়ে যায়। এই চক্রের সঙ্গে ঢাকার হুন্ডি ব্যবসায়ীদের যোগসাজশ রয়েছে বলে ও অভিযোগ রয়েছে।
রয়েল ম্যানসন এর সম্মুখ দিয়ে গেলেই কেহ তাদের হাতে নাজেহালসহ ডলার পাউন্ড ভাংগাতে আসা প্রবাসীরা কম টাকা মুল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। যানবাহনে কিংবা হেটে আসা প্রবাসীদের আগমন দেখলেই অবৈধ এসব দোকানিরা তাদের রিসিভ করে মানি এক্সচেঞ্জ করছেন। মোবাইলের দোকান,টাইলসের দোকান, কাপড় ও প্রসাধনী সামগ্রীর দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসার আড়ালে চলছে অবৈধ হুন্ডি এবং মুদ্রা বিনিময় ব্যবসা। ক্রেতাকে হাত ছাড়া না করতে একই ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রান্তার দুই পাশে গড়ে তুলেছেন একাধিক প্রতিষ্ঠান। এদিকে তাদের এহেন ব্যবসার আড়ালে রয়েছেন প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট চক্র অভিযোগ উঠেছে।
এদের বিরুদ্ধে কয়েক বছর আগে অভিযান চালিয়ে জেল জরিমানা করলেও তারা জেল থেকে বের হয়েই আবারো চালিয়ে যাচ্ছেন রমরমা বিদেশী মুদ্রা ব্যবসা।
মৌলভীবাজার জেলায় প্রতিদিনই লন্ডন,আমেরিকা,অস্ট্রেলিয়া,কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশ থেকে মুদ্রা নিয়ে আসেন হাজার হাজার প্রবাসীরা। এসব বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় করতে এখানে এসে প্রতারণার শিকার সহ হচ্ছেন নাজেহাল। সরকার অনুমোদিত ব্যবসায়ী সৈয়দ মানি এক্সচেঞ্জের স্বত্বাধীকারী সৈয়দ ফয়ছল আহমদ দৈনিক মৌমাছি কন্ঠকে বলেন,আমি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোধন নিয়ে সুনামের সঙ্গে নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবসা করছি। কিন্তু সোনালী ব্যাংকের নিচে ও আশাপাশ এলাকায় অবৈধভাবে ১৫-২০বছর ধরে লাইসেন্স ও অনুমোদন ছাড়াই ব্যবসা করছে একটি চক্র। ওরা কীভাবে ব্যবসা করছে এটা প্রশাসনের দেখার বিষয়। তিনি আরো বলেন, গত কয়েক বছর আগে একটি অভিযান করেছিল প্রশাসন। সেসময় তাদেও জেল জরিমানাও করা হয়। কিন্তুু কিছু দিন পর বের হয়েই আবারো তারা ব্যবসা শুরু করে। তার পর আমি বিভিন্ন সময় সংশ্লিস্ট কতৃপক্ষকে অবগত করলেও কোন কাজ হয়নি।
তিনি আরো বলেন, অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের কারণে সরকার প্রচুর রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এখন আমরা যে পরিমাণ রাজস্ব দেই,তার থেকে আরও বেশি রাজস্ব দিতে পারব যদি অবৈধ্য ব্যাবসায়ীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়।
সোনালী ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা মৌলভীবাজারের ব্যবস্থাপক মো. আজিজুল হক রাসেল দৈনিক মৌমাছি কন্ঠ এর সাথে আলাপকালে বলেন,বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃক অনুমোধন নিতে হয় এবং তারাই দেকবাল করেন। মৌলভীবাজার জেলায় সরকার অনুমোদিত একমাত্র বৈদেশিক মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান সৈয়দ মানি এক্সচেঞ্জ,তারাই বৈধভাবে ব্যবসা করছে। আর অবৈধভাবে কেউ ব্যবসা করছে কিনা আমার জানা নেই বা অভিযেগও কেহ করেনি বলে এড়িয়ে যান। তবে অবৈধভাবে কিংবা সরকারের চ্যানেলের বাহিরে কেউ বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করলে অবশ্যই সরকার রাজস্ব হারাবে। এসব অবৈধ চ্যানেল বন্ধ করা প্রয়োজন রয়েছে।