1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১৬ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ধরে, আনব হাসি সবার ঘরে

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০২৪
  • ১৫৩৬ বার পঠিত

মাসুদ পারভেজ:
বাইগার নদীর কূল ঘেষে ছায়া-ঘেরা, সবুজ জনপদ টুঙ্গিপাড়া। মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরি খেলা। ইলশেগুড়ি বৃষ্টি আর রৌদ্দের মাঝে রূপোর মত ঝিকমিক করে বাইগার নদীর পানি। কল কল ছন্দে ঢেউ তুলে বয়ে চলছে ছোট্ট নদীটি। এখানেই ১৯২০-র ১৭ মার্চ জন্মেছিলেন এক শিশু। ছোটবেলায় বাবা-মা আদর করে তাঁকে ডাকতেন খোকা বলে। শৈশবে খোকা বন্ধুদের সাথে নদীর পানিতে ঝাঁপ দিয়ে, মেঠো পথের ধুলোবালি মেখে, বর্ষার কাঁদা, পানিতে ভিজে উল্লাসে মেতে থাকতেন। ছোট্ট গ্রামের এ ছোট্ট খোকা পরিণত হলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এঁ।
বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু স্কুলজীবনেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। কৈশোরে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে প্রথম বারের মত কারাবরণ করেন। ম্যাট্রিক পাসের পর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিমের মত রাজনৈতিক নেতাদের সান্নিধ্যে আসেন। এ নেতাদের সাহচার্যে তিনি নিজেকে ছাত্র-যুব নেতা হিসেবে রাজনীতির অঙ্গণে প্রতিষ্ঠিত করেন। ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৪৮ সালে বঙ্গবন্ধু সহকর্মীদের নিয়ে ছাত্রলীগ গঠন করেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তৎকালীন ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠিত হলে তরুণ নেতা শেখ মুজিব দলটির যুগ্ম সম্পাদক পদ পান। পরে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে দলের নামকরণ করা হয় আওয়ামী লীগ।
আজীবন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাওয়া বঙ্গবন্ধু যখন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি হলেন তখনো শিশু-কিশোরদের ভোলেননি। শিশু অন্তপ্রাণ মানুষ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন তাই সংগত কারণেই জাতীয় শিশু দিবস। বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোরদের বড় ভালোবাসতেন। বঙ্গবন্ধু শৈশবে বা কৈশোরে স্বাধীনতা ভোগ করেছেন, বাঁধনহারা আনন্দে দিন কাটিয়েছেন। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের শিশু-কিশোররা যাতে হেসেখেলে মুক্ত চিন্তায় ও মনে বেড়ে ওঠার সুযোগ ও পরিবেশ পায়, সে কথা তিনি ভাবতেন।
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বা বিশ্ব শিশু দিবস পালন হলেও জাতীয় শিশু দিবস ছিল না। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রীয় ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে জাতির পিতার জন্মদিন ১৭ মার্চকে জাতীয় শিশু দিবস ঘোষণা করে ওই সময়য়ের মন্ত্রিসভা। ১৯৯৭ সাল থেকেই দিবসটি পালন শুরু হয়। মাঝখানে ২০০২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তৎকালীন বিএনপি সরকারের শিশু দিবস পালন এবং সরকারি ছুটি বাতিলের কারণে দিবসটি পালিত হয়নি। নবম জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হলে আবারো প্রতি বছর জাতীয় পর্যায় ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে বড় আয়োজনের মাধ্যমেই পালন করা হচ্ছে দিবসটি।
আজকের শিশুই আগামী দিনের সক্ষম নাগরিক। শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর দরদ ছিল অপরিসীম। শিশুদের খুবই ভালোবাসতেন তিনি। তাঁর জন্মদিনে তিনি শিশুদের সঙ্গে কাটাতে পছন্দ করতেন। ওইদিন শিশুরা দল বেঁধে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে যেত। তাঁর জন্মদিনকে শিশুদের জন্য উৎসর্গ করে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রিয় বাংলাদেশকে শিশুদের জন্য নিরাপদ আবাসভূমিতে পরিণত করার নতুন শপথ নিতেই বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে বাংলাদেশে পালিত হয় জাতীয় শিশু দিবস। শেখ মুজিবুর রহমানের কর্ম ও রাজনৈতিক জীবন অসামান্য গৌরবের। তাঁর এ গৌরবের ইতিহাস থেকে প্রতিটি শিশুর মাঝে চারিত্রিক দৃঢ়তার ভিত্তি গড়ে উঠুক- এটাই এ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য- বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ধরে, আনব হাসি সবার ঘরে। রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই সারা জীবন শিশুদের নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি বলেছিলেন, শিশুদের সব অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে দেখা যেত। বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘শিশু হও, শিশুর মত হও। শিশুর মত হাসতে শেখো। দুনিয়ার ভালোবাসা পাবে।’ আসলে বঙ্গবন্ধু ছিলেন শিশুর মত সরল একজন, তাঁর হাসিও ছিল শিশুর মত; আর তাই সারা পৃথিবীর ভালোবাসা তাঁর জন্য। এজন্য শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, যুবক-বৃদ্ধ সবার কাছে তিনি ছিলেন মুজিব ভাই। এ সম্বোধন তিনি পছন্দ করতেন। এর ফলে বয়সের ব্যবধান ঘুচে যেত; তিনি হয়ে উঠতেন সবার একান্ত আপন, যেন আত্মার আত্মীয়।
বঙ্গবন্ধু শিশু উন্নয়নে ও শিশু কল্যাণের জন্য মায়েদের সম্পৃক্ত করে প্রতিষ্ঠা করেন মা ও শিশু কল্যাণ অধিদপ্তর, শিশু একাডেমি। যার উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু সবসময়ই নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। সেকারণে শিশু শিক্ষাকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে ১৯৭৩-এর প্রেক্ষাপটে সাইত্রিশ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের মত যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। জাতির পিতার নির্দেশনায় ১৯৭৪-এর ২২ জুন শিশু আইন জারি করা হয়। এ আইন শিশু অধিকারের রক্ষাকবচ।
বঙ্গবন্ধুর এক জীবনে অনেক ত্যাগ, অনেক সংগ্রাম। জীবনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ সময় কারাগারেই কাটাতে হয়েছিল তাঁকে। পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনকালে বঙ্গবন্ধু ১৮ বার জেলে গেছেন এবং মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন দুবার। আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় একাত্তরের মার্চে নজিরবিহীন অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়। বাংলাদেশকে যখন অর্থনৈতিক মুক্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল বিপথগামী সেনার হাতে প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধু। তাঁর হাত ধরেই আসে বাঙালির স্বাধীনতা, জন্ম নেয় বাংলাদেশ। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র কেড়ে নেয় তাঁর প্রাণ। জনতার নেতা মুজিব না থাকলেও তাঁর আদর্শ ও অনুপ্রেরণা আজও বাঙালির মননে গেঁথে আছে। শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায়, কৃতজ্ঞ চিত্তে সবসময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বাঙালি।
যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান
ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান
কবি অন্নদাশঙ্কর রায়ের এ কবিতার বাস্তব প্রমাণ মেলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে। প্রতিদিন বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসে টুঙ্গিপাড়ায়। তাদের স্মৃতির মণিকোঠায় অবিনশ্বর হয়ে বেঁচে আছেন বঙ্গবন্ধু। বাঙ্গালি জাতির পিতা। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি। শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি বাঙালিদের শিখিয়েছেন কীভাবে বুক উঁচু করে বেঁচে থাকতে হয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসটি প্রতি বছরের মত এবারো সারা দেশে শিশুদের নিয়ে নানা আয়োজনে পালন করা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দিনটির তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতারসহ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সংবাপত্রগুলোতে প্রকাশ হচ্ছে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও নিবন্ধ। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আয়োজন করা হচ্ছে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার। পাশাপাশি বিভিন্ন মসজিদে মোনাজাত, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনাসভায় আমরা স্মরণ করছি তাঁর অবদান, তাঁর কীর্তি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ধরে, আনব হাসি সবার ঘরে। পিআইডি ফিচার

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..